Alapon

নানা ঘটনা নানা মত!

সম্প্রতি হুমায়ূন আহমেদ এর তালকপ্রাপ্ত স্ত্রী গুলতেকিন এর একটা সাক্ষাৎকার দেখলাম।


টিভি তারক অপি করিম এর তৃতীয় বিবাহ নিয়ে ফেসবুকে প্রচুর রসালো মন্তব্য দেখলাম।



অপরদিকে জেনারেল এরশাদকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোড়ানোর মতো মজাদার দৃশ্যটিও দেশবাসী উপভোগ করছেন তারই স্ত্রী রওশন এরশাদের বদৌলতে।


হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের বা বাঙালীর ইতিহাসের সবচে জনপ্রিয় মানুষটির নাম। ভদ্রলোক গুলতেকিনকে ডিভোর্স দিয়ে শাওনকে বিয়ে করেছিলেন। বিষয়টি তার পাঠকদের অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। আমার নিজেরও প্রথমদিকে বিষয়টা নিন্দনীয়ই মনে হয়েছিল; কিন্তু আমি হুমায়ূন আহমেদ এর মতো একজন মানুষ- যে কিনা মিসির আলীর মতো একটা চরিত্রের সৃষ্টিকর্তা- তার দ্বারা কোন অযৌক্তিক কাজ হতে পারে তা ডে-ওয়ান থেকেই বিশ্বাস করিনি।


এবং, ঠিক ঐ সময়েই হুমায়ূন আহমেদ- তার ব্যক্তিগত জীবনের 'এই বিষয়টি' নিয়ে একটি খুব ছোট লেখা প্রথম আলোর প্রথম পাতায় 'নিজের ষ্টেটমেন্ট' হিসাবেই অনেকটা লিখেছিলেন। সেখানে তিনি 'অত্যন্ত সুন্দরভাবে' গুলতেকিনকে কোন দোষ বা গুণ না দিয়েই চমৎকার সমাধান দিয়েছিলেন যদিও তা ছিল অনেকটাই অস্পষ্ট। তিনি অনুরোধের স্বরে একটা লাইনও সেখানে লিখেছিলেন (কথাটা ছিল অনেকটা এই রকম), কেউ যেন গুলতেকিন'কে এ বিষয়টা নিয়ে বিব্রতকর কোন আলোচনায় না টানেন; তবে তাকে (হুয়ায়ূন আহমেদ) নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করলে তিনি মাইন্ড করবেন না- কারণ তিনি 'হুমায়ূন আহমেদ'।


ওনি মানুষ হিসাবে কতটা উচ্চতায় ছিলেন- আমি সেদিন তার ওই লেখাতেই বুঝে নিয়েছিলাম।


আমি এবং আমার সংগে তার আরও অগণিত অথবা কোটি কোটি পাঠকও জানতেন যে, হুমায়ূন আহমেদ এর জীবনে শাওন 'ইন' হয়েই গুলতেকিন কে 'আউট' করেছিলেন। আর এজন্যই 'আমরা' হুমায়ূন আহমেদকে দোষী সাজিয়ে মজা লুটতে চেতাম বা চেয়েছি।


হুমায়ূন আহমেদ মারা গেলেন।


তারও বছর দু'য়েক পরে শাওন এর একটি টিভি সাক্ষাৎকার (চ্যানেল আই এর তৃতীয় মাত্রা) দেখলাম এবং সেখানে জানলাম যে হুমায়ূন আহমেদ গুলতেকিনকে ডিভোর্স দেবারও প্রায় ৪/৫ বছর আগে থেকেই আলাদাভাবে বা বিচ্ছিন্নভাবে (সেপারেটেড জীবন-যাপন) বসবাস করে আসছিলেন। কার্যত তাদের মধ্যে কাগজের রিলেশন ছাড়া অন্য কোন কিছু্ ছিল না দীর্ঘ কয়েক বছর।


