Alapon

ইসলামে দাসপ্রথা

ভূমিকা
দাসপ্রথার বিস্তারিত ফিক্বহ, বর্তমানে কোথায়, কীভাবে, কাদের উপর, কাদের দ্বারা তা প্রয়োগ করা হবে ইত্যাদি এই প্রবন্ধের আলোচ্য নয়। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বা আলেমের তত্তাবধানে থেকে শরিয়াহ নিয়ে পড়াশোনা ছাড়া স্বল্প পরিসরে এই দীর্ঘ আলোচনা অসম্ভব ও অপ্রয়োজনীয়। শুধু সাধারণ বিধিবিধান ও বহুল প্রচলিত কিছু জিজ্ঞাসার জবাবই এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচিত হলো যা আকিদা বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত।
ইসলামে দাসপ্রথা
কোনো লজ্জা ও আপত্তি ছাড়াই আমরা মুসলিমরা এটা স্বীকার করি যে ইসলামে দাসপ্রথা হারাম নয়। একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ইসলামে দাসপ্রথা অবশ্যই হালাল। মুসলিম মুজাহিদগণ যখন কোনো অঞ্চল জয় করেন, সেখানকার যুদ্ধবন্দী এবং তাদের নারী ও শিশুদের দাসদাসী হিসেবে মুজাহিদীনের মাঝে বণ্টন করা জায়েয।
শায়খ আশ-শানক্বিতি (রহমাতুল্লাহ আলাইহি) বলেন, “দাসত্বের কারণ হলো কুফর এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। মুসলিম মুজাহিদীন তাঁদের জীবন ও সম্পদ সঁপে দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় সর্বস্ব ও সর্বশক্তি দিয়ে আল্লাহর কালামকে সমুন্নত করতে যুদ্ধ করেন। আল্লাহ যখন তাঁদেরকে কুফফারদের বিরুদ্ধে বিজয় দান করেন, তখন তাদেরকে দাসত্বের মাধ্যমে তাঁদের অধীন করে দেন যদি না মুসলিমদের বৃহত্তর কল্যাণার্থে শাসক তাদেরকে মুক্তিপণের বিনিময়ে অথবা মুক্তিপণ ছাড়াই ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।” (আদওয়া’ আল-বায়ান, ৩/৩৮৭)
কাফিরদের জন্যও এটি উপকারী যে তারা এর মাধ্যমে ইসলামী পরিবেশে চলে আসতে পারে। ইসলামের বিরুদ্ধে তার কর্মকাণ্ডের সুযোগ সীমিত হয়ে যায়। তারা ইসলামকে কাছ থেকে দেখতে ও শিখতে পারে। ফলে আল্লাহ তাদের অন্তরকে ইসলামের দিকে ঘুরিয়েও দিতে পারেন। এর মাধ্যমে তাদের আখিরাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তির পথ খুলে যায়। বনু মুস্তালিকের যুদ্ধে যুদ্ধবন্দীদের মধ্য হতে একজন নারীকে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিবাহ করে নেন। ফলে তাঁর মর্যাদা উন্নত হয়ে যায়। উম্মাহাতুল মুমিনীন বা মুমিনদের মাতাগণের মধ্যে একজন হিসেবে তিনি পরিগণিত হন। তাঁর নাম জুয়াইরিয়া বিন্তে হারিস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)।
দাসদাসী যদি মুসলিম হয়ে যায়, তাহলেও সে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুক্তির উপযুক্ত হয়ে যায় না। কারণ, আগেই প্রতিষ্ঠিত কোনো অধিকার পরবর্তিতে স্থাপিত অধিকারের দ্বারা নাকচ হয় না। সে কাফির থাকা অবস্থায় মুজাহিদের অধিকার ছিলো তাকে দাস/দাসী বানানোর। সে দাসত্ব অবস্থায় মুসলিম হলেও মুজাহিদের সেই অধিকার নাকচ হয় না। ।
দাসপ্রথা ও তৎকালীন আরব
