Alapon

এই জাতি নিয়ে আমরা কি করব?

বড় ভাইয়াকে মাঝে মাঝে আকাশের পানে চেয়ে আফসোস করতে দেখি! কখনো কখনো মনে হয়, সে কেঁদেই ফেলবে। আর তার এই আফসোস দেখে আমি প্রাণখুলে হাসি। কিছুদিন আগ পর্যন্ত তার এই আফসোসটাকে আমার কাছে মজাদার একটি বিষয় মনে হত।


ভাইয়া প্রায়ই বলে,‘ইশ আল্লাহ! দুনিয়াতে পাঠাইছেন আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু বাঙাল করে কেন পাঠাইলেন? এই নিকৃষ্ট বাঙাল জাতি ছাড়া আর কি কোন জাতি ছিল না! এই নিকৃষ্ট জাতিতে জন্ম নিয়ে এখন আমিও নিকৃষ্ট হয়ে গেছি। আল্লাহ! এই জাতি থেকে কোন উদ্ধারের ব্যবস্থা থাকলে কাইন্ডলি দয়া করেন।’


তার এইসব কথাশুনে আগে হাসতাম। হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়তাম। কিন্তু এখন আর হাসি না। এখন আমিও আফসোস করি। বাঙাল জাতিটাকে নিকৃষ্ট জাতি ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না। প্রশ্ন করবেন, নিকৃষ্ট কেন বলছি? তাহলে শুনুন!



কোথাকার কোন দম্পত্তির ডিভোর্স হয়েছে নাকি মহাদেশ উদ্ধার করেছে, তা নিয়ে দেশের সকল মিডিয়াসহ আমজনতা মায়াকান্না শুরু করে দিয়েছে। কেউবা সেই সম্পর্ক নিয়ে ব্যবচ্ছেদ করতে শুরু করে দিয়েছে। মিডিয়া এবং মানুষের উদ্বেগ দেখে মনে হল, তাদের এই সিদ্ধান্তে দুনিয়ার বিরাট ক্ষতি হয়ে গেছে। এবং তার কাফফারা স্বরূপ দুনিয়া অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, অভিনয় করে খাওয়া এই দম্পত্তির ডিভোর্সে বাংলাদেশের কয় পয়সা ক্ষতি হয়েছে?


অন্যদিকে, একই দিনে শাহবাগে পুলিশের রাবার বুলেটের আঘাতে ঢাকা কলেজের একজন শিক্ষার্থীর দু’চোখই প্রায় নষ্ট হ্বার পথে। কিন্তু সেই সংবাদ পত্রিকাওয়ালাদের কাছে তেমন গুরুত্ব পায় না। সেই সংবাদ বড় বড় হরফে পত্রিকার পাতায় ঠাঁয় পায় না। আমজনতা এই ছেলেটির উপর অন্যায় নির্যাতন নিয়েও ফেসবুকে দরদমাথা ষ্ট্যাটাস দেয় না। তাদের চিন্তা তাহসান-মিথিলার বাচ্চাটার কি হবে! সেই চিন্তা থেকে আমাদের বাঙাল তরুন সমাজ শাহবাগের মোড়ে মানববন্ধন করতে যাচ্ছে! কিন্তু দেশের একটি সম্পদের চোখ দু’টি হারিয়ে গেল তাতে কারোরই কোন বোধদয় হয় না। হায়! কি লজ্জা!


আবার এই তরুনরাই নিজের প্রোফাইল পিকে দিয়ে রাখে ‘আমি গর্বিত বাঙালী’। বাঙালীর চোখের সামনে দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা হরিলুড হয়ে গেল। বাঙাল তরুন সমাজ গাঁজা খেয়ে বুদ হয়ে ঘুমায়। বলে, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকে আমার কোন একাউন্ট নেই। চুরিহোকগে! আমার কি!’ আহাম্মকের দল বাঙাল তরুন জানেও না, সেই টাকায় তারও হিস্যা আছে। এরাই আবার বীর বাঙালী।


বীর বাঙালীর নাকেটর ডগা দিয়ে দফায় দফায় গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হল। বীরবাঙালী নিশ্চুপ। বীর বাঙালের দেশে সুন্দরবন কেটে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানিয়ে বাঘ মামাদের নানাবাড়ি ভারতে চিরস্থায়ীভাবে পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। এরপর ধীরে ধীরে সকল প্রাণীদেরই নানাবাড়িতে পাঠানো হবে। এবং একসময় বলা হবে, ‘একদা বাংলাদেশের দক্ষিণবক্ষে ম্যানগ্রোফ বন ছিল। কিন্তু এখন তা ইতিহাস।’
আমাদের বীর বাঙাল তরুন সমাজ এই ইতিহাসের অপেক্ষায় ফেসবুকের হোমপেজে চেয়ে আছে।


জাতির বিবেকখ্যাত সাংবাদিকসমাজ এবং দেশের প্রায় সকল মানুষ ‘ডিভোর্সের মত একটি নোংরা বিষয়ে মেতে থাকে; তখন তাদেরকে কি বলা উচিত?


আমি প্রায়ই ভাবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরজি এমনি এমনি তো আর বলে নাই, ‘রেখেছো বাঙালী করে, মানুষ করো নি’। আজ বিশ্বাস করতে বাধ্য হচ্ছি, ‘আমরা বাঙালীরা আজও মানুষ হতে পারিনি।


পঠিত : ১২০২ বার

মন্তব্য: ০