Alapon

||এখানে কি কেউ নেই....||



কোনো ব্যক্তি ততোক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতোক্ষণ না সে তাঁর জীবনের চেয়ে, পৃথিবীর সবকিছুর চেয়ে আল্লাহ রাসুলকে বেশি ভালো না বাসবে! সেই ভালোবাসার চূড়ান্ত নমুনা দেখিয়েছেন তাঁরই প্রিয় সাহাবীগণ!

চলুন দেখি তা হলে কিছু সাহাবিদের প্রবল ভালোবাসার সেরা নমুনা। কীভাবে তাঁরা আল্লাহর রাসুলকে (সঃ) ভালোবেসে জীবনের মায়াটাকেও প্রত্যখ্যান করেছেন।

১. তালহা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শরীরে একের পর এক তীর বিদ্ধ হচ্ছে। ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে তাঁর দেহের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ!শুধুই আল্লাহর রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হেফাজতের জন্য! শুধুই আল্লাহর রাসুল! নিজের মায়া, জানের মায়া, পরিবার পরিজন -সকল মায়ার বাঁধনকে তিনি সেসময় ছিন্ন করে আল্লাহর রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হিফাজতের জন্য উৎসর্গ করেছেন নিজেকে!

ওহুদের ময়দানে রাসূল সা. আহত হলেন, তাঁর দান্দান মুবারক শহীদ হলো, তিনি রক্ত রঞ্জিত হয়ে পড়লেন। রক্তের স্রোতধারা বইতে লাগলো সারা দেহ থেকে। এ অবস্থায় তালহা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহ একাকী একবার মুশরিকদের ওপর দোর্দণ্ডপ্রতাপে আক্রমণ চালিয়ে তাদেরকে একটু দূরে তাড়িয়ে দেন, আবার রাসূল সল্লাল্লাহু অা'লাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে ছুটে এসে তাকে কাঁধে করে পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে থাকেন। এক স্থানে প্রিয়নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু অা'লাইহি ওয়াসাল্লামকে রেখে আবার নতুন করে হামলা চালান। এভাবে সেদিন তিনি মুশরিকদের প্রতিহত করে আল্লাহর রাসুলকে হেফাজত করেন।

একপর্যায়ে তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় একটি গর্তে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকেন। তাঁর একটি হাত দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন প্রায় এবং সারা দেহে তরবারী ও তীর-বর্শার সত্তরটির বেশি আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে আছে!

আল্লাহর নবী (সঃ) এর অজ্ঞান-আহত অবস্থায়ও তাঁর জন্য হাহাকার আর আফসোস প্রকাশ করেছেন। আবু বকর ও আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ ( রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু অা'লাইহি ওয়াসাল্লাম নিকট এসে তাঁকে সেবার জন্য এগিয়ে গেলে তিনি বললেনঃ তোমরা ‘আমাকে ছাড়ো, তোমাদের বন্ধু তালহাকে দেখো, তালহাকে দেখো’। পরবর্তীকালে রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম .তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন; যদি কেউ কোন মৃত ব্যক্তিকে পৃথিবীতে হেঁটে বেড়াতে দেখে আনন্দ পেতে চায়, সে যেন তালহা ইবন উবাইদুল্লাহকে দেখে।

২. উহুদ যুদ্ধের সেই সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে
রাসূলেকারীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন মুশরিক তীরন্দাযরা তাদের একমাত্র লক্ষ্য বানিয়ে নিলো। তাঁকেই লক্ষ্য করে তারা তীর বৃষ্টি ছুড়ছিলো। আল্লাহর নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হেফাজতের জন্য কাতাদা বিন নু’মান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে গেলেন। তাঁর চোখে কাফিরদের নিক্ষিপ্ত তীর লাগলে চোখটি কোটর থেকে ছিটকে মণিটি বের হয়ে তাঁর গণ্ডদেশ ওপর ঝুলতে থাকে। কারো কারো মতে তা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, আর তিনি তা হাত দিয়ে ধরে রাখেন!

৩.
খুবাইব ইবনুল আদী আল-আনসারী। বর্বর কাফির কুরাইশরা তাঁর দেহ থকে গোশত কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলেছিল। তারপর তাঁকে গাছে ঝুলিয়ে জানতে চেয়েছিলো তুমি কি এটা পছন্দ করবে যে, তোমার এই স্থানে মুহাম্মদকে আনা হোক? তিনি দৃপ্ত স্বরে বলেছিলেন: আমি আমার পরিবার-পরিজন ও সন্তানদের মধ্যে নিরাপদে অবস্থান করি আর আমার প্রিয়নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু অা'লাইহি ওয়াসাল্লামের এই অবস্থা আমি কক্ষণো পছন্দ করিনা।

৪. উহুদের বিপর্যয়কালীন মুষ্টিমেয় যে সৈনিকগণ আল্লাহর নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘিরে নিজের দেহকে ঢাল বানিয়ে প্রতিরক্ষাকরী হিশেবে অটল অবিচল হয়ে দাঁড়ায় তাঁদের মধ্যে আবু দুজানা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু অন্যতম। তিনি নিজের পিঠ পেতে দিয়ে রাসুলসাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিঠ রক্ষা করেছিলেন। তিনি তাঁর পুরো দেহটিই ঢাল বানিয়ে নেন শুধু আল্লাহর রাসুলের জীবন হেফাজতের জন্য!

