Alapon

মৃত্যু!

এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা শুনলাম। ব্যক্তিটি ব্ল্যাক ম্যাজিক করত। যখন তার মৃত্যু হয় তখন গর গর শব্দ করতে করতে ছটফট করে অনেক কষ্টে মারা যায়। 

আমার এক পরিচিত আত্মীয় এর যখন মৃত্যু হয় তখন দরজা দিয়ে আচমকা কি যেন দেখতে পায়। অত:পর ভয়ে দরজা দিয়ে দৌড়ে বের হওয়ার সময়ই মৃত্যু হয়।(আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুক).

এক ব্যক্তি দাবাড়ু ছিল, সারাটাজীবন দাবাকেই নিজের সব মনে করেছিল যখন তার মৃত্যু হয় তখন তাকে কালিমা পড়তে বললে মুখ থেকে শুধু চেকমেট চেকমেট শব্দ বের হতে হতেই ওপারের পথে চলে যায়। 

এক ব্যক্তি ব্যংকের ম্যানেজার ছিল। সারাটা জীবন গণনার হিসাব করতে করতেই জীবনের আয়ু ফুরিয়ে গিয়েছিল। মৃত্যুর সন্নিকটে যখন তাকে কালিমা পড়তে বলা হয়েছিল তখন তার মুখ থেকে এগার,বারো,তেরো ---- বের হচ্ছিল। 

এক ব্যক্তি লোক দেখানো ইবাদত করত। যখন মৃত্যু তার সন্নিকটে এসেছিল তখন তাকে বলা হয়েছিল তুমি কালিমা পড়। সে উত্তরে বলল "আমি পারছি না"। ব্যক্তিটি কথা বলতে ঠিকই পারছিল কিন্তু মৃত্যুর আগে মুখ থেকে কালিমা পড়ার সৌভাগ্য তার হয় নি। 

এক ভাইয়ের শাহাদাহের অন্তিম মূহুর্তের ভিডিও দেখেছিলাম। মুখে হাসি ফুটে আছে। হয়তো মৃত্যু যন্ত্রণার কষ্ট তাকে স্পর্শ করে নি। মুখ থেকে কালিমা বের হচ্ছিল। হয়তো ফেরেশতা কানের সামনে তাকে ইতোমধ্যে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছে। সেই সাফল্যের কারণেই মুখে হাসি ফুটে আছে। 

আপনি আপনার জীবন সারাটা জীবন যেভাবে কাটাবেন আপনার মৃত্যুও ঠিক তেমনিভাবেই হবে। যদি আপনি সারাটাজীবন শিরকি, কুফরি কাজে লিপ্ত থেকে ভাবেন আপনার মৃত্যুর মূহুর্ত খুব সুখকর হবে তাহলে আপনার চিন্তাভাবনা এক অলীক কল্পনা ছাড়া কিছুই নয়। 

মৃত্যু যন্ত্রণা আপনাকেও একদিন সহ্য করতে হবে। সেই অবস্থা থেকে পরিত্রান আপনি কখনো পাবেন না। 

" আর মৃত্যু, সে তোমরা যেখানেই থাকো না কেন সেখানে তোমাদের নাগাল পাবেই, তোমরা কোন মজবুত প্রাসাদে অবস্থান করলেও। " (নিসা:৭৮)

সারাটা জীবন একাধিক ইলাহ কে গ্রহণ করে, সারাটাজীবন একাধিক রবকে গ্রহণ করে আপনি যদি ভাবেন আপনি মৃত্যুর সময় " লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ " ( আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই) পড়তে পারবেন তাহলে আপনি এক অবাস্তব চিন্তার মধ্যে ডুবে আছেন। 

রাসুল সা: যখন সাহাবীদের বলছিলেন, "ইহুদী নাসারা রা তাদের ধর্মযাজকদের ইলাহ হিসেবে গ্রহন করেছিল " তখন আদি বিন হাতেম রা: (সদ্য মুসলিম) বললেন, "ইয়া রাসুলাল্লাহ আমরা তো আমাদের ধর্মযাজকের ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করেনি ". জবাবে রাসুল সা: বললেন তারা যা হারাম করত এবং তারা যা হালাল করত তোমরা কি তা মেনে নাওনি যদিও তা তোমাদের শরীয়ত বিরোধী হত। জবাবে আদি বিন হাতেম রা: বললেন তা আমরা মেনে নিতাম। জবাবে রাসুল সা: বললেন এটাই তো তাদেরকে ইলাহ মেনে নেওয়া। এটাই তো তাদের ইবাদত করা। (তিরমীযি :৩০৯৫)

তাহলে এবার আপনার কথা চিন্তা করুন। যেসকল শাসকেরা সুদ, যিনা ব্যভিচার এর মতো হারামকে হালাল করেছে এবং পর্দা, আল্লাহর আইনকে হারাম করেছে তাদের অনুসরণ করছেন। প্রতিনিয়ত তাদেরকে আনুগত্য করছেন। আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে রব হিসেবে গ্রহন করে যদি ভাবেন মৃত্যুর আগে ঠিকই এক ইলাহ গ্রহণ করব তাহলে তা বোকামির পরিচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। 

গতকাল বিকেলে যে মুখ থেকে সোনালি রোদের মত হাসি ফুটছিল তারপরের দিন বিকেলে সেই মুখ থেকেই ফেনা উঠতে দেখেছি। গতকাল বিকেলে যে ছেলেটি বলেছিল কাল আবার ফিরে আসব, তারপর দিন বিকেলে সেই ছেলেটিই ফিরে এসেছিল কিন্তু জীবিত হয়ে ফিরে আসতে পারে নি। 

জীবনের চরম বাস্তবতার মূহুর্তে জানি না তার কতটুকু অনুশোচনা হয়েছিল। তার শিয়রে দাঁড়িয়ে থাকার সময় ভেবেছিলাম একদিন তার মত আমাকে ঘিরেও লোকগুলো কান্না করবে। আমাকেও একদিন চলে যেতে ওপারের দুনিয়ায়। 

একাধিক ইলাহ কে বর্জন করে এক আল্লাহকে গ্রহন করুন। যিনি আইন প্রদানকারী, যিনি সকল ক্ষমতার উৎসের অধিকারী, যিনি সার্বভৌমত্বের অধিকারী তার স্থানে অন্য কাউকে বসিয়ে যদি ভাবেন মৃত্যুর আগে মুখ থেকে এক ইলাহ এর নাম উচ্চারণ করব তাহলে জেনে রাখুন সেসময় আপনার মুখ নয় আপনার অন্তর কথা বলবে। 

" হে ঈমানদারগণ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করো । মুসলিম থাকা অবস্থায় ছাড়া যেন তোমাদের মৃত্যু না হয়। "(ইমরান :১০২)

পঠিত : ১২৭৪ বার

মন্তব্য: ০