জাহিলি আরবে মানুষকে দাস বানানোর বেশ কয়েকটি পদ্ধতি ছিলো। যুদ্ধবন্দী হলে সে দাস হতো। ঋণের দেনা শোধ করতে না পারলে সে দাস হিসেবে বিক্রয় হয়ে যেতো। দারিদ্র্যের কারণে কেউ দাস হিসেবে বিক্রয় হতো। (অপহরণের মাধ্যমে দাস বানানোর প্রথা মূলত ইউরোপ আমেরিকায় চর্চা হয়েছে। ইসলামে জিহাদে বন্দী করা ছাড়া অন্য সব রকমে দাস বানানো নিষিদ্ধ। একটি হাদীসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, “কিয়ামাতের দিন আমি তিন প্রকার ব্যক্তির বিরুদ্ধে থাকবো। আর আমি যাদের বিরুদ্ধে থাকি তাদের পরাজিত করে ছাড়ি…এদের এক প্রকার হলো সেই ব্যক্তি, যে কোনো স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রয় করে তার মূল্য ভোগ করেছে।” (বুখারি, ২২২৭) ) যুদ্ধে কেউ দাস হিসেবে বন্দী হলে তার সামনে দুটিই পথ ছিলো। দাস হয়ে বেঁচে থাকা অথবা মৃত্যুদণ্ড পাওয়া। ইসলামে যুদ্ধবন্দীদের জন্য মৃত্যুদণ্ড ও দাসত্ব ছাড়া আরও দুটি বিকল্প যোগ করা হয়েছে। মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া অথবা মুক্তিপণ ছাড়াই ছেড়ে দেওয়া। পরিস্থিতি ও মুসলিমদের সুবিধা-অসুবিধা অনুযায়ী শাসক বা নেতা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন। আল্লাহ বলেন, “…অতঃপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ করো অথবা তাদের নিকট হতে মুক্তিপণ নাও…” (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:৪) বদর যুদ্ধের যুদ্ধবন্দী মুশরিকদের মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। বনু মুস্তালিক ও মক্কা বিজয়সহ অনেক যুদ্ধেই মুক্তিপণ ছাড়া ক্ষমা ঘোষণা করা হয়।
দাসদের সাথে আচরণ
কুরআন সুন্নাহর কোথাও দাস গ্রহণ করাকে উৎসাহিত না করা হলেও দাস মুক্ত করার উৎসাহ দিয়ে প্রচুর কথা আছে। কোনো কারণ ছাড়া এমনিই দাস মুক্ত করা বিরাট সাওয়াবের কাজ। আর্থিক সামর্থ্যবান ও সামর্থ্যবতী সাহাবাগণ দাস ক্রয় করতেন মুক্ত করে দেওয়ার জন্য। যাকাত ফান্ডের একটি অংশ দাস মুক্ত করার জন্য বরাদ্দ থাকে। বিভিন্ন রকম গুনাহের কাফফারা হিসেবে দাসমুক্ত করার আদেশ করা হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত হত্যা, যিহার (জাহিলি যিগে চর্চিত এক রকমের তালাক), কসম ভঙ্গ করা ও রমাদ্বানের দিনে সহবাস করার গুনাহের কাফফারা হলো দাসমুক্ত করা।
দাসদেরকে মনিবের অনুরূপ খাদ্য ও পোশাকের ব্যবস্থা করতে হবে। আবু যার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহু ওয়া সাল্লাম) বলেন, “তারা তোমাদেরই ভাই যাদেরকে আল্লাহ তোমাদের অধীন করেছেন। তাই যার ভাইকে আল্লাহ তার অধীন করেছেন, সে যেন তাকে তা-ই খাওয়ায় যা সে নিজে খায়। তাকে যেন তা-ই পরায় যা সে নিজে পরে। তার উপর যেন অতিরিক্ত কাজের বোঝা না চাপায়। আর যদি অতিরিক্ত কাজ দিয়ে থাকে তাহলে যেন তাকে সাহায্য করে।” (বুখারি, ৬০৫০)
তাদের সম্মান রক্ষা করতে হবে। আবু হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতে শুনেছি, “যে তার দাসকে নিরপরাধ হওয়া সত্ত্বেও অপরাধের ব্যাপারে অভিযুক্ত করে, তাকে কিয়ামাতের দিন প্রহার করা হবে।” (বুখারি, ৬৮৫৮) ইবনে উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) একটি দাসকে মুক্ত করলেন। তারপর একটা লাঠি বা এমন কিছু তুলে নিয়ে বললেন, “এ কাজে এর চেয়ে বেশি সাওয়াব নেই। কিন্তু আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে তার দাসকে চড় মারে বা প্রহার করে তার কাফফারা হলো তাকে মুক্ত করে দেওয়া।’” (মুসলিম, ১৬৫৭)
