Alapon

ইমাম আবু হানিফা: বিনয়ের মূর্ত প্রতীক...


একবার ইমাম আবু হানিফা খলিফা আল মানসুরের দরবারে উপস্থিত হন। তখন দরবারে মুসা ইবনে ঈসা উপস্থিত ছিলেন। মুসা ইবনে ঈসা ইমাম আবু হানিফার দিকে ইশারা করে বলেন, ‘ইনি হচ্ছেন বর্তমান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলিম।’

তখন খলিফা ইমাম আবু হানিফাকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কার থেকে ইলম শিক্ষা নিয়েছেন?’

এই প্রশ্নের জবাবে ইমাম আবু হানিফা বলেন, ‘ আমি উমর রাজিয়াল্লাহু আনহুর শিষ্যদের সূত্রে উমর রাজিয়াল্লাহু আনহুর থেকে, আলি রাজিয়াল্লাহু আনহুর শিষ্যদের সূত্রে আলি রাজিয়াল্লাহু আনহুর থেকে এবং আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রাজিয়াল্লাহু আনহুর শিষ্যদের সূত্রে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাজিয়াল্লাহু আনহুর থেকে ইলম শিক্ষা নিয়েছি।

তখন খলিফা বললেন, ‘বাহ, আপনি তো এখন সব বিষয়ে পূর্ণ আস্থাভাজন।’

তখন ইমাম আবু হানিফা বলেন, ‘আমি যা কিছু পেয়েছি সব মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রশংসা ও শুকরিয়া আদায়ের মাধ্যমে পেয়েছি। যখনই কোনো ইলম, ফিকহ কিংবা হিকমা অর্জন করেছি, তখনই ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলেছি। এভাবেই আল্লাহ আমার ইলমে বরকত দান করেছেন।’

কিছুদিন পর জনৈক ব্যক্তি ইমাম আবু হানিফার একটি মাসয়ালা নিয়ে বিতর্ক করছিল। বিতর্কের এক পর্যায়ে সেই ব্যক্তি ইমাম আবু হানিফাকে লক্ষ্য করে বলে, আল্লাহকে ভয় করুন। এ কথা শোনার সাথে সাথে ইমাম আবু হানিফা স্তব্ধ হয়ে গেলেন। ভয়ে তার শরীর হিম শীতল হয়ে গেল, শরীরে লোমগুলো দাঁড়িয়ে গেল। তারপর ইমাম আবু হানিফা মাথা নিঁচু করে বলেন, প্রিয় ভাই! আল্লাহ তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন। বর্তমান সময়ে তোমার মত মানুষের বড়ই অভাব। এখন আর কেউ কাউকে এভাবে সতর্ক করে না। বিতর্কের সময় জ্ঞান জাহির করতে গিয়ে অনিচ্ছায় অহংকার চলে আসলে এভাবে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয় না।’

এরপর জীবনের পড়ন্ত সময়ে ইমাম আবু হানিফা পুত্র হাম্মাদকে ধর্মতত্ব নিয়ে বিতর্ক করতে দেখে ভীষণ বিরক্ত হন। তিনি এতোটাই বিরক্ত হয়েছিলেন যে, তৎক্ষনাত বিতর্ক বন্ধ করতে বলেন। তখন হাম্মাদ তার বাবার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আব্বা, আপনিও তো একসময় এ বিষয়ে বিতর্ক করতেন।’ জবাবে ইমাম আবু হানিফা বলেন, আমরা যখন বিতর্ক করতাম তখন এই ভয়ে তটস্থ থাকতা যে, প্রতিপক্ষ ভাইয়ের সামনে প্রমান পেশে অসঙ্গতি দেখা দিলে সে হয়তো সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবে। আর আজকাল তোমরা বিতর্ক করো প্রতিপক্ষকে ভুল প্রমাণ করতে এবং তাকে ভ্রান্ত আখ্যা দিতে। ফলাফলস্বরূপ, তোমরা তাদের পথভ্রষ্ঠ করেই ছাড়ো। কিন্তু ভুলে যেও না, কাউকে পথভ্রষ্ঠ প্রমাণ করা মানেই কাফির আখ্যা দেওয়া। আর যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে কাফির আখ্যা দেয়, সে নিজেই কাফির হয়ে যায়।’ (সূত্র: ইমাম আবু হানিফা রাহ. জীবন ও কর্ম)

খুব সম্ভবত আমিরুল মুমিনীন উমর ইবনুল খাত্তাব রাজিয়াল্লাহু আনহু বলেছিলেন, জ্ঞানের স্তর তিনটি। যে প্রথম স্তরে প্রবেশ করে সে অহংকারী হয়ে উঠবে; যেন সে সবকিছু জেনে গেছে। যে দ্বিতীয় স্তরে প্রবেশ করে, সে হবে বিনয়ী। আর যে তৃতীয় স্তরে প্রবেশ করে, সে নিজের অজ্ঞতা বুঝতে পারে এবং আরও বিনয়ী হয়।

ইমাম আবু হানিফা রাহিমাল্লাহুর ঘটনাগুলো সেই বিনয়েরই শিক্ষা দিয়ে গেল। জনৈক মনীষী বলেছিলেন, ‘যে যত বড় জ্ঞানী, সে তত বেশি বিনয়ী।’ ইমাম আবু হানিফা একদিকে ছিলেন জ্ঞানের সমুদ্র, অন্যদিকে বিনয়ের মূর্ত প্রতীক।

পঠিত : ৪২৭ বার

মন্তব্য: ০