Alapon

জাতীয়তাবাদী আন্দোলন | মূসা (আ)

নীল নদের অববাহিকায় গড়ে উঠেছে মিশর। যার উত্তরে ভূমধ্যসাগর ও পূর্ব দিকে লোহিত সাগরের ঘেঁসে দক্ষিণে ইউথপিয় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।  তৎকালীন রাজধানীর নাম মিসিফিস। যা বর্তমানে কায়রো থেকে চৌদ্দ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।  এই নগরীতেই  হযরত মূসা আলাইহি সালাম নবুয়াতের দায়িত্ব পালন করেন।

আবহমান কাল ধরে মানব সভ্যতা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেছে। যেমন দ্বিতীয় আদম হযরত নূহ আলাইহি সালাম ইরাকের ফোরাত নদীর পূর্ব দিকে মসূল শহরে রেসালাতের দায়িত্ব পালন করেন। আবার সাইয়্যেদেনা ইব্রাহীম আলাইহি সালাম উর শহরে জন্ম নেন। যা দজলা ও ফোরাতের মধ্যেবর্তী ইরাকের দক্ষিনে উর নামক স্থানে দায়িত্ব পালন করেন। তেমনি ভাবে মিশরীয় সভ্যতা গড়ে ওঠেছিলো নীল নদের অববাহিকায়। আবহমান কাল ধরে কায়েমি স্বার্থবাদীগণ নিজেদের ক্ষমতা ও সম্পদের নেশায় আল্লাহ নেয়ামতকে (আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালিত না করা) অস্বীকার করেছে।


হযরত ইয়াকুব আলাইহি সালাম এর পুত্র হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর ভাইদের থেকে মিশরে ইসরাঈলের যে ধারা সূচনা হয়েছিলো, তাই ছিলো বনি ইসরাঈলী জাতি।

 হযরত ইউসুফ আলাইহি সালাম রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন কালে তৎকালীন বাদশা তাঁর ভাইদেরকে মিশরে অামন্ত্রন জানান। কায়রো ও দিমইয়াতের মধ্যেবর্তী স্থানে বসবাসের অনুরোধ করেন। এ এখানকার ভূমি ছিলো অনান্য এলাকার ভূমি থেকে তুলনামূলক উর্বরতা ছিলো বেশী। বনি ইসরাঈল জাতি গোষ্ঠী এখানে সমৃদ্ধির সাথে জীবন যাপন করছিলো।

 হযরত ইব্রাহিম আলাইহি সালাম থেকে হযরত ইউসুফ আলাইহি সালাম পর্যন্ত সময়টা ছিলো ইসরায়েল জাতির সোনালী যুগ। হযরত মুসা আলাইহি সালাম থেকে পরবর্তী সময় গুলো ছিলো খুবই ক্রান্তিকাল। এ সময়ে তাঁরা তাওহীদের শিক্ষা ক্রমশ ভুলে যেতে লাগলো।


কোন জাতি যখন শির্কে লিপ্ত হয় তখন তার অনিবার্য পরিণতি হলো জালিম জাতির শাসনে পতিত হওয়া । ফলে তারা আল্লাহর গোলাম হবার পরিবর্তে  ক্ষমতাশীল কিবতীদের গোলামে পরিনতি হলো। ইসরাঈলীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হারালো। কিবতিদের একচেটিয়া শাসন শুরু হলো ।

কিবতিরা ছিলো মুশরিক। তারা নানা প্রকার শিরকে লিপ্ত ছিলো। গরু পূজা সহ মন্দিরে নানা প্রকার মূর্তি পূজা করতো।

অন্যদিকে ইসরাইলি জাতি ছিলো মুসলিম। তারা হযরত ইউসুফ আলাইহি সালাম এর শরয়ীয়ত অনুযায়ী জীবন পরিচালিত করতো।  কিন্তু কালক্রমে তাদের মধ্যে মুশরিকদের জীবন পদ্ধতি ধিরে ধিরে চিন্তা চেতনায় স্হান পায়। 

তারা মনে করতো আমাদের বংশ হলো শ্রেষ্ঠ। আমাদের বংশে অসংখ্য নবী রাসূল ও বুজুর্গ এসেছে। তাই আমাদের নবিরা আমাদের কে কেয়ামতের দিন বাঁচিয়ে দিবে। সুতরাং  আমাদের জন্য গুনাহ কোন সমস্যা নয়। আমরা উন্নত বংশের লোক। তাই সাত খুন মাপ। এ ধরেনে নানা কুসংস্কার তাদেরকে অহংকারী করে তোলে।

