Alapon

আমরা সব শিক্ষিত চোর!

অনেককাল আগের কথা! বাংলাদেশি এক ছেলে কলকাতা মেডিকেল কলেজে পড়তে গেল। ছেলেটির অর্থনৈতিক অবস্থা বিশেষ ভালো ছিল না। তাই সে কলকাতার এক বাড়িতে জায়গীর থাকতো। আর সেই বাড়ির মালিকের ছিল কলেজে পড়ুয়া এক মেয়ে।


লজিং বাড়িতে উড়তি বয়সী মেয়ে থাকলে যা হয় তাই হল। মেডিকেলের সেই ছাত্র মেয়েটির প্রেমে পড়ে গেল। সে প্রতিনিয়ত মেয়েটিকে ইমপ্রেসড করার চেষ্টা করতে লাগল। আর ইমপ্রেসড করার জন্য সে নিত্যনতুন পথ খুঁজতে লাগল। একদিন মেডিকেল কলেজে যাবার সময় সে এক জাদুকরকে দেখতে পেল। জাদুকর রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে জাদুখেলা দেখাচ্ছিল। জাদু দেখে ছেলেটা নিজেই ভীষণ ইমপ্রেসড হয়ে গেল।



এরপর সে জাদুকরের পিছন পিছন ঘোরা শুরু করল। জাদু শেখার জন্য সে জাদুকরের শিষ্য হয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরে বেড়াতে শুরু করল। এরপর একদিন জাদুকর বললেন, ‘আমার ঝুলিতে যা জাদু ছিল সবই তোমাকে শিখিয়ে দিয়েছি।’
কিন্তু ছেলেটি বলল, ‘এগুলো তো জাদু নয়। হাতের কারিশমা। মানুষকে শুধুমাত্র বিভ্রান্ত করা। আমিতো এসব শিখতে চাই নি। আমাকে শক্তিসম্পন্ন জাদু শেখান।’
জাদুকর বলল, ‘শক্তিসম্পন্ন জাদু বলতে তেমন কিছু আমার কাছে পাবে না। যদি তেমন কিছু শিখতেই চাও তবে হিমালয়ের পাদদেশে যাও; সেখানেই হয়তো কারো না কারো কাছে জাদু শিখতে পারবে।’


এরপর সে হিমালয়ের পাদদেশে চলে গেল। কিন্তু কেউই তাকে সাহায্য করতে পারল না। কেউই অতিপ্রাকৃত শক্তিসম্পন্ন জাদুকর নয়। তাদের মধ্যকার একজন প্রবীন বলল, ‘জাদু যদি সত্যিই শিখতে চাও তবে নিজে ধ্যান কর এবং শাস্ত্রিয় বিদ্যা অর্জন কর।’
এরপর সেই ছেলে শাস্ত্রিয় বিদ্যা অর্জন করে ধ্যান করতে শুরু করল। দির্ঘদিন পর সেই ছেলে যখন কলকাতায় ফিরে আসল তখন সে অতিপ্রাকৃত শক্তিসম্পন্ন জাদুকর হয়ে গেছে। এখন সে চোখ বন্ধ করেই সব বলে দিতে পারে। মানুষের মুখ দেখলেই ভূত ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারে।


কিন্তু যে কারণে জাদু শেখা সেটাই পন্ড হয়ে গেল। সন্ন্যাস জীবনে অভ্যস্ত হবার কারণে সংসার তাকে আর আকর্ষণ করতে পারে না। নারী আকর্ষণ তাকে মাহিত করতে পারে না। নারীর প্রতি তার আর কোন ভাবাবেগ কাজ করে না! নারী তার কাছে আর নারী নয়। এখন সবই তার কাছে সমান। সে এখন অনুভূতি এবং আবেগহীণ একজন জাদুকর।


আমাদের শিক্ষিত জনগনের অবস্থাও হয়েছে জাদুকরের ন্যায়। আমরা সভ্য মানুষ হবার অভিপ্রায় নিয়ে পড়াশুনা করতে শুরু করলাম। পড়াশুনা শিখে মানুষের মত মানুষ হতে চাইলাম। কিন্তু পড়াশুনা শিখে এখন আমরা হচ্ছি চোর। এক একজন বিরাট মাপের চোর!


বর্তমান সময়ে পড়াশুনার একমাত্র উদ্দেশ্যই হল ভালো একটি চাকরী করা এবং দুহাতে টাকা কামাই এর নিশ্চয়তা পাওয়া। এখন সবাই পড়াশুনা করে শুধুমাত্র ভালো সার্টিফিকেটের জন্য। এর ফলাফল যা হবার তাই হল। আমরা সভ্য মানুষ হবার জন্য পড়াশুনা করতে গিয়ে এখন আর কেউ সভ্য মানুষটি নেই। এখন আর কেউ স্বাভাবিক মানুষের পর্যায়েই পড়ি না। আজ যে যতো বেশি শিক্ষিত সে তত্তো বড় চোর। আমরা হয়ে গেছি পড়াশুনা জানা সার্টিফিকেট ধারী অসভ্য মানুষ! আমরা এখন শিক্ষিত চোর! বিরাট চোর!


পঠিত : ৭০৭ বার

মন্তব্য: ০