এবং এরই এক পর্যায়ে হুমায়ূন আহমেদ গুলতেকিনকে ডিভোর্স দেন। 
এবং ডিভোর্সের সেই সময়ের কিছু আগেই শাওন 'সিংগেল হুমায়ূন আহমেদ' এর জীবনে প্রবেশ করেন তার যোগ্যতা দিয়েই।


অর্থাৎ গুলতেকিন এর আউট এর পেছনে শাওন ইন এর কোন যুক্তি নেই।


আমি শাওনের কথাগুলি শতভাগ বিশ্বাস করিনি সেদিন। 
কিন্তু যেদিন ঠিক এই একই রকমের একটা লেখা হুমায়ূন-গুলতেকিন তনয় 'নুহাশ আহমেদ' এর লেখা থেকে জানতে পারলাম- সেদিনই নিশ্চিত হয়েছিলাম শাওন কোন মিথ্যা কথা বলেননি।


অপরদিকে আমি এটা কৌতুহল নিয়েই খুঁজতেছিলাম সত্যিকারার্থে গুলতেকিন এর সংগে হুমায়ূন আহমদে এর রিলেশন ব্যর্থ হবার কারণটা। এবং এর উত্তরটা গুলতেকিন সেদিন তার সাক্ষাৎকার এ নিজে থেকেই দিয়ে দিয়েছেন। তিনি যখন খুব উৎসাহ নিয়ে বলে দিলেন যে, তিনি 'ওমুকের' নাতনী- ঠিক তখনই আমি ধরে ফেলেছিলাম এই ভদ্র মহিলা 'কি টাইপ' মহিলা ছিলেন! তিনি যতটা না হুমায়ূন আহমেদ এর স্ত্রী ছিলেন তরচে অনেক বেশী ছিলেন ড. ইব্রাহীম না কার যেন নাতনী! অর্থাৎ তার নিজ স্বামীর অবস্থান তার কাছে কোনদিনই উচ্চু ছিল না।


'আত্ম-অহংকারী' কোন মহিলাই কোন পরিবারের জন্যই স্ত্রী বা বউ হিসাব সৎ বা সুন্দর হয় না। এবং ঐ পরিবারের ধ্বংশ অনিবার্য।


আর আমাদের বাংলাদেশে এরূপ 'আত্ম-অহংকারী' মহিলাদের সংখ্যা যথেষ্ঠ কম নয়। হয় এরা তার নিজের রূপ নিয়ে আত্ম-অহংকারে কাটায় অথবা তার বাবার বা নানার পরিবারকে নিয়ে আত্ম-অহংকার এর নিন্মজ্জিত থাকে। এবং একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে এরা বাস্তবে অতটা সুন্দরীও হয় না। কিন্তু এদের অহংকারের সীমা থাকে না। এবং এই মহিলাগুলি-ই তাদের স্বামী এবং স্বামীর পরিবারকে সব-সময় অযথা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্ল্য করে এক ধরণের 'বিকৃত আনন্দ' উপভোগ করে থাকে।


পরিণামে হুমায়ূন আহমেদ এর মতো উন্নত মানুষগুলির জীবনও দুর্বিসহ করে তোলে। আর, হুমায়ূন আহমেদ এর মতো মানুষরা কোনদিন কারো কাছে 'এসব অতি ব্যক্তিগত' বিষয়গুলি শেয়ার করতেও পারে না; চিৎকার করে কাঁদতেও পারে না। আর তখনই তারা হয়তো বাধ্য হয় আলাদা বসবাস করতে অথবা বিকল্পর খোঁজে।


আর যেহেতু বাংলাদেশের ৮০ ভাগ মানুষ শুধু খায় আর ঘুমায়, কোন কাজ করে না; তাদের অফুরন্ত সময় থাকে অন্যের সমালোচনা করে আনন্দ নেবার। নিজের ব্যক্তিগত জীবনে ঠিক এরকম সমস্যার সৃস্টি না হলে এই মানুষগুলিও কোনদিন বুঝেও না হুমায়ূন আহমেদ এর কষ্টগুলি কোথায়।


আর এরাই তখন হুমায়ূন আহমেদ, অপি করিম বা বিদিশার এরশাদকে নিয়ে মজাদার স্ট্যাটস দিয়ে বিকৃত আনন্দ পায় ও একই সংগে নিজের চরিত্রটিও উম্মোচন করে দেয়!