তাদের প্রতি ন্যায় আচরণ করতে হবে। উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) একবার এক দাসের কান মলে দেন। পরে তাকে বলেন প্রতিশোধ হিসেবে যেন সেও তাঁর কান মলে দেয়। দাসটি রাজি না হওয়ায় তিনি বারবার বলতে থাকেন। পরে সেই দাস হালকাভাবে তাঁর কান মললে তিনি বলেন যেন জোরে মলে দেয়, কারণ তিনি আখিরাতে শাস্তির ভয় করেন। আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে তাঁর দাসের থেকে পার্থক্য করা যেতো না। কারণ তিনি দাসের চেয়ে আগে বেড়ে হাঁটতেন না আর তার চেয়ে ভালো কাপড়ও পরতেন না। উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) একবার এক দল লোকের পাশে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলেন তারা খাওয়াদাওয়া করছে অথচ তাদের দাস তাদের সাথে খাচ্ছে না। তিনি তাদের কড়া ভাষায় তিরস্কার করেন। ফলে তারা দাসকে তাদের সাথে খেতে বসায়। সালমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) গভর্নর থাকা অবস্থায় একদিন ময়দা পিষছিলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন যে তাঁর দাস একটি সংবাদ প্রেরণের কাজে গেছে। তাকে একইসাথে দুটি কাজ দেওয়া সঠিক মনে হয়নি।
নেতৃত্বের কিছু আসনে দাস থাকা সমস্যা নয়। আয়িশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-র একজন দাস ছিলো যার ইমামতিতে তিনি সালাত পড়েছেন। মুসলিমদের আমীর যদি দাসও হয়, তার কথা মানতে মুসলিমরা বাধ্য।
দাস তার মনিবের থেকে মুক্তি কিনে নিতে পারে। অথবা মুক্তির জন্য অনুরোধ জানাতে পারে। এটাকে মুক্তির চুক্তিপত্র বা মুকাতাবা বলা হয়। আল্লাহ বলেন, “…তোমাদের অধিকারভুক্তদের মধ্যে যারা মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি করতে চায় তাদের সাথে লিখিত চুক্তি করো, যদি জানো যে তাদের মধ্যে কল্যাণ আছে। আল্লাহ তোমাদেরকে যে অর্থ-কড়ি দিয়েছেন, তা থেকেও তাদেরকে দান করো…” (সূরা নূর ২৪:৩৩)
দাসীর সাথে সহবাস
পুরুষ মনিবের সাথে দাসীর সহবাস হালাল। তবে মহিলা মনিবের সাথে দাসের সহবাস হালাল নয়। মুজাহিদ তার গনিমতের অংশ হিসেবে যে দাসীকে পেয়েছেন, তার সাথে বিবাহিত হওয়া জরুরি নয়। মনিব হওয়ার অধিকারবলেই তিনি তার সাথে সহবাস করতে পারেন। নারীটির স্বামী অমুসলিম রাষ্ট্রে থেকে গেলে তার সাথে নারীটির বিবাহ আপনা আপনি নাকচ হয়ে যায়। নারীটি গর্ভবতী নয় এ কথা নিশ্চিত হওয়ার পর তার সাথে মনিব সহবাস করতে পারবেন। এদেরকেই কুরআনে “ডান হাতের মালিকানা” বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “সে সকল নারীও (তোমাদের জন্য বিয়ে করা হারাম) যারা সধবা, তবে দক্ষিণ হস্তের মালিকানা ব্যতিক্রম…” (সূরা নিসা ৪:২৪) । জাহিলি আরবে দাসীদেরকে দিয়ে বেশ্যাবৃত্তি করানোর প্রথা ছিলো। এর মাধ্যমে মনিবের কিছু পয়সা-কড়ি রোজগার হওয়ার সুযোগ ছিলো। ইসলামে এই প্রথাটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “…তোমাদের দাসীরা পবিত্রতা রক্ষা করতে চাইলে পার্থিব সম্পদের লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য করবে না…” (সূরা নূর ২৪:৩৩)
