Alapon

আল্লামা ইকবাল, এক বিষ্ময়ের নাম...


আল্লামা ইকবাল তখন যুবক। গ্রীষ্মের ‍ছুটিতে লাহোর থেকে বাড়ি ফিরে দেখেন, বিরাট ঘটনা ঘটে গেছে! তার বোন স্বামীর বাড়ি থেকে চলে এসেছে। তিনি বোনকে ডেকে আসল ঘটনা জানতে চাইলেন। তার বোন বললেন, তার স্বামী তাকে না জানিয়ে আরও একটা বিবাহ করেছে এবং সেই বউকে ঘরে তুলেছে। আর এ কারণে রাগ করে তিনি বাবার বাড়ি চলে এসেছেন।

পুরো ঘটনা শুনে আল্লামা ইকবালও ভীষণ রেগে গেলেন। বললনে, ‘তোমার আর ওই বাড়িতে যাওয়ার দরকার নেই। তোমার স্বামী যদি তোমাকে নিতেও আসে তারপরও আমি তোমাকে ওই বাড়িতে যেতে দিবো না।’

দুদিন বাদে আল্লামা ইকবালের ভগ্নিপতি ঠিকই বউকে নিতে আসলেন। কিন্তু আল্লামা ইকবাল নিজের সিদ্ধান্তে অটল। তিনি বোনকে যেতে দিবেন না।

আল্লামা ইকবালের বাবা জানতেন, ইকবাল কুরআনের প্রতিটি হুকুম অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার চেষ্টা করেন। তখন আল্লামা ইকবালের বাবা তার সামনে সূরা নিসার ১২৮ নাম্বার আয়াত শুনিয়ে দিলেন। যে আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, মীমাংসাই উত্তম। আর এই আয়াত শোনার সঙ্গে সঙ্গে আল্লামা ইকবাল চুপ হয়ে যান এবং ভগ্নিপতির সাথে মীমাংসা করে ফেলেন।

এরপর আল্লামা ইকবাল যখন পড়াশোনা শেষ করে বাড়ি ফিরে আসেন, তখন তাঁর বাবা বলেন, ‘আমি যে তোমাকে এতো কষ্ট করে উপার্জন করে পড়াশোনা করালাম, এখন আমাকে বিনিময় প্রদান করো!’
আল্লামা ইকবাল কৌতূহলি হয়ে বললেন, ‘আপনি কী বিনিময় চান, আব্বা! আপনি চা চাবেন, ইনশা আল্লাহ আমি তা-ই দিবো।’
তখন আল্লামার বাবা বলেন, ‘সময় আসুক, তখন চেয়ে নিবো।’

এর কিছুদিন পর আল্লামার বাবা বলেন, ‘আজ বিনিময় চাবার সময় এসেছে। আমি চাই, তুমি তোমার সমস্ত জ্ঞান ইসলামের খেদমতে ব্যবহার করো। যদি তুমি এটা করতে পারো, তাহলে আমার পরিশ্রমের বিনিময় আদায় হয়ে যাবে।’

আল্লামা ইকবাল অনেক আগে থেকেই ইসলামের খেদমতে নিজের জ্ঞান, গরিমা, চিন্তা সমস্ত কিছুই ব্যবহার করছিলেন। বাবার থেকে এমন বিনিময়ের কথা শুনে তিনি ইসলামের প্রতি আরও বেশি ঝুঁকে পড়েন।

এরপর একদিন লাহোরে আঞ্জুমানে হেমায়েতে ইসলামের মঞ্চে আল্লামা ইকবাল তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘শিকওয়া’ আবৃত্তি করেন। তারপর নিখিল ভারতে ‘শিকওয়া’ কবিতা নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায়। তখন আল্লামা ইকবাল তাঁর বাবাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কি আপনার বিনিময় পেয়েছেন?’
তখন তাঁর বাবা কেঁদে ফেলেন এবং বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। আমি আমার বিনিময় পেয়েছি এবং তোমার প্রতি আমার দিল খুশি হয়ে গেছে।’

আল্লামা ইকবাল তাঁর বাবার প্রতিটি আদেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার চেষ্টা করতেন। তাঁর বাবা একবার বলেছিলেন, ‘ইকবাল জীবনে কখনো স্থাবর সম্পত্তির মালিক হবে না।’
বাবার নির্দেশনানুসারে তিনি পারিবারিকভাবে যে সম্পত্তি পেয়েছিলেন, তা বড় ভাইয়ের নামে উইল করে দিয়েছিলেন। আর নিজের পারিশ্রমিক থেকে তিনি একটা বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন। বাড়ি নির্মিত হয়ে যাওয়ার পর সেই বাড়ি তিনি তাঁর বড় ছেলের নামে উইল করে দেন এবং সেখানে তিনি ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকেন। সেই বাড়িতে থাকা বাবদ তিনি তার ছেলে জাভেদকে মাসে মাসে ভাড়া পরিশোধ করতেন। (সূত্র: যিন্দা রোদ)

আল্লামা ইকবাল মারা যাওয়ার পর দেখা যায়, তিনি কোনো স্থাবর সম্পত্তির মালিক ছিলেন না। তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বাবার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে গেছেন। সত্যিই, আল্লামা ইকবাল এক বিষ্ময়ের নাম।

অসাধারণ মানুষরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিজের বিশেষত্ব রেখে যান।

পঠিত : ৩৮৩ বার

মন্তব্য: ০