Alapon

ইংলিশ চ্যানেলের পরিচয়...


ইংলিশ চ্যানেল, পশ্চিম ইউরোপের একটি সংকীর্ণ সাগর যা ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডকে পৃথক করেছে এবং আটলান্টিক মহাসাগরের সঙ্গে উত্তর সাগরকে যুক্ত করেছে।এটি মূলত আটলান্টিক মহাসাগরের একটি অংশ। ইউরোপের সরু এ সাগরটিকে
ইংলিশ চ্যানেল না বলে অনেকে শুধু চ্যানেলও বলে থাকেন।

সপ্তদশ শতাব্দীতে ইংলিশ চ্যানেল নামটি প্রচলিত হওয়ার আগে এটি ব্রিটিশ সমুদ্র বা সরু সাগর নামে পরিচিত ছিল। এছাড়া স্পেন, পর্তুগালে অন্য নামেও পরিচিতি রয়েছে ইংলিশ চ্যানেলের।এটি অনেকটা কোটের হাতার মতো দেখতে। এজন্য ফরাসিরা একে লা মঁশ নামে ডাকেন। লা মঁশ অর্থ কোটের হাতা।

ধারণা করা হয়, ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে সাড়ে ৪ লাখ বছর আগে ইংলিশ চ্যানেলের জন্ম। ভৌগলিক কারণেই প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধসহ অতীতের অনেক যুদ্ধেই বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে ইংলিশ চ্যানেল। ফরাসি ও ব্রিটিশদের সভ্যতা, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক দর্শন ইত্যাদির আদান-প্রদানেও ভূমিকা রেখেছে এটি।

ইংলিশ চ্যানেল এর আয়তন প্রায় ৭৫ হাজার বর্গকিলোমিটার।এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৬০ কিলোমিটার এবং অবস্থানভেদে প্রস্থ সর্বোচ্চ ২৪০ কিলোমিটার থেকে সর্বনিম্ন ৩৪ কিলোমিটার।পূর্ব প্রান্তের ডোভার প্রণালীতে ইংলিশ চ্যানেল সবচেয়ে কম প্রশস্ত।

এটি খুব একটা গভীর নয়। যে স্থানটিতে ইংলিশ চ্যানেল সবচেয়ে বেশি প্রশস্ত সেখানেও এর গড় গভীরতা ১২০ মিটার। হার্ডস ডিপে এটি সর্বোচ্চ গভীরতায় পৌঁছেছে। সেখানে এর গভীরতা ১৮০ মিটার।

উন্মুক্ত সমুদ্রে সাঁতরানোর জন্য ইংলিশ চ্যানেল বিশ্বব্যাপী সাঁতারুদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি চ্যালেঞ্জ। সাঁতার কেটে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করতে সর্বনিম্ন ৭ ঘন্টা থেকে সর্বোচ্চ প্রায় ২৭ ঘন্টা সময় লাগে।সাঁতারুরা ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার জন্য ডোবার প্রণালীর সরুতম পথটি ব্যবহার করে থাকে।

১৮৭৫ সালে ক্যাপ্টেন ম্যাথু ওয়েব নামক এক ব্রিটিশ সর্বপ্রথম কোনো ধরনের জলযানের সাহায্য ছাড়া সাঁতরে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেন। এই সাঁতারে তার সময় লেগেছিল প্রায় ২১ ঘন্টা। এরপর থেকে বহু দেশের অনেক সাঁতারু ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার রেকর্ড তৈরি করে।

ব্রজেন দাস প্রথম বাংলাদেশি এবং প্রথম দক্ষিণ এশীয় ব্যক্তি হিসেবে ১৯৫৮ সালের ১৮ আগস্ট ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রমের কৃতিত্ব দেখান। শুধু তাই নয়,তিনিই প্রথম বাংলাদেশি যিনি ছয়বার ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেছেন।

গার্টেড ইউরি লে (যুক্তরাষ্ট্র)১৯২৬ সালে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রমকারী প্রথম নারী হিসেবে বিশ্বরেকর্ড করেন।এছাড়া, ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রমকারী প্রথম ভারতীয় মিহির সেন এবং প্রথম বাঙালি ও এশীয় নারী আরতি সেনগুপ্তা (ভারত)।

ইংলিশ চ্যানেলের দ্বীপগুলোর মধ্যে ব্রিটেনের আইল অব ওয়াইট এবং চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রধান বন্দরগুলির মধ্যে আছে ফ্রান্সের শেরবুর্গ ও ল্য আভ্র্‌, এবং গ্রেট ব্রিটেনের সাদাম্পটন। অপেক্ষাকৃত ছোট বন্দরগুলির মধ্যে আছে গ্রেট ব্রিটেনের ডোভার, প্লিমাথ ও পোর্ট্‌স্‌মাথ এবং ফ্রান্সের কালে, দাঁকের্ক, বুলোঞ-সুর-মের ও দিয়েপ।

এই সব বন্দরগুলির মধ্যেই নিয়মিত ফেরি সংযোগ আছে। রেল ফেরিগুলি কোন বিরতি ছাড়াই লন্ডন ও প্যারিসের মধ্যে যাত্রী পরিবহন করে।

এছাড়া, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৯৯৪ সালে ইংলিশ চ্যানেলের তল দিয়ে সাড়ে ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গ খুঁড়ে একটি ট্যানেল তৈরি করা হয়।যা ইউরো ট্যানেল নামে পরিচিত। America society of civil engineers এর সুড়ঙ্গটিকে আধুনিক বিশ্বের সপ্তম আচর্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

এটি যুক্তরাজ্যের ফোকস্টোনকে ফ্রান্সের
কোকুয়েলসের সাথে যুক্ত করেছে। ইংল্যান্ডের ক্যাসেল হিলে এবং ফ্রান্সের বয়সিংগে এলাকায় টানেলটি সমুদ্র হতে প্রবেশ করেছে।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে টানেলটির গড় গভীরতা ৪৫ মিটার।এর সর্বনিম্ন পয়েন্টের দৈর্ঘ্য ৭৫ মিটার।টানেলে তিনটি সুড়ঙ্গ রয়েছে যার দুটি দিয়ে ট্রেন চলাচল করে এবং তৃতীয়টি মেরামত-সংরক্ষণ কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত হয়।মূল টানেলটি নির্মাণের আগেই তৃতীয়টি নির্মিত হয়েছিল ভূ-গর্ভের অবস্থা পরীক্ষণের উদ্দেশ্যে।

টানেলের দুই প্রান্তে দুটি রেলস্টেশন রয়েছে। টানেল পাড়ি দিয়ে এক স্টেশন থেকে অন্যটিতে পৌঁছাতে প্রায় ৩৫ মিনিট সময় লাগে।প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার লোক এই সুড়ঙ্গ দিয়ে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করে। জাপানের সেইকান টানেলের পরে এটা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেল টানেল। তবে এর সমুদ্র তলের অংশ বিশ্বে সর্ববৃহৎ।

ইংলিশ চ্যানেলে পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যস্ততম সামুদ্রিক নালী।এই পথ দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ টি সামুদ্রিক জাহাজ চলাচল করে।কারণ এই চ্যানেলের পাড়ে ফ্রান্স ও ব্রিটেন উভয় দেশেই অনেক সমুদ্রতীরবর্তী অবকাশ কেন্দ্র আছে।

তথ্যসূত্রঃউইকিপিডিয়া, কালের কন্ঠ

- ‍সালসা

পঠিত : ১৬৫৮ বার

মন্তব্য: ০