Alapon

স্মৃতিতে ২৮শে অক্টোবর!!

২৮ অক্টোবর, ২০০৬.........

আজকের এই স্মৃতিকথা বিগত ১৪ বছর ধরে বয়ে বেড়ানো এক ভারাক্রান্ত মনের কিছু উগরে দেয়া ভাবের প্রকাশ। তখন আমার বয়স ছয় ছুঁইছুঁই। এই পৃথিবীর কোনরূপ নিষ্ঠুরতা, পৈশাচিকতার দেখা পায়নি এই ছোট মস্তিষ্ক। নিষ্পাপ শিশুমন মুগ্ধ হতো কেবল জগতের সৌন্দর্যে। শিশুকালের তেমন কোন স্মৃতিই আমার খুব একটা মনে পড়ে না। কিন্তু এই স্মৃতিকাতর দিন ও এই ঘটনা কে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া সব স্মৃতি আমাকে ভীষণ তাড়া করে বেড়ায়। এখনো চোখ বুজলেই আমার চোখে ভেসে ওঠে শহীদ মাসুম ভাইয়ের সেই কাফনে জড়ানো নিষ্পাপ চেহারা। শহীদ মুজাহিদের সেই কফিনের ছবি, যেখানে তাকে ঠিক জান্নাতের মেহমানের মতোই মনে হচ্ছিলো। যেনো তিনি সেজেগুজে অপেক্ষা করছেন কখন তাঁর রবের সাথে মিলিত হবেন। স্মৃতিগুলো ঠিক যেমন বেদনায় বুক ভারি করে, ঠিক তেমনিই অনুপ্রাণিত করে। আল্লাহর দ্বীন কায়েমে ত্যাগের মহিমায় তারা আমাদের পথিকৃৎ। দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন, নিজের জীবনকেও আল্লাহর পথে বিলিয়ে দিতে তারা পিছপা হন নি।

সেই ভয়াবহ দিন।
দুপুর বেলা, মায়ের সাথে এক আন্টির বাসায় গিয়েছিলাম। টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করেছিলো পল্টন মাঠের সংঘর্ষ। ছোট এ দু'চোখ কেবল দেখেছিলো ধাওয়া-পালটা ধাওয়া। গোলাগুলি, টিয়ার গ্যাসের ধোঁয়া। সংঘর্ষ তীব্রতর হলে আমাকে টিভির সামনে থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। নব্যহিন্দার নির্দেশে সেদিন লগি-বৈঠা নিয়ে ছুটে গিয়েছিলো হায়েনার দল! ঠিক যেমন কুকুরেরা হিংস্রতা নিয়ে ছুটে যায় শিকারের দিকে, জালিমেরা এমন ভাবে হামলে পড়েছিলো আমাদের ভাইয়েদের উপর। কি দোষ ছিলো তাদের? অপরাধ একটা ই। এ জমিনে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করার তীব্র বাসনা নিয়ে তারা এগিয়ে যেতে চান। তাই তাদের রুখে দেবার জন্য এই নৃশংস হামলা!

শহীদ শিপন ভাই! যেই পবিত্র মুখ দিয়ে তিনি কালামে পাকের তিলাওয়াত করতেন, সেই দন্তপাটি খুঁচিয়ে আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করেছে অমানুষেরা! শহীদ জসিম ভাইয়ের মুখে উপর্যুপরি বাঁশের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করেছে। অমানুষের দল, লাশের উপর করেছে নৃত্য! শহীদের লাশের মালিকানা নিয়ে সাজিয়েছে নাটক! আরে, হায়েনার দল! আর কতো নাফরমানি করলে পরে তোদের শান্তি হবে বল??!! প্রাপ্য কড়ায়গণ্ডায় আদায় হবে তোদের ইন শা আল্লাহ, আল্লাহর আদালতে। বর্বরতার সেই ই ছিলো শুরু, যা চলছে আজ অবধি!!

শাহাদাত পরবর্তী সময়ে মায়ের সাথে শহীদ মাসুম, শহীদ শিপনের পরিবারকে স্বান্তনা জানাতে গিয়ে ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা দেখেছিলাম আমি! আমার মায়েদের চোখের মণি ছেলেদের হারানোর সেই কষ্ট, চোখে সহ্য করা দায় ছিলো। কিন্তু তবু তারা ছিলেন অটল, স্থির। আল্লাহর কাছেই তারা জালিমদের বিচার চেয়েছেন বারংবার। আল্লাহর জন্য যে ত্যাগ তারা করেছেন, আমাদের জন্য তা চিরকাল অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। শহীদ ভাইয়ের আম্মা দেখিয়েছিলেন, ভাইয়ের নিজ হাতে সোফার ফোমে লিখা, মুষ্ঠিবদ্ধ হাত, তার নীচে লিখা- “শাহাদাত দেবে মুক্তি”!! শাহাদাত ই ছিলো তাদের একমাত্র তামান্না। আসলে ই, এই সৌভাগ্য ক'জনের হয়! আল্লাহকে ভালোবেসে, তার পথে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করবার??!!!
২৮শে অক্টোবর! প্রতিবছর ঘুরে দিন টি এসেছে আবার! এ দিন আমাদের জন্য রিমাইন্ডার! জালিম শাসকের কাছে মাথা নত না করার হুশিয়ারী! আল্লাহর জন্য নিজের জীবন ত্যাগ করতে প্রস্তুত কিনা, সেই মাপকাঠিতে নিজেকে বিচার করার রিমাইন্ডার!
স্মৃতিকথা লিখতে গিয়ে বেদনায় বুক ভারী হয়ে আসছে।
আল্লাহ আমাদেরকে কবুল করুন।
আমীন!


[স্মৃতিতে ২৮শে অক্টোবর]
~ সাবিহা সাবা

পঠিত : ৫১১ বার

মন্তব্য: ০