Alapon

বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় ......

সকাল থেকে আকাশে মেঘের ভীষণ রকমের
দাপাদাপি। দুপুর নাগাদ সেই মেঘগুলো থেকে ঝুমঝুম বৃষ্টি নামে। বৃষ্টিতে স্নানের সুপ্ত একটা ইচ্ছে জমে আছে মনের কোণে। বহুদিন পরে সেই স্বাদ ছোঁয়ার সুযোগ এসেছে। হুট করে নেমে গেলাম বৃষ্টি বিলাশ উপভোগের জন্য।

বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় শরীরের সকল ময়লাগুলো ধুয়েমুছে সতেজ হয়ে যায়। চুলের ফাঁকে ফাঁকে, পশমের গোড়ায় গোড়ায় বৃষ্টির নির্মল পানিগুলো এক মায়াবী আবেশের জন্ম দিচ্ছে। শরীর শীতল হচ্ছে। মনটা ফুরফুরে লাগছে। পানিগুলোর সাথে আমার সকল ক্লেদ-আক্ষেপও যেনো গড়িয়ে পড়ছে। ভিজে ভিজে একাকার দেহ-মন। প্রভুর রহমের রহমে অবগাহন সেরে ঘরে ঢুকে স্বলাত আদায় করে নিলাম।

টিনের চালে বৃষ্টির রিনঝিন শব্দ। এক অনাবিল আনন্দের আভা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে মগজের ভাঁজে ভাঁজে। ক্ষিদে পেয়েছে। ভিষণ ক্ষিদে। বৃষ্টির দিনে ভুনাখিচুড়ি খেতে তো আবার দারুণ মজা। সে মজাটাও তো হাতছাড়া করা যায় না। যথারীতি ভুনাখিচুড়ি খেয়ে নিই। খাওয়া-দাওয়ার পাঠও চুকে গেলো। বাকী আছে ঘুম....

কষে একটা ঘুম দেয়ার চিন্তা মগজে চালান করে দিলাম। মগজের সিগন্যালে কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে পড়ি।
ঘুম আসছে না। একটা অপূর্ণতা মনে হয় রয়েই গেলো। কী সে অপূর্ণতা, তা আমি খুঁজে ফিরি! পেয়ে যাই! ইয়ারফোন গুঁজে দিয়ে মিউজিক-গান শোনার অপূর্ণতা....

আমি তো গান শুনি না। সেই সুদীর্ঘ সময় থেকেই! তো আমার সে-ই চাহিদা তো আর অপূর্ণ রবে না, শূন্যস্থান কিছু না কিছু, কেউ না কেউ পূর্ণ করবেই, করে ---এটাই জগতের নিয়ম। সেই নিয়মে সবাই আঁটকে আছে! আমিও ব্যতিক্রম নয়।

কাঁথাটা সরিয়ে নিয়ে মোবাইলটা হাতে নিলাম। ইউটিউবে ঢুকলাম। আমার অপূর্ণতা পূর্ণ করতে আব্দুর রহমান আল ওসীর মুখনিঃসৃত কুরআনের সুমধুর সুরের তিলাওয়াত শুনতে সার্চ দিলাম ইউটিউবে। ভেসে আসলো অনেকগুলো তিলাওয়াত। সুরা ক্বফ সামনে আসায় তা-ই শুনতে লাগলাম। বাংলা সাবটাইটেলের সুমধুর সেই সুরের লহরী ঝংকার তুলছে হৃদয়-কোণে।

একপর্যায়ে ৩৩-৩৫ আয়াতে কারিমাহ আসলো, সে আয়াতগুলোর অর্থ মোটামুটি এরকম ;

যারা অদেখা অবস্থায় দয়াময় আল্লাহকে ভয় করেছে এবং বিনীত চিত্তে উপস্থিত হয়েছে,

তাদেরকে বলা হবে, ‘শান্তির সাথে তোমরা তাতে (জান্নাতে) প্ৰবেশ করো; এটা এক অনন্ত জীবনের দিন।’
এখানে তারা যা কামনা করবে তা-ই থাকবে এবং আমার কাছে রয়েছে তারচে'ও বেশি কিছু!

আয়াতগুলোর তরজমা দেখেই আমার চক্ষু স্থির হয়ে উঠলো! আনন্দের উদ্দীপনায় চোখের তারা ঝলমলিয়ে উঠেছে! প্রশান্তিতে ভরে ওঠলো হৃদয় কানন! আশার আলো ঠিকরে পড়তে লাগলো চোখের তাঁরায় তাঁরায়। মনে হতে লাগলো আজকের দিনটা শুধুই আমার! সাথে সাথে পরকালের সেই অনন্ত অনাবিল আনন্দের দিনগুলোও আমার। আমি-ই থাকবো প্রশান্তিতে সেখানকার অনন্ত জীবনে। কারণ আমি তো সেই অদেখা রব্বের ওপর বিশ্বাস স্থাপনকারী একজন বিশ্বাসী এক ক্ষুদ্র বান্দা।

তবে আমার শিক্ষা হলো আমাকে আরো পোক্ত বিশ্বাসী হতে হবে। সেটার প্রকাশ হবে, কথায় কাজে। আমলে-আচরণে। হতে হবে বিনীত মনের অধিকারী। দুনিয়ার ওপর অনুরক্ত। আমি আজ হতে সেই-সব চেষ্টায় নিয়োজিত থাকবো হরহামেশা। প্রতিটি ক্ষণে।

~রেদওয়ান রাওয়াহা
১১.০৮.২০

পঠিত : ১০৫৩ বার

মন্তব্য: ০