নবিজী (সঃ) প্রতি শত্রুর নিক্ষিপ্ত তীর-বর্শার আঘাতে তাঁর পিঠ ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলো! তবুও তিনি রসুলল্লাহ’কে (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছেড়ে দিলেন না।

যুদ্ধের একটা পর্যায় পৌত্তলিক আবদুল্লাহ ইবন হুমাইদ, রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যার উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসে। অসহ্য এই পরিবেশ তিনি মেনে নিতে পারেন নি। আবু দুজানা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাকে তরবারি দ্বারা বীরবিক্রমে আঘাত হেনে বলে ওঠেন - নে, আমি ইবন খারাশা। সেই আঘাতে নরাধম মুশরিকটি ধরাশায়ী হয়ে পড়ে, আর সে জাহান্নামের আগাছা জাহান্নামেই চিরকালের জন্য জ্বলতে চলে যায়!

এভাবেই আল্লাহর রাসুলের জীবন, শান-মান নিজেদের সর্বোচ্ছ সম্পদ জীবন দিয়ে হেফাজত করেছেন তাঁরা। তীরের পর তীরের বৃষ্টি, তলোয়ারের আঘাতের পর আঘাত নিজেদের বুকে নিয়েছেন, দেহে নিয়েছেন।

আজ আমাদের সামনে আল্লাহর রাসুল জীবন্ত নেই। তাঁর রেখে যাওয়া জীবন্ত বিধান আল-ইসলামের ওপর, তাঁর পূত-পবিত্র জীবনের ওপর আঘাতের পর আঘাত করতেছে কাফির-মুশরিক-ইসলাম বিদ্বেষীরা! আমরা আজো দিব্যি বেঁচে আছি! সয়ে আছি!


বিশ্বমুসলিমদের কপাল আজ এতোই খারাপ যে, একজন তালহা রাদ্বিয়াল্লাহ, একজন আবু দুজানা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর দেখা মেলছে না খোঁজ পাচ্ছেনা,
মুসলিম জাতি।

তারিক বিন জিয়াদ মুসা বিন নুমায়ের সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর মতো কোনো বীর বাহাদুরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ফ্রান্সের মতো এরকম জঘন্যতম একটা রাষ্ট্রের শাতিমে রাসুলদের উচিত শিক্ষা দিয়ে শায়েস্তা করার জন্যে। আমি মন খারাপের সন্ধিক্ষণে বসে বসে ভাবি- যেই রাষ্ট্রের আয়োজনে বাকস্বাধীনতার নামে আমার রাসুলের পবিত্র জীবনের অবমাননা হচ্ছে তার জন্যে সেই জঘন্য রাষ্ট্রটিকে টুকরো টুকরো পুনরায় আল্লাহর নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনিত দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত করে ফেলার মতো দ্বীনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবিদ্ধ কোনো আশেকে রাসুল মর্দে মুজাহিদ কি তাবৎ দুনিয়ায় নেই!

রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু অা'লাইহি ওয়াসাল্লামের ইজ্জতের ওপর হামলা,সেই বেদনায় ভারাক্রান্ত আজ আমাদের মন মগজ। অনলাইন প্রতিবাদ ছাড়া আমাদের মাঝে কোনো কিছু করার শক্তি, উপায়-উপাদান কিচ্ছু নেই! আমরা কেউ কার্যকরী কিছুই করতে পারছি না। আমিও না! আমাদের নেতৃবৃন্দের মাঝেও কেউ পারছে না কিছু করতে!

চুপচাপ অশ্রুজলে সিক্ত হওয়া ছাড়া কোনো গতিও আমাদের সামনে নেই। কলিজাটা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় আফসোস, ক্ষোভ আর হতাশার অনলে পুড়ে পুড়ে.….

বিশ্বাসী-বিপ্লবী কবি মতিউর রহমান মল্লিকের রচিত একটা গান-কবিতা মিলোডি মাস্টার সাইফুল্লাহ মানসুরের কন্ঠে শুনি। তাঁর কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে হেঁড়ে গলায় গেয় ওঠি –

এখানে কি কেউ নেই আল্লাহর রঙ্গে
জীবনকে রাঙাবার
এখানে কি কেউ নেই আল্লাহর রাহে
জীবনকে বিলাবার!

এখানে কি নেই খালিদের মতো কেউ
এখানে কি নেই সালাদ্দীন সম কেউ
এখানে কি নেই তারিকের মতো কেউ
এই দুর্দিনে অভিযান চালাবার।.....

এখানে কি নেই খাব্বাবের মতো কেউ
এখানে কি নেই হামজার মতো কেউ?
এখানে কি কেউ নেই?
এখানে কি নেই মালেকের মতো কেউ?

এখানে কি কেউ নেই আল্লাহর রঙ্গে
জীবনকে রাঙ্গাবার!
এখানে কি কেউ নেই.....

||এখানে কি কেউ নেই.....||
~ রেদওয়ান রাওয়াহা

পঠিত : ৫৩৩ বার

মন্তব্য: ০