ফিরাউন ছিলো উচ্চ বিলাসী। মিশরীয় শাসকদেরকে ফিরাউন বলা হতো। এ শব্দের অর্থ হলো সূর্যের দেবতার সন্তান। এটা উপাধি হিসেবে ব্যাবহার করতো।  দ্বিতীয় রামিসেস ফিরাউন (১২৯২-২৫ খৃষ্টপূর্ব)। সে অসীম ক্ষমতা অর্জন করতে চেয়েছিলো। যেন সকলেই তাকে প্রভু হিসেবে মেনে নেয়। শাসন কতৃত্বে কেউ যেন তার কোন কাজে বাঁধা হয়ে না দাড়ায়। এটা ছিলো মূসা আলাইহি সালাম জন্মে পূর্বের ঘটনা।

কিন্তু বনী ইসরাঈলী জাতীর শিক্ষা ব্যাবস্থা ছিলো ওহী নির্ভর। তাই তাদের ধর্মীয় শিক্ষা দরুন ফিরাউনের শাসন তান্ত্রিক কর্মকান্ডকে বিনা প্রশ্নে মেনা নেয়া ছিলো ফিরাউনকে প্রভু হিসেবে মেনে নেওয়ার শামিল। এই জাতির ঈমানদার লোকেরা প্রতিবাদ করলো । এই ধরনের প্রভুত্ব মেনে নিতে তারা অস্বীকার করলো।

ফলে ফিরাউনের সভাসদগণ বনী ইসরাঈলীদের দমনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে । কারন এই জাতি ফিরাউনকে প্রভু হিসেবে গ্রহন করে নি। অথচ ফিরাউন হলো মিশরের সর্বভৌম ক্ষমতার মালিক। অথচ সবাই মেনে নিলেও বনী ইসরাঈলের অনেকে তখনো মেনে নেয় নি। ফলে ফিরাউন তাদেরকে রাজনৈতিক শত্রু হিসেবে অবহিত করলো । ফলে জনগণের সকল বিষয়াদিতে দ্বীনে ইসলামের সকল নিয়ম নীতি অনুসরণ করা নিষিদ্ধ করা হয়।নির্দেশ দেয়া হয়  ফেরাউনের অাইন- কানুনকে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না।  স্বৈরাচারীরা সব সময় ক্ষমতা হারানোর অাতঙ্কে থাকে। ফিরাউনের ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম হয়নি।

 কিবতিদের(ফিরাউন) ক্ষমতার হরানোর আতংকে ছিলো। কারন ইতোপূর্বে ইসরায়েলী জাতি ক্ষমতাসীন ছিলো। তাদের পুরুষরা ছিলো শক্তিশালি ও সুঠামদেহী । যুদ্ধবিদ্যায় ছিলো পারদর্শী। তারা আল্লাহর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে ।
 তাই ফিরাউন  ঈসরাঈলীদেকে তাদের প্রতিপক্ষ ভাবতে শুরু করে। এরই ফলস্বরূপ  ফেরাউন তাদেরকে নির্মূলের নীতি গ্রহণ করে।
এবং দমনের নানা অকৌশল হাতে নেয়।

[ আল্লাহ বলেন-আর (স্মরণ কর) সে সময়ের কথা, যখন আমি তোমাদিগকে মুক্তিদান করেছি ফেরআউনের লোকদের কবল থেকে, যারা তোমাদিগকে কঠিন শাস্তি দান করত; তোমাদের পুত্রসন্তানদেরকে জবাই করত এবং তোমাদের স্ত্রীদিগকে বাচিয়ে রাখত। ]
 
প্রথমত
সরকারি ভাবে কিবতিদের মাঝে উগ্র জাতীয়তাবাদী চিন্তার প্রসার ছড়িয়ে দেয়া হয় । তারা নিজেদেরকে মিশরীয় বলতো এবং ইসরাইলী ও মুসলিম মিশরীয়দেরকে বিদেশী আখ্যায়িত করতে শুরু করে। তাদের নেতা ফেরাউন ইসরায়েলীদের দমনে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
 
চলবে.............

পঠিত : ১১৮৪ বার

মন্তব্য: ০