Alapon

তুরস্কের উত্থান নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ছে ব্রিটেনের রাজনীতি!


ব্রিটেনের প্রাক্তন মন্ত্রী ডেনিস ম্যাকশান সম্প্রতি এক নিবন্ধে বলেন,
দু'শো বছর আগে গ্রীসের জনগণ জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তুর্কি আধিপত্যবাদিদের (!) কাছ থেকে স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু করেছিল।

গ্রীক স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের মহান(!) সংগ্রামটি ব্রিটিশ জনগণকে ব্যাপকমাত্রায় আকৃষ্ট করেছিল। বহু ব্রিটিশ এ সময় গ্রীসে যান এবং গ্রীসের স্বাধীনতা (!) যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে সর্বাধিক বিখ্যাত হলেন ব্রিটিশ কবি লর্ড বায়রন।কবি লর্ড বায়রন গ্রীক স্বাধীনতার (!) সংগ্রামে পুরোপুরি জড়িয়ে যান এবং এই সংগ্রামের(!) সময়-ই তিনি গ্রীসে মারা গিয়েছিলেন।

প্রাক্তন ব্রিটিশ মন্ত্রী আরো বলেন, গত দুই শতাব্দীতে গ্রীসের সাথে আমাদের ভালবাসার সম্পর্কটি অবিরাম অব্যাহত রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল গ্রীসের উপর সোভিয়েত ইউনিয়নের আধিপত্য বন্ধ করার জন্য ১৯৪৪ সালে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন।এর ফলে গ্রীস সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের হাত থেকে নিজের স্বাধীনতা রক্ষায় সমর্থ হয়।

এছাড়াও ১৯৭৪ সালে গ্রীসের উপর তুর্কী আধিপত্য(!) কায়েমের সময়ও ব্রিটিশ নাগরিকরা গ্রীসের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলো। খ্যাতনামা বামপন্থী ইংলিশ পোলেমিকবিদ ক্রিসোফার হিচেনস উত্তর সাইপ্রাসে তুর্কি আক্রমণ(!) ও দখলের বিরুদ্ধে দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়ে বই লিখে গ্রীসের পক্ষে দাঁড়ান।

ইইউ এর সমালোচনা করে প্রাক্তন এই মন্ত্রী বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্লজ্জের মতো ঘুমের ভান ধরে থাকায় এখন গ্রিসের আবার সহায়তা দরকার আমাদের (ব্রিটিশ) পক্ষ থেকে। তুরস্ক কয়েক দশক ধরে পরোক্ষভাবে গ্রীসের সার্বভৌমত্বের(!) দিকে হুমকি দিচ্ছে।
তুরস্কের অবস্থানের কড়া সমালোচনা করে এই ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান সম্প্রতি গর্ব করে বলেন, "গ্রিস এই অঞ্চলে সমস্ত দ্বন্দ্বের জন্য দায়ী এবং সমস্ত সমস্যা গ্রীসই তৈরি করছে"। তিনি আরো বলেন "ভবিষ্যতের যে কোনো সংঘাতে গ্রীস একাই থাকবে।কেউ গ্রীসের পক্ষে আসবে না"

তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকোতাই সম্প্রতি বলেন যে "এজিয়ান সাগরে গ্রীক তার দ্বীপপুঞ্জ গুলো যে চুক্তির মাধ্যমে পায় সে প্যারিস আন্তর্জাতিক চুক্তি ( যা যুদ্ধোত্তর ইউরোপের সীমানা বন্দোবস্ত করেছিল) সংশোধন করতে হবে।" স্পষ্টতই এর মাধ্যমে তুরস্ক গ্রীসের দ্বীপগুলো দখল করতে চাচ্ছে।

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুট কাভুসোগলু গ্রীসকে সমুদ্রের অধিকার বুঝে নিতে চুক্তির কাগজ না দেখিয়ে যুদ্ধ করার আহবান জানিয়েছে।যা স্পষ্টতই তুরস্কের যুদ্ধংদেহী মনোভাবের পরিচায়ক।

ইইউ এর অবস্থানঃ

ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশ বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা নাথালি টোকির বলেছে,এথেন্স ও আঙ্কারার বিষটি একটি স্থানীয় ইস্যু। উভয় পক্ষের ছাড় দিয়ে আঙ্কারা ও অ্যাথেন্সের মধ্যে এই ঘটনার মীমাংসা হতে পারে।এর মধ্য দিয়ে ইইউ স্পষ্টত তার সদস্য গ্রীসের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে না।

ব্রিটিশ এই প্রাক্তন মন্ত্রী আরো বলেন, এরদোয়ান অর্থোডক্স খ্রিস্টীয় জগতের ইস্তাম্বুল ক্যাথেড্রাল আয়া সোফিয়াকে মসজিদে পরিণত করার পদক্ষেপ নিয়ে মূলত তার ধর্মীয় উম্মাদনার পরিচয় দেন। ইউরোপের পরিষ্কার হওয়া উচিত যে এই তুরস্ক মূলত গ্রীসের অস্তিত্বের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্রাসেলস(ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তর) যদি নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে,তবে ব্রিটেনের উচিত ১৮২০ এর দশকের মতো এই অঞ্চলে গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামে গ্রীসের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানো ।

তুর্কী ও গ্রিসের মধ্যবর্তী সংকটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের অবস্থানঃ এই অবস্থা প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। তিনি তার তুর্কিপন্থী অবস্থানের কোনও গোপনীয়তা কখনও তৈরি করেননি। তাঁর পিতামহ আলী কমল ছিলেন সাংবাদিক এবং কবি যিনি উসমানীয় সুলতানের সেবক ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে যখন তিনি প্রভাবশালী রক্ষণশীল রাজনৈতিক সাপ্তাহিকের সম্পাদক ছিলেন, তখন জনসন ইউরোপীয় ইউনিয়নে তুর্কির অন্তর্ভুক্তির জন্য লেখা নিবন্ধগুলি নিয়মিত প্রকাশ করতেন।

ব্রিটেন এখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে চলে গেছে। ডাউনিং স্ট্রিট(ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর) এখন বাণিজ্যিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে নন-ইইউ অংশীদারদের সন্ধান করছে।এরই মধ্যে জুলাইয়ে ব্রিটিশ বাণিজ্যমন্ত্রী গর্বের সাথে উল্লেখ করেন যে," ব্রিটেন শীঘ্রই তুরস্কের সাথে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তি সই করবে।"

ব্রিটিশ মন্ত্রী নিবন্ধের শেষে উল্লেখ করেন, গ্রিসের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে এবং তুরস্কের সাথে জোট বেঁধে ফেলা ব্রিটিশ পররাষ্ট্রনীতির দুই শতাব্দীর এটি একটি বড় বিপর্যয় হবে। তবে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রনীতি বেক্সিটের পরে এমন অশান্তিতে পড়েছে যে এই মুহূর্তে যেকোনো কিছুই সম্ভব।

CLTD

পঠিত : ৪৯৯ বার

মন্তব্য: ০