Alapon

বনী ইসরাঈল ও বাছুরের ফিতনা : যে ভাবে এলো (১ম পর্ব)


মিশরে তখন উগ্র জাতীয়তাবাদী কিবতী শাসন চলছিলো। যে খানে জুলুম নির্যাতনের স্টিমরোলার চলছিলো। হযরত মূসা আলাইহি সালাম তাঁর জাতি কে নিয়ে আল্লাহর নির্দেশে মিশর থেকে হিজরত করেন । আল্লাহর অনুগ্রহে নবীর নেতৃত্বে দীর্ঘ বন্দী ও দাসত্বের জীবনযাপন থেকে বনী ইসরাঈলীগণ (ইসরাঈলী ও অ-ইসরাঈলী মুসলিমগণ) মুক্তি লাভ করে।

হযরত ইব্রাহিম আলাইহি সালাম নমরুদ এর শাসন ও অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তি পান। মূসা আলাইহি সালাম ফিরাউনের জুলুম থেকে মুক্তি পান। প্রিয় নবি মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় কুরাইশদের নির্যাতনে মূখে আল্লাহ নির্দেশে হিজরত করে মদিনায় যান। মূলত হিজরত হলো স্বাধীনতার মূল ভিত্তি। দ্বীনে হক প্রতিষ্ঠার রাজপথ

আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী এই জাতি তুর পাহাড়ের পাদদেশের নিকট তাদের প্রথম বসতি স্হাপন করেন। এখন ইসরাঈল জাতি সম্পূর্ণ স্বাধীন। তাই এই জাতির জন্য শরিয়াত (কানুন) অপরিহার্য হয়ে পড়ে। হযরত মুসা আলাইহি সালাম কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শরিয়াত প্রদান করার জন্য তুর পাহড়ে ডেকে পাঠান। তিনি চল্লিশ দিনের নির্দিষ্ট মেয়াদে সেখানে থাকবেন এবং রোজা রাখা সহ দিন রাত ইবাদত বন্দিগীতে মাশগুল থাকবেন। যাতে আল্লাহর নবী নিজের দেহ মনকে আরো একনিষ্ঠ করে নিতে পারেন। এখানেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর উপর কিতাব নাজিল করেন ।

দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার জন্য বা ইসলামী শরিয়া কায়েমের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র ব্যাবস্থা জরুরী। আল্লাহ পাক ফিরাউনি শাসন থেকে বনী ইসরাঈলকে মুক্তি দিয়ে কিতাব দান করেছেন। এ জন্য মুসলমানদের জন্য স্বাধীন ভূমি খুবই জরুরী।


মূসা আলাইহি সালাম তাঁর জাতির অগ্রবর্তীদের নিয়ে সর্বপ্রথম তুর পাহাড়ের পাদদেশে আসেন। অন্যরা তখনো পৌঁছাতে পারে নি, তারা পথেই ছিলো। তিনি প্রথমে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার জন্য এবং আল্লাহর প্রতিশ্রুতির নতুন শরিয়া আনতে তিনি চল্লিশ দিনের জন্য তুর পাহাড়ের দিকে রওনা হোন। তিনি তার তিন বছরের বড়ো ভাই হযরত হারুন আলাইহি সালাম কে জাতির জিম্মাদারী দিয়ে যান। ঠিক এই সময়ে জাতি বড় ধরনের পরিক্ষার সম্মুখীন হয়।

কোন নতুন ভূমিতে প্রবেশ করে আল্লাহ শুকরিয়া জানাতে হবে। এই শুকরিয়া তখনই আদায় হবে যখন আল্লাহর হুকুমত প্রতিষ্ঠিত হবে। জাতিকে নেতৃত্বহীন অবস্থায় রেখে যাওয়া যাবে না। নেতৃত্বর মাধ্যমে শরীয়া প্রতিষ্ঠিত থাকে। নতুবা জাতি বড় ধরেন বিপর্যয়ে পড়ার সম্ববনা থাকে।


এ দিকে নবীর অনুপস্থিতিতে বনী ইসরাঈলের কতিপয় লোক নবী হরুন আলাইহি সালাম এর নিকট কৃত্রিম খোদা প্রয়োজনীয়তা দাবি করে। তাঁরা মূসা আলাইহি সালাম ফিরে আশা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেনি।তারা তাড়াহুড়ো করছিলো। আল্লাহর নবী তাদেরকে নানা ভাবে বুঝাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা বিভিন্ন ভাবে মিশরীয় রীতিতে পূজা পার্বন অনুষ্ঠানের জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠে।

মূলত একটি গোষ্ঠী সবসময় মূসা আলাইহি সালাম এর নেতৃত্ব ও তার দাওয়াতকে খাটো করা চেষ্টায় লিপ্ত থাকতো। তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করতো। এই সকল কায়েমী গোষ্ঠী মূসা ও হারুন আলাইহি সালাম এর নেতৃত্ব কে মেন নিতে পারেনি। তাই তারা নানা ষড়যন্ত্র করা শুরু করে। তাঁরা নানা ভাবে মূসা আলাইহি সালাম ও হারুন আলাইহি সালাম ও তাদের মোজেজা কে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করতো।

