Alapon

||ভিন্নমতের ভাইটিকে কি ঘৃণা করেই যাবো?||



সেদিন তোমাকে দেখলাম তুমি ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছো যে তুমি তোমার দলের বন্দনা করে, তোমার শায়খের স্তুতি গেয়ে। তুমি তোমার প্রিয় দল প্রিয় শায়খকে উপস্থাপন করতেই পারো। এটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু তুমি অস্বাভাবিক যা করেছো তা হলো তুমি অন্যদের ধুঁয়ে দিয়েছো। একমাত্র সহীহ্ তোমার মানহাজ-শায়খ, সেটাই উপস্থাপন করেছো।

আজ তাই সময় হয়েছে বলে তোমাকে কিছু কথা বলছি। একটু বিবেক দিয়ে ভেবে দেখবা। খোলা মনে। সহনশীল হয়ে।

শুনো কোনো পীর কোনো হুজুর কোনো বুযুর্গ কিংবা কোন শায়খের কথাই যে একমাত্র সঠিক, কিংবা আমার দল আমার নেতা, আমার মাজহাব আমার মানহায, আমার মা-বাবা ও আমার শিক্ষক-ই একমাত্র হক্ক একমাত্র সহীহ্! তাঁরা সব সত্যের আধার, সব জ্ঞানের ভাণ্ডার --এই ধারণাটা নিতান্তই ভুল। নির্মল বিচ্যুতি। নিষ্ঠুর জুলম!

কারণ, মানুষ মাত্রই ভুল হবে। ভুল আছে ভুল করে। প্রত্যেকটা আদম সন্তানই তো ভুলকারী [১] তাই মানুষের জ্ঞান-প্রজ্ঞা-জানা-শোনা ও মানার সীমাবদ্ধতা আছে। থাকবেই! এটাই নিয়ম। এটাই সত্য। এটাই বাস্তবতা।

তাই আমরা একমাত্র আমাকেই, আমার বুঝকেই হক্কের আধার সহীহ'র ডিলার মনে করবো না! আমার সংগঠন-মাজহাব-মানহাজ-তরিকার বাহিরের কাউকে গালাগাল-অবজ্ঞা-হিংসে করবো না! জানোই তো হিংসে সব আমলে সালেহ নষ্ট করে দ্যায়। এমনভাবে ---যেভাবে আগুন ছাঁই করে ফেলে শুকনো কাঠ। [২]


আমরা ওলামাদের সম্মান করবো। জ্ঞানীদের মর্যাদা দেবো। আমার ইলম না থাকলে কোনো আলিমের মত্ মেনে চলবো। অজানা জিনিশ জ্ঞানীদের থেকে জেনে নেবো। শেখে নেবো। বুঝে নেবো। তুমি তো জানোই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা মহাবিশ্বের মহা বিস্ময় পবিত্র গ্রন্থ আল-কুরআনেই তো আমাদের বলেছেন যে, তোমরা না জানলে যাঁরা জানে তাঁদের থেকে জেনে নাও [৩]।


আমরা ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধালু না হলেও অশ্রদ্ধা করবো না; পারতপক্ষে বিদ্বেষ রাখবো না -তাহলে সব সহজ হয়ে যাবে! তুমি তো বিষয়টা জানো যে, সাহায়ে কিরাম রাদিআল্লাহু আনহু'মা' রা পর্যন্ত সবাই একই মত পোষণকারী ছিলো না। ভিন্নমত ছিলোই। কিন্তু তাঁরা ভিন্নমতকে বিভক্তির কারণ বানাতো না!

জানো তো,স্বয়ং আমীরুল মু'মিনীন খলিফাতুল মুসলিমিন আবু বকর ও ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা, ওনাদের মাঝেও তীব্র মতবিরোধ হয়েছিলো [৪]। তবুও তো তাঁরা একে অপরকে ভালোবেসেছেন। আমৃত্যু। আজীবন।

আমরা সকলকে সম্মান দোয়ার চেষ্টা করবো!
যিনি মানুষ তিনিই আমার হবেন। আমরা আমাদের হৃদয়ে চাষাবাদ করে যাবো ভালোবাসার। মমতার। সৌহার্দ্যের।

যিনি আল-ইসলামের শাশ্বত সুমহান সুন্দর বাণী পায়নি, তাঁকে আমি উদার আচরণ আর ভালোবাসা দিয়ে, দরদ ভরা বুকে সেই সুমহান সত্যের শাশ্বত বাণী পৌঁছে দেবো। ইন শা আল্লাহ! হাদিসটা তো নিশ্চয়ই পড়েছো যে, মুমিন ব্যক্তি ভালোবাসা ও দয়ার প্রতীক! [৫]


আমাদের মূলমন্ত্র হোক যে, যিনি মানুষ তিনিই ভালোবাসা পাবেন আমার থেকে! শ্রদ্ধা পাবেন! আল্লাহর রাসুল স্বল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো অমুসলীমদের প্রতি তাঁদের যে মানবিক অধিকার সে-ই অধিকারের প্রতিও যত্নশীল ছিলেন। একবার হলো কী, তিনি একজন ইহুদির লাশ দেখেও দাঁড়িয়ে গেলেন [৬]। ঘটনাটা জানা আছে না আমাদের?

অথচ আমি তুমি কী করি? আমরা ভিন্ন মতের মুসলীমদেরকেও সহ্য করতে পারি না! আফসোস! অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের প্রিয়নবীকে কী নির্দেশ দিয়েছেন শুনবে? নির্দেশ দিয়েছেন যে, "যারা আপনার অনুসরণ করে সেসব মুমিনদের প্রতি বিনম্র আচরণ করুন"! [৭]

আল্লাহর রাসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতি যদি এই নির্দেশ হয় তাহলে আমাদের কি কিছু করণীয় নেই? আমরা ক্যানো মু'মিন হয়েও অপর মু'মিন ভাইদের প্রতি বিনয়ী হচ্ছি না? বিনম্র আচরণ করতে আমাদের কীসে বাঁধা প্রধান করছে?

আমরা যেহুতু এক আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সঃ এবং আসমানী কিতাব সমূহে বিশ্বাসী-মু'মিন, সেহুতু আমরা তো ভাই ভাই। [৮]

চলো না তাহলে আর কোনো বিবেধ নয়। নয় কোনো বিচ্ছেদ! এসো না আজ হতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই! আল্লাহর রজ্জুকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধারণ করি! এটা তো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার -ই নির্দেশ যে![৯]

এই যে রব্বুল আলামীন আল্লাহর নির্দেশ, এই নির্দেশ কি আমরা অমান্য করেই যাবো? ভিন্নমতের ভাইটিকে কি ঘৃণা করেই যাবো?


||ভিন্নমতের ভাইটিকে কি ঘৃণা করেই যাবো?||

-রেদওয়ান রওয়াহা


রেফারেন্স
-------------------

১. তিরমিজি২৪২৩)
২. সুনানে আবু দাউদ ৪৯০৫
৩. আলকুরআন- ২১/০৭
৪. সহীহ্ বুখারী: ৪৮৪৭
৫. মুসনাদে আহমাদ: ৯১৯৮
৬.সহীহ বুখারী : ১৩১২
৭. আল-কুরআন: ২৬/২১৫
৮. আল-কুরআন: ৪৯/১০
৯. আল-কুরআন :০৩/১০৩

পঠিত : ১০৯৫ বার

মন্তব্য: ০