Alapon

বনী ইসরাঈল ও বাছুরের ফিতনা : যে ভাবে দূর হলো (দ্বিতীয় পর্ব)

তৎকালীন সময়ে মিশর ও ফিলিস্তিনে গরু ও ষাঁড় পূজার মহা ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে। শাসক গোষ্ঠী ও অভিজাত শ্রেণী থেকে শুরু করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সকলে ছোট আকৃতির বিশেষ বাছুরের পূজা করতো। তারা গাভীকে শ্রেষ্ঠ ও পবিত্র মনে করতো।


ভারতীয় উপমহাদেশে এই ধরনের গরু পূজা বেশ লক্ষনীয়। গরুকে গো-মাতা বলা হয়। এখানে বিভিন্ন রাজ্যে গরু যবেহ করা নিষিদ্ধ। যদিও ভারত অন্যতম গরুর গোস্ত রফতানিকারক রাষ্ট্র। অথচ তারা নিজ জনগনের জন্য একটি হালল পশুকে প্রভু বানিয়ে পূজা করছে এবং এর মাংস রপ্তানি করছে । এটাই হলো বকধার্মিকতা।
আধুনিক কালে আমাদের মুসলিম সমাজের হোটেল গুলোতে "নো বিফ" স্লোগান কে জনপ্রিয় করে তোলা হচ্ছে। অভিজাত এলাকা গুলোতে ছোট জাতের নেপালি বা ভুটানী গরুকে ঘরের মধ্যে খাঁচায় বন্দি করে পূজা ও বিনোদনের রেওয়াজ চালু হচ্ছে। যা খুবই দুঃখ জনক।


ইতোপূর্বে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বনি ইসরাঈলের সামেরী নির্মিত স্বর্নের তৈরী বাছুরকে পূজা করার জন্য শাস্তি দিয়েছিলেন এবং তুর পাহাড়ে নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ আল্লাহর নিকট পুনরায় গো-পূজায় না করার অঙ্গিকার করে।

তবুও বনি ইসরাঈলের মাঝে বিজাতীয় সাংস্কৃতিক প্রভাব ছিলো প্রকট। তাদের হ্নদয় থেকে সম্পূর্ণ রুপে বিজাতীয় সাংস্কৃতিক গোলামী থেকে মুক্ত হয়ে একনিষ্ঠ আল্লাহর অনুগত্যের সহীহ জজবা পয়দা হয় নাই। অথচ তাওরাতের নির্দেশ অনুযায়ী তাদেরকে ফিলিস্তিন একটি ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের জন্য বলা হয়েছে। এই যদি হয় তাদের ঈমানের অবস্থা, তা হলে কী করে তারা ফিলিস্তিনের জালিমদের উত্খাত করে একটি ইসলামী শরিয়া ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করবে?

এধনের রোগ যেন উম্মতে মোহাম্মদী অন্তরে যেন না থাকে, সে জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে তাদের কৃতকর্ম তুলে ধরেছেন।
বনি ইসরাঈলের একজন লোক তাঁর চাচাতো বোনকে বিয়ে করার জন্য তার আপন চাচা বাঁধা হয়ে দাঁড়ানোর কারনে হত্যা করে বসে।

নিহত চাচার লাশ অন্যর বাড়িতে রেখে আসে। সকালে হত্যাকারী নিরাপরাধ ব্যাক্তিকে তাঁর চাচা হত্যার জন্য দায়ী করে । এ দিকে হত্যাকরি ও নিরাপদ ব্যাক্তি উভয়ে জাতির নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের নিকট সঠিক বিচার দাবি করে। নেতারা প্রকৃত অপরাধীকে নির্নয় করতে ব্যর্থ হয়।

নেতারা হযরত মূসা আলাইহি সালাম এর নিকট এসে এর ফয়সালা চায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদেরকে একটি গাভী যবেহ করে তাঁর গোস্তো মৃত্যু ব্যাক্তির গায়ে ছোঁয়াতে বলেন, যাতে মৃত্যু ব্যাক্তি সীমিত সময়ের জন্য জীবিত হয়ে প্রকৃত হত্যাকারীর বিষয়ে তথ্য দিতে পারে।

এধরনের ওহী ভিত্তিক সমাধানের কথা শুনে জাতির নেতারা নবিকে বললো, আপনি কী আমাদের সাথে ঠাট্টা করছেন?
নবী আলাইহি সালাম বললেন,আল্লাহ বলেছেন : আমি মূর্খদের মতো কথা বলা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই।
নেতারা বললো : ও আচ্ছা তা হলে তোমার রবকে বলো কী ধরনের গাভী হতে হবে?
নবী আলাইহি সালাম বললেন,আল্লাহ বলেছেন : গাভীটি অবশ্যই বৃদ্ধাও নয়, বাছুরও নয়, বরং মাঝারি বয়সের হতে হবে।
নেতারা বললো : তোমার রবকে জিজ্ঞেস করো যে গাভীটির রং কেমন হবে?
নবী আলাইহি সালাম বললেন,আল্লাহ বলেছেন : এটির রং হতে হবে উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের। যেন মানুষের মন দেখে অানন্দিত হয়।
নেতারা আবার নতুন বায়না ধরলো। তারা বললো যে, তোমরা রব কী ধরনের গাড়ী চান?
নবী আলাইহি সালাম বললেন যে, আল্লাহ বলেছেন : এটা এমন গাভী হতে হবে যাতে কোন কাজে নিযুক্ত করা হয় নি, জমি বা ক্ষেতে কাজে লাগানো হয় নি,পানি সেচের কাজে লাগানো হয় নি এমন সুস্থ, সবল ও নিখুঁত হবে।
নেতারা বললো : এবার তুমি সঠিক সন্ধান দিয়েছো।
মূলত বনী ইসরাঈলের নেতৃত্ব সময় ক্ষেপন করেছিলো। যাতে তাদের অন্তরে সৃষ্ট প্রভু তুল্য গাভীকে হত্যা করা না হয়।