সামগ্রিক ভাবে দীর্ঘদিন মিশরের গোলামী জীবন যাপনে তাদের মনমগজে মুশরিকী ধ্যান ধারনা এতটাই বদ্ধমূল ছিলো যে তাঁরা আল্লাহর সরাসরি নিদর্শন সমূহ দেখেও কতিপয় লোকের উদ্ভট প্রচারণায় নিজেদেরকে বাঁচতে পারে নি। মাত্র তিন মাস হলো তারা মিশর ত্যাগ করেছে। তাঁর সাগর দ্বিখণ্ডিত হতে দেখেছে। আল্লাহর সাহায্য সরাসরি দেখার পরও তারা আল্লাহর ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করছিলো।
তাই দুষ্ট প্রকৃতির লোকদের কৃত্রিম খোদা প্রতিষ্ঠার দাবি আরো জোরালো হতে থাকে। এবং তারা সুযোগ খুঁজতে থাকে।

নতুন ইসলামী ভূখন্ডে বসবাসরত মুসলমানদের অন্তরের নানা ধরনের শির্কী ধ্যান ধারনা থাকতে পারে।

মিশর থেকে আসার সময় বনি ইসরাঈলের পুরুষ ও নারীগণ মিশরীয় রীতিতে যে সকল অলঙ্কার পরিধান করতো, মরুজীবনে এই গুলো পরিধান করে চলাফেরা করা এবং বহন করা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ালো। ফলে তারা পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, সবার গয়নাপাতি এক জায়গায় জমা করা হউক এবং প্রত্যেকের সোনা ও রুপা কী পরিমান রয়েছে তা লিখে রাখা হউক, তারপর এ গুলো গলিয়ে ইট বা শলাকায় পরিণত করা হউক। যাতে এ গুলো উট বা গাধার পিঠে সহজে বহন করা যায়। ফলে প্রত্যেকে তাদের গয়নাগুলো জমা করলো।

জাতিকে যে কোন সিদ্ধান্ত নেবার সময় আসন্ন ফিতনা সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরী।

এ দিকে সামেরী নামে এক ব্যাক্তি যিনি নিজেই এই গয়না গুলো গলাবার দায়িত্ব নেন। এবং সে জালিয়াতির মাধ্যমে ইট তৈরির পরিবর্তে এগুলো দিয়ে স্বর্নের বাছুর তৈরী করে আনে। এবং কৃত্রিম ভাবে হাম্বা হাম্বা অাওয়াজ বের করে। সে বলতে থাকে যে দেখো বাছুরের মাধ্যমে তোমাদের রব স্বমূর্তিতে অাবির্ভূত হয়েছে। ফলে জাতির উল্লেখ যোগ্য একটি অংশ শিরকে লিপ্ত হয়ে যায়। পূজা শুরু করে দেয়। হযরত হারুন আলাইহি সালাম তাদেরকে নিবৃত্ত করা চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, উল্টো তাঁকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। ফলে তিনি গৃহযুদ্ধের আশংকায় শক্তি প্রয়োগ থেকে বিরত থাকেন এবং মূসা আলাইহি সালাম এর জন্য অপেক্ষা করেন।তিনি নিরবতার ও ধৈর্য্যের পথ অবলম্বন করেন।

নতুন ভূমিতে শির্কের প্রসার যেন না হয় সেই চেষ্টা করতে হবে। গৃহযুদ্ধ যেন না হয় সে চেষ্টা চালাতে হবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে হবে। আইন হতে তুলে নেয়া যাবে না ।


এ দিকে আল্লাহর নবী মূসা আলাইহি সালাম তাওরাত কিতাব ( পাথরে খোদাই কৃত ফলক) নিয়ে আসেন। জাতির এহেন শিরকী কৃতকর্ম দেখে তিনি রাগে যান এবং তিনি জাতির সকল নেতৃবৃন্দকে জরুরী তলব করেন।
হযরত হারুন আলাইহি সালাম কে তাঁর মাথার চুল ধরে জিজ্ঞেস করেন, কী ভাবে এমন পরিস্থিতি হলো?
জবাবে তিনি সবটুকু বুঝিয়ে বলেন....
সামেরীকে তলব করা হলো। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে উল্টো প্রতারণার অাশ্রয় নিলো। আল্লাহর নবিকে মানসিক ভাবে উৎকোচ (ঘুষ) দেওয়ার চেষ্টা করলো। সে বললো :
লোহিত সাগর পাড়ি দেবার সময় আমি আপনার ও জিবরাইল আলাইহি সালাম এর কদম মোবারকের মাটি সংগ্রহ করি। যাতে রয়েছে জীবনী শক্তি । ফলে সেই মাটির স্পর্শে স্বর্নের বাছুরটি জেগে উঠে এবং হাম্বা হাম্বা করে অাওয়াজ করতে লাগলো ।
মূলত সে ধরনের বানোয়োট কাহিনি বলে আল্লাহর নবী আলাইহি সালাম এর পায়ের স্পর্শ মাটির মুজিজা বা অলৌকিকত্ব বুঝাতে চেয়েছিলো। মূসা আলাইহি সালাম এই ধরনের বানোয়াট গল্প শুনে তাকে ধিক্কার ও অভিশাপ দেন এবং শাস্তি নির্ধারন করেন। ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে কুষ্ঠরোগের শাস্তি দেয়া হয়।

প্রতিটি সমাজে এ ধরনের প্রতারক থাকে। যারা ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নামে মূলত সমাজে কুসংস্কার ও শির্কের প্রসার ছড়ায়। অনেক প্রতারক নেতৃত্ব স্থানীয় পীর বুজর্গদের নামে বানোয়োট কিচ্ছা কাহিনি বানায়। আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে গরুর পবিত্রতা বর্নানা করে সাধারণ হিন্দুদেরকে নানা ভাবে প্রতারিত করা হয়।

চলবে.............

পঠিত : ৭৩১ বার

মন্তব্য: ০