সেদিন অপি করিম যখন তার তৃতীয় বিয়ে করলেন- তখনও দেখলাম ফেসবুক ঝুরে কত কত মানুষের কত কত অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। নিজেদের কোন কাজ না থাকলে যা হয় আর কি!


অথচ এই অপি করিম কে সামনে পেলে এই 'সমালোচকরা'ই একটি সেলফি তুলে তা ফেসবুকের টাইম লাইনে সাজিয়ে রাখতে বা একটা অটোগ্রাফ নিতে কত-কিছুই না করে! তখন অবশ্য এরা লজ্জাও পায় না- কাজ-কর্ম ছাড়া এসব লোকদের সম্ভবত লজ্জাও থাকতে নেই।


জেনারেল এরশাদ।
তার স্ত্রী রওশনকে দেশের ফাষ্টলেডী বানালেন। এই স্ত্রীর জন্য তাকে কম হেনেস্থা হতে হয়নি।


রওশনও নিঃসন্দেহে দেমাগী মহিলা।
এই মহিলার জন্য এরশাদ সারাজীবন 'আটকুড়ে' খেতাবও সানন্দে বয়ে নিয়েছেন- দীর্ঘ জীবন ভর। আর, অপরদিকে যখন একটা দেশের 'প্রেসিডেন্ট' নিজ স্ত্রীর কাছ থেকে প্রতারিত হয়েছে, অবহেলিত হয়েছেন- তখনই তিনি বিকল্প খুঁজছেন।


কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ, এক তরফাভাবে এরশাদকেই দোষারোপ করে আনন্দ পেয়েছে বা পায়।


আমি বিশ্বাস করি জেনারেল এরশাদ তার স্ত্রী রওশনকে পাগলের মতোই ভালবেসেছেন জীবনভর- এমনকি এখনও। নইলে এতো এতো কিছুর পরও তিনি রওশনকে এই সেদিন পার্টির 'ফাষ্ট কো-চেয়ারম্যান' বানাতে না। এই সামান্য একটা 'রওশন'কে ডিভোর্স দিলে এরশাদের এমন কিছু ক্ষতি হবার কথা নয়। কিন্তু শুধামাত্র নিজের অকৃতিম ভালবাসার জন্যই এরশাদ তা করতে পারছে না বা পারেননি।


বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত কম বয়সে বিধবা হয়েছেন।
তিনি মোসাদ্দেক আলী ফালুকে বিয়ে করেছেন- আমি এখানে তো অন্যায় কিছু কোনদিনও খুঁজে পাইনি। বেগম জিয়া তো শেখ হাসিনার মতো নিজ স্বামীকে অবহেলা করে 'অন্য মৃণাল কান্তি'র সংগে সময় কাটাননি- তিনি একজন ফালুকেই শরিয়তসম্মতভাবে বিয়ে করেছেন, নিজেকে পবিত্র রেখেছেন। যেই বয়সে খালেদা জিয়া বিধবা হয়েছেন- সে হিসাবে আমি তাকে ধন্যবাদ দিতাম যদি তিনি বিষয়টা গোপন না রেখে সাহসের সংগে সত্য তুলে ধরতেন।


অবশ্য দিবেন বা কিভাবে- বাংলাদেশের মানুষ এখনও এতটা বড় হতে পারেনি- কোনদিন পারবে বলেও তো মনে হয় না।


