Alapon

কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টই মুসলিমদের বন্ধু নয়...


যদি সবকিছু ঠিক থাকে তবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত পরবর্তি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন, জো বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাস বলে প্রায় অধিকাংশ প্রেসিডেন্টই দ্বিতীয়বার নির্বাচনে বিজয় লাভ করে আবারও ক্ষমতায় এসেছিলেন। তবে যে কয়জন দ্বিতীয়বার আর নির্বাচিত হতে পারেননি, তাদের দলভুক্ত হতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখন পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলে ভোটের দিক থেকেও জো বাইডেন এগিয়ে আছেন এবং ইলেক্ট্ররাল হিসেবে বিজয়ের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প এই পরাজয় সহজেই মেনে নিবেন নাকি আদালত পর্যন্ত যাবেন, সেটাই দেখার বিষয়। তবে এই লেখায় আমরা সেদিকে যাবো না। আমরা যাবো ভিন্ন দিকে।

খুব স্বাভাবিক কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্প ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত। তিনি যেমন রাষ্ট্রিয় বিভিন্ন কারণে আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছিলেন, তেমনি ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমালোচিত হয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উক্তি করে পত্রিকার শিরোনাম হয়েছেন। এমনকি তিনি করোনা ভাইরাসের নাম দিয়েছিলেন ‘চায়না ভাইরাস’। এসব নানাবিধ কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্প সমালোচিত ছিলেন। তবে উল্লেখ করার মত বিষয় হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবাজ প্রেসিডেন্ট ছিলেন না। বরোঞ্জ তার অবস্থান ছিল যুদ্ধের বিপক্ষে। যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ই সিরিয়া যুদ্ধ ভয়াভহরূপ নিয়েছিল, কিন্তু এর প্রেক্ষাপট রচনা করে গেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন।

বিগত দুই প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামা ছিলেন যুদ্ধবাজ। যদিও ‍বুশের যুদ্ধবাজ নীতি সরাসরি প্রত্যক্ষ করা গেলেও, বারাক ওবামা ছিলেন ভীষণ কৌশলি। নিজের যুদ্ধবাজ চেহারা তিনি আড়ালে রেখেই যুদ্ধের দামামা বাজিয়েছেন। যদিও সবাই ভেবেছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর হয়তো মুসলিম দেশগুলো আর অক্ষত থাকবে না। এমনকি আমেরিকাতেও মুসলিমরা হয়তো আর নিরাপদে বসবাস করতে পারবে না। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধের টিকে না হেটে বরং যুদ্ধ বন্ধের দিকেই হেটেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ই আফগানিস্তান থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং তালেবানদের সাথে শান্তি চুক্তিতে ঐক্যমত হয়েছে। একই সাথে সিরিয়া যুদ্ধে মার্কিন সেনাদের অংশগ্রহণ থাকলেও তাতে তাদের আগুনে ঢি ঢালতে খুব কমই দেখা গেছে। বরোঞ্জ তারা মধ্যস্থতার দিকেই বেশি মনোযোগি ছিল।

কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প যা করেছেন, অর্থাৎ জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান, এমন জঘন্য কাজ অতীতের কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট করেননি। সেইসাথে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত থাকার পরও ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানকে সাপোর্ট দিয়ে গেছেন। অভিবাসী আইন পরিবর্তন করেছেন।

আমার মনে আছে, বারাক ওবামা যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হল, তখন আমাদের দেশের বহু মানুষ ভীষণ খুশি হয়েছিল। তাকে বারাক হোসেন ওবামা বলে স্ট্যাটাসও দিয়েছিল। মনে করা হয়েছিল, বারাক ওবামা হয়তো মুসলিমদের প্রতি সংবেদনশীল হবেন। কিন্তু কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টই যে মুসলিমদের ভালোর জন্য কিছু করবে না, তা বারাক ওবামা প্রমাণ করতে খুব বেশিদিন সময় নেননি। এবার জো বাইডেনের ক্ষেত্রেও তেমনই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। ট্রাম্পের পরাজয়ে বাঙালির আনন্দ আর জো বাইডেনের বিজয়ে উচ্ছাস দেখে মনে হচ্ছে, এই উচ্ছাস মিলিয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না! খানিকটা অপেক্ষা, হোয়াইট হাউজে একটু জাকিয়ে বসলেই জো বাইডেন তার মুসলিম বিরোধী খেল শুরু করবে।

আপনাদের খেয়াল আছে কিনা, বারাক ওবামার মেয়াদের শেষের দিকে তুরস্কে বেশ কয়েকটি শক্তিশালী বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছিল। তখন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসলেই এই বোমা হামলা বন্ধ হয়ে যাবে। আর হয়েছেও তা-ই। আবার তুরস্কের সামগ্রিক অগ্রগতিতে বাধা প্রদান করতে ডোনাল্ড ট্রাম্প অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে তুরস্কের অর্থনীতিকেও প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছেন। তাই এ কথা দিবালোকের মত সম্পষ্ট, কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টই মুসলিমদের বন্ধু নয়!

পঠিত : ৫১৮ বার

মন্তব্য: ০