Alapon

তুলাকা ও উতাকা সাহাবী



সাহাবাদের মধ্যে ক্লাসিফিকেশন আছে। মর্যাদার দিক থেকে সবচেয়ে উঁচু মর্যাদার হলেন মুহাজির সাহাবী, তারপর আনসার সাহাবী। তারা আল্লাহর রাসূল সা.-এর ওপর জুলুম-নির্যাতনের সাথী ছিলেন। তাদের ব্যাপারে কুরআনে বলা হয়েছে আল্লাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট তারাও আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট। এরাই প্রকৃত সাহাবার মর্যাদার অধিকারী।

সাহাবীদের মধ্যে একটি অংশ ছিল মুনাফিক। এর মধ্যে অল্প কয়েকজন চিহ্নিত বাকীরা অনির্ণেয়। তারা সাহাবার মর্যাদা থেকে বঞ্চিত ও তাদের পরিণাম খারাপ।

সাহাবাদের মধ্যে মর্যাদার দিক থেকে নিচে অবস্থান করছেন তুলাকা ও উতাকা সাহাবীরা। অনেকে মনে করেন তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত তবে তাদের ক্ষেত্রে সূরা বাইয়্যেনার ৮ নং আয়াতে বর্ণিত 'আল্লাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট' কথাটি প্রযোজ্য নয়।

তাছাড়া সূরা হাদিদের ১০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা (মক্কা) বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে এবং যুদ্ধ করেছে তারা সমান নয়। তারা মর্যাদায় তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, যারা পরে ব্যয় করেছে ও যুদ্ধ করেছে। তবে আল্লাহ প্রত্যেকের জন্যই কল্যাণের ওয়াদা করেছেন।

মক্কা বিজয়ের সময় ও এর ঠিক পরপর যাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছিল, তারা ইসলামে প্রবেশ করলেন। মক্কা বিজয়ের পর সাধারণ ক্ষমা পেয়ে ইসলাম গ্রহণ করা সাহাবাদেরকে হাদিসের ভাষায় তুলাকা বলা হয়।

তাদের অনেকেই নিজেদের সামাজিক অবস্থান, প্রতিপত্তি, মান-সম্মান এবং জীবন বাঁচাতে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তাও বাধ্য হয়ে। তারা বুঝতেই পারেন নি মুহাম্মদ সা. এতো সহজে মক্কা জয় করে ফেলবেন। তারা কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই মক্কা জয় হয়ে যায়, ফলে তারা দিশেহারা হয়ে যায়।
কেউ কেউ মক্কা ছেড়ে অন্যত্র পালাতে শুরু করে, কেউ কা’বার গিলাফ ধরে আত্মরক্ষা করতে থাকেন, কেউ রাতের আঁধারে সম্ভ্রান্ত ও আত্মীয় সাহাবাদেরকে মাধ্যম ধরে পুরনো আত্মীয়তার দোহাই দিয়ে নবীজীর কাছে গিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন। দয়ার সাগর নবীজী তাদেরকে একে একে ক্ষমা করে দেন।

আর উতাকা হলেন সেসব সাহাবা যারা তায়েফে হুনাইনের যুদ্ধে বন্দি হয়েছিলেন। রাসুল সা.-এর দুধবোন সায়মা রা.-এর সম্মানে তাদেরকে শাস্তি না দিয়ে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছিল।

তুলাকা আর উতাকা সাহাবাগণ সাহাবার মর্যাদা পেলেও তাদের অনেকেই মন থেকে ইসলাম গ্রহণ করতে পারেন নি। ফলে তাদের অনেকেই মুনাফিকে পরিণত হন। উপরে উপরে মুসলমানের বেশভূষা থাকলেও ভেতরে ভেতরে এরা সুযোগের সন্ধানে থাকতেন কখন স্বয়ং রাসুল সা.-এর ক্ষতি করবেন। শাস্তি ও প্রতিশোধ না নিয়ে মুহাম্মদ সা. তাদেরকে ক্ষমা করে দিলেও মুহাজির ও আনসারদের কাতারে তাদেরকে স্থান দেননি।

উল্লেখ্য, এই তুলাকা সাহাবাদের একজন হাকাম ইবনে আবুল আস ইবনে উমাইয়া প্রায়ই নবীজীর সাথে বেয়াদবি করতো। ফলে নবীজী হাকামকে তার ছেলে মারওয়ানসহ মদিনা থেকে তায়েফে নির্বাসন দেন।

জারির বিন আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত তুলাকা ও উতাকা সাহাবাদেরকে উদ্দেশ্য করে নবীজী সা. বলেন, “কেয়ামত পর্যন্ত মুহাজির ও আনসারগণ একে অপরের বন্ধু হিসেবে থাকবে। অনুরূপ কুরাইশের (মক্কার) তুলাকা ও সাকীফের (তায়েফের) উতাকারাও পরস্পরের বন্ধু হিসেবে থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত।” [মুসনদে আহমদ (১৯২৩৫, ১৯২৩৮)]

হজরত আলী রা. ও হজরত মুয়াবিয়া রা.-এর মধ্যেকার দ্বন্দ্বে আলোচ্য হাদিসটির যথার্থতা ফুটে ওঠে।

পঠিত : ৯৬১ বার

মন্তব্য: ০