অপরদিকে শেখ হাসিনা ড. ওয়াজেদ মিয়াকে কাগজ-কলেমে স্বামী রেখে যখন মৃনাল কান্তি'কে নিয়ে বছরের পর বছর নিভৃতে সময় কাটান তখনও মানুষ ওয়াজেদ মিয়ার 'পুরুষ নির্যাতন' বিষয়ে কোন কথা বলতে পারে না। কারণ পুরুষ নির্যাতন হলে কিছু যায় আসে না- 'নারী নির্যাতন' হলে বুকে সাইবোর্ড সাটিয়ে প্রেস ক্লাবে দাড়ালে পত্রিকাগুলি অন্তত তাকে বিশ্বব্যাপী প্রচার পাইয়ে দিবে! দেশের মানুষগুলি তাই-ই চায়।


বাংলাদেশে নারীদের রক্ষার জন্য 'নারী নির্যাতন আইন' রয়েছে- কিন্তু পুরুষদের রক্ষার জন্য কোন আইন নেই। যে-কোন নারী চাইলেই যে কোন পুরুষের বিরুদ্ধে থানায় গিয়ে একটা নারী নির্যাতন মামলা করে দিলেই থানাওয়ালারা আইনের দোহাই দিয়ে ঐ পুরুষকে গ্রেফতার ও হেনেস্থা করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়- কিছু কাচা পয়সা বাগিয়ে নেবার জন্য।


বাংলাদেশে যে পরিমান নারী নির্যাতন হয়- তার সমপরিমাণ পুরুষও নারী কর্তৃক নির্যাতিত হয় কিন্তু এর পরিসংখ্যান কেউ খুঁজে বের করে না- কারণ তাতে বাড়তি কোন 'আনন্দ' তো পাওয়া যায় না। তাছাড়া কোন লাভও হয় না এসব নিয়ে কাজ করলে। বাংলাদেশের জুলফিকার অালী ভুট্টো পর্যন্ত সংসদ সদস্য থাকাকালীন স্ত্রীর করা নারী নির্যাতন মামলায় গ্রেফতার হয়ে হাজতবাস করেছেন।


অপরদিকে যখন একজন গুলতেকিন বা রওশন অথবা শেখ হাসিনার মতো স্ত্রী'র 'তথাকথিত স্বামী' আপনি হবে- তখন আপনি নারী নির্যাতন মামলাও খাবেন, খাবেন পুলিশের দৌড়ানীও, রেডী থাকুন। আপনার জীবনটা তখন হবে ড. ওয়াজেদ মিয়ার মতোই। অথবা হয়ে উঠবেন হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ।


আর যদি আপনার কপাল ভাল হয় এবং শাওনের মতো কোন তরুনীর দৃষ্টি আকৃষ্ট করার ক্ষমতা রাখেন তাহলে হয়তো ড. হুমায়ূন আহমেদ এর মতো শেষ জীবনটা একটু-আধটু সুখে কাটাতেও পারবেন।


এসব নির্যাতিত পুরুষদের জন্য একটা পরামর্শ দিয়ে রাখি।
আপনার স্ত্রীর চরিত্র যদি অসুন্দর হয় অর্থাৎ আপনার স্ত্রী যদি পরকীয়া লিপ্ত হয়; তবে সে যতই 'নারী নির্যাতন আইন' এর দোহাই দিক- আপনার বাঁচার জন্য সুন্দর একটা রাস্তা খোলা রয়েছে। আর তা হলো- 'চরিত্রহীনা স্ত্রী নিয়ে সংসার করতে আপনি বাধ্য নন' বিধায় আপনি আইনী সহায়তা পাবেন।


এবং যদি সেটা প্রমাণ না করতে পারেন- তবে বাকী জীবন 'ড. ওয়াজেদ মিয়া' হয়ে কাটিয়ে দিন অথবা দেশান্তরী হোন- ভাল কবি হতে পারবেন গ্যারন্টি দিচ্ছি!


এরশাদও কিন্তু কবি হিসাবে এক্কেবারে খারাপ নন!


পঠিত : ১১৩৪ বার

মন্তব্য: ০