Alapon

প্রাণের চেয়েও প্রিয় তিনি....




আচ্ছা, তোমরা যারা ইসলাম বিদ্বেষী, তোমরা কি জানো আমরা কোন বিষয় নিয়ে সবচে' বেশি কষ্ট পাই? কোন আঘাত পেলে আমাদের হৃদয় হতে রক্ত ঝরে?

জানো, পৃথিবীর সবকিছু হারালেও অতো কষ্ট পাই না আমরা। কোনো আঘাতে-অপঘাতে এতো ব্যথার সানাই আমাদের হৃদয়ে বাজে না। শতো-সহস্র-নিযুত আঘাত আমাদের এতোটা কষ্ট দেয় না, এতোটা ক্লান্ত করে না, এতোটা ক্ষত বিক্ষত করে না হৃদয়ের অলিগলিকে; যতোটা কষ্ট আমরা রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মানহানী করলে পাই। তাঁর অপমান করলে পাই। আমরা তো আমাদের জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসি আমাদের নবীজিকে (সঃ)! মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) - তো আমাদের কাছে ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ একটা নাম, ভালোবাসার সেরা একটা অনুভূতি পাই- মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ নামটির মাঝে। আমরা সব হারানোর যন্ত্রণা সহ্য করতে পারি, কিন্তু রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননা সহ্য করতে পারি না।


একটা বিষয় তো আমরা সকলেই জানি, তোমরাও জানো, আমরা-তোমরা নরমাল সম্পর্কেও তো দেখি, মানুষ ক্যামন ছ্যাঁকা খেয়ে বাঁকা হয়ে পড়ে তাদের ক্ষণিকের প্রিয় মানুষের স্মৃতি আর প্রীতির অনুভূতিটা হারিয়ে ফেললে। সেই মানুষের অপমান অবমাননায়ও কতোটা কষ্ট পায়, কতোটা আঘাত পায় হৃদয়ে। কতোটা যন্ত্রণায় দিন-রাত গুজরান হয়! কিন্তু আমরা তো আমাদের জীবনের সবচেয়ে বেশি ভালো একজনকেই বাসি। একজনকে ঘিরেই আমাদের প্রেমের ফল্গুধারা বয়। একজন মানুষকে ঘিরেই আমাদের ভালোবাসার চাষাবাদ হয় হৃদয়ে। কারণ, তিনি আমাদের সত্য-সততার শিক্ষা দিয়েছেন। আলো- আঁধিয়ার মাঝে স্পষ্ট রেখা ফুটিয়ে তুলেছেন। কোনটা আলো কোনটা আঁধার তাঁর থেকেই বুঝতে শিখেছি। দয়া-বদান্যতা-উদারতার সুমহান শিক্ষা তাঁর থেকেই পেয়েছি। আদল ইনসাফ আর ইনকিলাব তো তিনিই আমাদের শিখিয়েছেন। আমরা হয়তো তাঁর সেই সকল শিক্ষা ধারণ করতে পারি না। সব আদেশ নির্দেশ পালন করতে সক্ষম হচ্ছি না- এটা আমাদের সুস্পষ্ট দুর্বলতা, এটা আমাদের অপারগতা, এটা আমাদের ভুল-অন্যায়,কিন্তু আমরা আমাদের সব দুর্বলতার পরেও আল্লাহর নবীকে, তাঁর প্রেরিত কিতাবকে-তাঁকে আমরা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।


পৃথিবীতে তো আমরা সকলেই আমাদের মা-বাবাকেই বেশি ভালোবাসি। প্রতিটা সন্তানের কাছে তাঁর মা হলো সবচেয়ে বেশি প্রিয়জন। কারো কারো ক্ষেত্রে বাবাও হতে পারে। সেই মা অ অথবা বাবাকেও যদি অপমান করা হয়, তাঁর সম্মানের ওপর আঘাত করা হয়, তাঁর ইজ্জত নিয়ে আজেবাজে কথা কেউ বলে আমরা তো তখন তা কেউই সহ্য করতে পারি না। পারি না মেনে নিতে। আমার মা-কে নিয়ে, আমার জন্মদাতা পিতাকে নিয়ে যখন বিদ্রুপ করা হয় তাচ্ছিল্য করে বা করার চেষ্টা করা হয় তখন আমাদের তোমাদের সকলরেই কি সেই তাচ্ছিল্যকারীর অপমানকারীর অপবাদ দানকারীর মগজ ছিন্নভিন্ন করে দিতে ইচ্ছে হয় না?

কেউ যদি সত্যিকারার্থে মা-বাবার প্রতি টান থাকে, ভালোবাসা থাকে তা হলে সে এই বিষয়টা কষ্মিণকালেও মেনে নিতে পারে না। তাঁর দ্বারা তা মেনে নেয়া নিতান্তই কষ্টসাধ্য একটা বিষয়!