একটি বিষয় একটু খেয়াল করে দেখুন যে, এখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদেরকে শুধু বলেছিলেন যে গরু যবেহ করতে। এটা ছিলো বিশ্ব সাম্রাজ্যের অধিপতি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে একটি সুস্পষ্ট সমাধান। অথচ তাঁরা নানা ভাবে আল্লাহর অনুগত্য করতে বিলম্ব করছিল।


আল্লাহ হজরত ইব্রাহিম আলাইহি সালামকে নিজ সন্তান কে কুরবানি করার নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি তা নির্দ্বিধায় হুকুম পালন করেছেন। বলা হয়েছে মা হাজেরা ও দুগ্ধপোষ্য শিশুকে মরুভূমিতে রেখে আসতে, তিনি তা পালন করেছেন। তো এ থেকে আমাদের জন্য মেসেজ মূলত কী?

অনেকে করবানীকে নানা ভাবে বিশ্লেষণ করেন। কেউ বলেন মনে পশুকে কোরবানি দেয়া শিক্ষা, কেউ আবার একটু অগ্রসর হয়ে বলেন এত টাকা দিয়ে কোরবানি না করে গরীব দুঃখীদের মাঝে টাকা বিলিয়ে দিলেই হবে ইত্যাদি নানা বচন কতিপয় মহলে চাউর রয়েছে।
মূলত আল্লাহ রাব্বুল আলামীন চান বান্দ আমার নিশর্ত অনুগত্য করে কী না...! এখানে আনুগত্যই হলো মূল শিক্ষ।আল্লাহর নির্দেশ আপনার বুঝে আসুক আর না আসুক, তিনি যে ভাবে পালন করতে বলেছেন সে ভাবে পালন করাই কুরবানির শিক্ষা।
তাওরাতের নির্দেশ অনুযায়ী যে জাতিকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার দায়িত্ব দিয়েছেন সে জাতির মধ্যে আল্লাহর নির্দেশের ব্যাপারে এ ধরনের ব্যাধি দূর করা আবশ্যক ছিলো।

দ্বিতীয়ত গরু পূজার প্রতি তাদের অন্তরে যেন বিন্দু পরিমান কোন ব্যাধি মাথাচাড়া দিয়ে না ওঠে । কারন আল্লাহ রাব্বুল অচিরেই বনী ইসরাঈলীদের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনে বিজয় দান করবেন।

অবশেষে তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে আকর্ষনীয় গাভী অর্থাৎ তাদের সময়ে যে গাভীকে পূজা করা হতো এমন গাভীকে যবেহ করা হলো। মৃত্যু ব্যাক্তি জীবিত হয়ে হত্যাকারীর নাম বলে দিয়েছিলো ।

এর ঘটনার মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের মধ্যে গাভীর সম্পর্কে তাদের অন্তরে যে কুসংস্কার ছিলো, আল্লাহর এই মহান নিদর্শন তাদের মন মগজের ভিত্তি মূলে সত্যের চেরাগ জ্বালিয়ে দেয়া হলো। ফলে এই কুসংস্কার দূর হয়ে গেলো।
আল্লাহর অসীম কুদত প্রকাশিত হলো। তাঁরা মহা ক্ষমতাবান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশ যেন নিশর্ত ভাবে পালন করার অনুভূতি জাগ্রত থাকে।
এ ঘটনার মাধ্যামে প্রকৃত হত্যাকরী বের হয়ে এসেছে। মাজলুম জুলুমকারী থেকে মুক্তি পেয়েছে।

অতিরিক্ত বা অবান্তর প্রশ্ন সহজ বিষকে জটিল করে তোলে। বিচার দীর্ঘায়িত করা এটা ইসরাঈলীদের স্বভাব।

আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদেরকে গরু কুরবানীর অধিকারের জন্য আমাদের পূর্ব পুরুষগন জিহাদ করেছেন।
খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি রহ রাজা পৃথীরাজের সাথে ও হযরত শাহজালাল রহ রাজা গৌর গোবিন্দের সাথে যুদ্ধ করে এই অধিকার আদায় করেছেন।

সুতরাং আসুন নিশর্ত ভাবে আল্লাহ ও রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুগত্য করি। "নো বীফ " কে বয়কট করি "অনলি বীফ" কে প্রোমোট করি

পঠিত : ৮৬৯ বার

মন্তব্য: ০