Alapon

কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা পরাবে কে...?



ধর্ষণ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য শুনলাম। তিনি ধর্ষণের ভিডিও কারা ছড়িয়ে দিলো, তা নিয়ে চিন্তিত। ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার পিছনে বিরোধী দলের কোনো ইন্ধন আছে কিনা তা খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন দায়িত্বজ্ঞান শূণ্য বক্তব্য শুনে আমার নিজের জন্যই বিরাট আফসোস হচ্ছে! একটি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ধর্ষণ রোধে কার্যকরি পদক্ষেপের কথা না বলে, কারা ভিডিও ছড়িয়েছে সেটা নিয়ে চিন্তিত। আর সেই দেশের দূর্ভগা নাগরিকদের একজন আমি! হায় আফসোস!

অন্যদিকে তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ তো বলেই দিয়েছেন, ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধী দল সরকার পতনের পায়তারা করছে।

মন্ত্রী মহাদয়দের এহেন দায়িত্বজ্ঞান শূণ্য বক্তব্য ও মন্তব্য নতুন কিছু নয়। তাদের কাছে দেশের মানুষের জীবন ও নারীদের ইজ্জতের চেয়ে ঢের বেশি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতার মসনদে আসীন থাকা। যার কারণে সারাদেশে মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়া ধর্ষণ বন্ধ না করে, ধর্ষণের বিরুদ্ধে যারা আওয়াজ তুলছে তাদের রুখে দেওয়ার চেষ্টা করছে। একটু আগে পত্রিকায় দেখলাম, জামালপুরে ধর্ষণ বিরোধী মানববন্ধনে হামলা করেছে ছাত্রলীগ। আর আমাদের পুলিশ বাহিনী অদূরে দাড়িয়ে ঘটনা উপভোগ করেছে। এতে করে বিচারহীণতার সংস্কৃতি দিন দিন সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করছে। আর এটা কারোর জন্যই সুখকর হবে না, আমি নিশ্চিত!

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, ধর্ষণ পরবর্তি বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল করলো কারা?
অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রশ্ন তোলা উচিত ছিল, বিবস্ত্র করে এই নির্যাতনের ঘটনা তো ঘটেছে ৩২ দিন আগে। এই ৩২ টা দিন দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী করেছে? আজ ৩২ দিন পর যখন ভিডিও ভাইরাল হলো, তখনই পুলিশ বাহিনী নড়ে চড়ে বসল! ভাবখানা এমন যেন, তারাও ফেসবুকের কল্যাণে ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরেছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, নোয়াখালীর পুলিশ ঘটনা যেদিন ঘটেছে সেদিনই সবকিছু জেনেছে। কিন্তু সরকারদলীয় কর্মী বলেই কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

আবার ঘটনার অন্যদিক খেয়াল করুন! যদি এই ঘটনার কোনো ভিডিও ফাঁস না হতো, তখন?
যদি ভিডিও ফাঁস না হতো তবে নিশ্চিত করেই বলে দেওয়া যায়, এই ঘটনার কোনো সুষ্ঠু বিচার হতো না। যদিও আসামীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, আসামীদের আদৌ বিচারের মুখোমুখি করা হবে কিনা। কারণ, দুদিন পরেই মানুষ নতুন ইস্যু পেয়ে এই ঘটনা ভুলে যাবে। তারপর আসামীদের জামিনের মাধ্যমে মুক্তি দিয়ে নতুন কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটানোর জন্য উৎসাহ দেওয়া হবে। যেমনটা নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূকে ধর্ষণ ঘটনার প্রধান আসামীকে জামিন দেওয়া হয়েছে!

আমাদের আরও একটা দিক ভাবার আছে! নোয়াখালীর ঘটনার না হয় ভিডিও ফাঁস হয়েছে বলেই আসামীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু যেসব ঘটনার ভিডিও ফাঁস হয়নি, সেসব ঘটনার ভাগ্যে কী ঘটবে?
বাংলাদেশে যে বিচারহীণতার চর্চা চলছে, তাতে হলফ করে বলা যায়, ঘটনার পর ভুক্তভোগীদেরই পুলিশি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। আর আসামীরা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। কারণ, তাদের ঘটনার কোনো ভিডিও ক্লিপস নেই। যার কারণে সেসব ঘটনা নিয়ে সারাদেশে হৈচৈও হচ্ছে না, মিডিয়া কাভারেজও পাচ্ছে না।

সর্বশেষ যে পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করতে চাই তা হল, সিলেটের এমসি কলেজের ঘটনা ও নোয়াখালীতে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে চারদিক থেকে ধর্ষণের সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। আপনার কি মনে হচ্ছে, ঘটনা গুলো আজ অথবা কালই ঘটেছে?

না, আমার তা মনে হয় না। বরোঞ্জ এতোদিন যেসকল ভুক্তভোগি নির্যাতনের কথা বুকে পাথর চেপে লুকিয়ে রেখেছিল, বিচার চাইতে গিয়ে না উল্টো পুলিশের দ্বারাই নির্যাতনের স্বীকার সেই ভয়ে মামলা করেনি, তারা এই দুটো ঘটনা দেখে বিচার চাওয়ার সাহস করেছে। তারা তাদের অব্যক্ত যন্ত্রনা লাঘব করতে বিচারপ্রার্থী হচ্ছে। কিন্তু এতোদিন সেই সাহসটা পায়নি। আর এই সাহস যে তারা পুলিশ বা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রেখে পেয়েছে তেমন কিছুই না। বরোঞ্জ বাংলাদেশের আপামর সাধারণ জনতা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে, তা দেখে ভুক্তভোগিরা বিচার চাওয়ার সাহস করেছে।

কিন্তু আদৌ কি ছাত্রলীগ যুবলীগের এসব কুলাঙ্গারদের বিচার করা হবে? এই ভরসাটুকু আমরা কেউই পাচ্ছি না। কারণ, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে। আর যে দেশের বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যায়, সেই দেশের মানুষের কপালে এমন দূর্ভোগ নেমে আসাটাই স্বাভাবিক। ফলে, আসল অপরাধী তারাই, যারা এই বিচারব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। সেই অপরাধীদের বিচার করবে কে; বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে, বাংলাদেশে কি এমন কোনো দল আছে?

পঠিত : ৩৪৩ বার

মন্তব্য: ০