এখন বলো, তোমরা যারা আমাদের মা-বাবার চেয়েও প্রিয় মানুষ, আমাদের প্রাণাধিক প্রিয়জন মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু অা'লাইহি ওয়াসাল্লামকে কটুক্তি করো, অপমান করো, তখন আমাদের অবস্থা ক্যামন হয়? বিশ্বাস করো আমাদের কলিজাটা ওলট-পালট হয়ে যায়। বুকটা ছিঁড়ে বের হয়ে যাবার উপক্রম হয়। হৃদয় খণ্ড খণ্ড হয়ে যায়। টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে। আমাদের কলিজাটা তোমরা চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে নিতে চাইলে নিতে পারো। প্রয়োজন হলে খেয়ে নাও। তবুও আমাদের কলিজার চেয়ে প্রিয় নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে আজেবাজে আচরণ আর কথা বলো না। আমাদের নবীকে আমরা কতোটা ভালোবাসি তোমরা তা কখখোনোই বুঝবে না। তোমাদের আমরা বোঝাতে পারি না, এটা আমাদের অক্ষমতা। ব্যর্থতা। অথবা তোমরা বুঝেশুনেও আমাদের হৃদয়ে আঘাত করে রক্ত ঝরাতে চাও, রক্ত ঝরাও।


তোমরা আমাদের লাশের পর লাশ ফেলে দাও, আমাদের প্রাণের পর প্রাণ কেড়ে নাও -তবুও এতো কষ্ট আমাদের হয় না, যতোটা কষ্ট হয় আমাদের দ্বীনকে, ইসলামকে, আমাদের রব্বুল আলামীনকে, তাঁর প্রেরিত আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে কটুক্তি করলে।


এই দ্বীনের জন্য, দ্বীনের নবীর জন্য আমরা কতো শতো-সহস্র-নিযুতবার বুকের তপ্ত রক্ত ঢেলে দিয়ে পিচঢালা রাস্তাটাকে করেছি রঙিন। আমরাই তপ্ত লহুতে শূলবিদ্ধ হয়েছি আমাদের নবীর শান-মান রক্ষার জন্য। আমরা আমাদের প্রাণেরও পরোয়া করিনি,করিও না। কারণ তিনি তো আমাদের প্রাণের চেয়েও প্রিয়। আমরা তাঁর জন্য, তাঁর ভালোবাসার কাছে জগতের সব এবং নিজের জীবনকেও তুচ্ছ ভাবি। তাঁর সেই ভালোবাসার কাছে প্রাণের মায়াকে পকেটে রাখি। মাজলুম আলিমে দ্বীন, বাংলাদেশের তাফসীর মাহফিল জগতের কিংবদন্তি মহানায়ক আল্লামা সাঈদি (হাফিজাহুল্লাহ) এক বক্তৃতায় কোনো এক প্রসঙ্গে বলেছেন- আমাদের জানটা বুক পকেটে রেখে দিয়েছি, আল্লাহ যখনই চাইবেন তখনই দিয়ে দেবো! এটা আসোলেই সত্য যে, আমাদের প্রাণের নবীর সম্মানে যখনই আঘাত এসেছে আমরা তা হেফাজত করতে, তাঁর ভালোবাসায় ততোবারই বুক পকেট থেকে প্রাণটা বের করে আল্লাহকে দিয়ে দিতে প্রস্তুত হয়ে যাই। দিয়েও দিই। বিশ্বের সামনে তার অসংখ্য জ্বলজ্বলে সব জলন্ত নযীর রয়েছে আজো বিদ্যমান! অথচ তোমরা আমাদের সেই আবেগের জায়গায় হাত দাও বারংবার! আমাদের অনুভূতিকে ক্ষত-বিক্ষত করে তোলো। আর এরপর প্রতিবাদ যখনই করি, তখন তোমরা আমাদের উগ্রবাদী ট্যাগ দিয়ে তৈরি করো আরেক বিভৎস রকমের চিত্র!

আমার আবেগ-অনুভূতি, আমরা শ্রদ্ধা ভালোবাসার জায়গায় আঘাত করা যদি তোমাদের বাকস্বাধীনতা হয়, ব্যক্তি স্বাধীনতা হয় -তা হলে তোমার দেহে বা প্রাণে আঘাত করাটা কি আমার ব্যক্তি স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে না? তোমরা তো আমাদের কথিত উদারতার সবক দিয়ে দিয়ে ক্লান্ত, তা হলে সেই উদারতার প্রতীক হয়ে তোমাদেরকেও চিন্তা করার অনুরোধ রইলো যে, তোমাদের ব্যক্তি স্বাধীনতার শ্লোগান তোলে যদি আমার নবীকে (সঃ) নিয়ে ব্যঙ্গ করতে পারো, সেই উদারতার সূত্র ধরে আমি কি তোমার সেই হাতটা ভেঙে দিতে পারি না? আমার অনুভূতিকে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়া, আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষকে নিয়ে কটুক্তি করা সেই প্রাণটাকে কি আমরা আমাদের ব্যক্তি স্বাধীনতার শ্লোগান তোলে জাহান্নামের আগাছা জাহান্নামে জ্বলতে পাঠিয়ে দেয়ার বন্দোবস্ত করাটা কি আমাদের ( কোনো ব্যক্তি যদি এরকম চিন্তা বা কর্ম করে) ব্যক্তিস্বাধীনতার মধ্যে পড়ে না? মুক্তমনে বিবেচনার অনুরোধ রইলো....


||প্রাণের চেয়েও প্রিয় তিনি..||
~রেদওয়ান রাওয়াহা

পঠিত : ১২৬৬ বার

মন্তব্য: ০