দাসীর সাথে সহবাসের ফলে যদি সন্তান জন্মলাভ করে তাহলে উক্ত দাসী উম্ম ওয়ালাদ (সন্তানের মা) হওয়ার সুবাদে মনিবের মৃত্যুর পর আপনা আপনি মুক্ত হয়ে যায়। উত্তরাধিকার হিসেবে মনিবের সন্তানের মালিকানাধীন হয় না। কারণ দাসী মনিবের মা হবে না। । মুসলিম উম্মাহ যেহেতু সুদীর্ঘকাল যাবত জিহাদ পরিত্যাগ করেছে, তাই সাবধান থাকা উচিত কেউ কাউকে দাস বা দাসী বলে অভিহিত করলে তা শরিয়তের শর্তসমূহ মেনে তা করছে কিনা। উদাহরণস্বরূপ কাজের বুয়া, ড্রাইভার, মালি, দারোয়ান এরা কেউ দাসদাসীর সংজ্ঞার মাঝে পড়ে না। যে কোনো উচ্চপদস্থ অফিসারের মত এরাও হলো বেতনভোগী চাকুরে। তারা বিপরীত লিঙ্গের হলে তাদের সামনেও পর্দা করতে হবে। সৌদি আরবে বিদেশ থেকে গৃহকর্মী আনানোর চর্চা শুরু হলে বড় বড় আলেমগণ এসব ফাতওয়া একেবারে খোলাসা করে দেন যাতে তাদের উপর দাসীর শর্তসমূহ কেউ অজ্ঞতাবশত আরোপ না করে। যদি কেউ এমনটা করে থাকে, তাহলে ইসলামের ঘাড়ে তার অপরাধের দায় বর্তায় না। ।
ইসলামের বাইরে দাসপ্রথা
ইহুদী ধর্মে মানবজাতি দুই ভাগে বিভক্ত। ইসরাইলী এবং অ-ইসরাইলী। ইসরাইলীদেরকে দাস বানানো কিছু কিছু ক্ষেত্রে বৈধ। বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে আছে, “যদি তোমরা হিব্রু দাস ক্রয় করো, তাহলে ছয় বছর সে তোমাদের সেবা করবে। কিন্তু সপ্তম বছরে সে বিনামূল্যে মুক্ত হয়ে যাবে। সে একা আসলে একা মুক্ত হবে। কিন্তু আসার সময় সস্ত্রীক থাকলে সস্ত্রীক মুক্ত হবে। মনিব যদি তাকে স্ত্রী দিয়ে থাকে আর তার গর্ভে দাসের সন্তান হয়, তাহলে স্ত্রী ও সন্তান মনিবের থাকবে, শুধু দাস মুক্ত হবে। কিন্তু দাস যদি ঘোষণা দেয়, ‘আমি আমার মনিব ও স্ত্রী সন্তানদের ভালোবাসি এবং মুক্ত হতে চাই না,’ তাহলে মনিব তাকে বিচারকদের কাছে নিয়ে যাবে সে তাকে দরজায় নিয়ে সুঁই দিয়ে তার কান ফোড়াবে। তারপর সে চিরতরে তার দাস হয়ে থাকবে।“ (এক্সোডাস ২১:২-৬)
অ-ইসরাইলীদের জোর করে দাস বানানো যাবে কারণ ইহুদীদের বিশ্বাস অনুযায়ী অ-ইসরাইলীরা নীচু জাত। বিকৃত তাওরাতে তারা এ নিয়ে একটি কাহিনীও লিখেছে যে নূহ (আলাইহিসসালাম) একদিন মাতাল হয়ে উলঙ্গ ছিলেন (নাউযুবিল্লাহ), এমন সময় তাঁর ছেলে হাম তাঁকে দেখে ফেলে। ফলে নূহ অভিশাপ দেন যে হামের বংশধরেরা তার ভাই শামের বংশধরদের দাস হয়ে থাকবে। এছাড়াও আছে, “তোমরা যখন আক্রমণের উদ্দেশ্যে কোনো শহরের দিকে অগ্রসর হও, তখন তাদেরকে শান্তি প্রস্তাব দাও। তারা যদি তা গ্রহণ করে ফটক খুলে দেয়, তাহলে তাদের সকলে তোমাদের জন্য বাধ্যতামূলক দাসত্ব করবে। তারা যদি শান্তিপ্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে সে শহরে অবরোধ আরোপ করো। সদাপ্রভু যখন তা তোমাদের হস্তগত করেন, তখন সেখানকার সকল পুরুষকে হত্যা করো। সেখানকার নারী, শিশু, পশুসম্পত্তি ও অন্য সবকিছু নিজেদের জন্য লুট হিসেবে গ্রহণ করতে পারো।“ (ডিউটেরোনোমি ২০:১০-১৪)
খ্রিষ্টান ধর্মে ওল্ড টেস্টামেন্টের দাসপ্রথার কোনো কিছুই বাতিল করেনি। নিউ টেস্টামেন্টে আছে, “দাসেরা, তোমরা তোমাদের পার্থিব মনিবদের সম্মান ও ভয় করো ঠিক যেভাবে খ্রিষ্টকে করে থাকো। শুধু তারা যখন দেখছে, তখন তাদের মন পাওয়ার জন্যই আনুগত্য কোরো না। বরং খ্রিষ্টের দাসের মতো মন থেকে আনুগত্য করো। পূর্ণ মন দিয়ে দাসত্ব করো যেন তোমরা ঈশ্বরের দাসত্ব করছো, মানুষের নয়। কারণ তোমরা জানো ঈশ্বর সবাইকে তার ভালো কাজের প্রতিদান দেবেন, হোক সে দাস বা মুক্ত।“ (ইফিজায়া ৬:৫-৯)
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার প্রসারের সময় চামড়ার রঙয়ের ভিত্তিতে মানুষকে দাস বানানো হয়। আফ্রিকা ও ক্যারিবিয়ার অসংখ্য মানুষকে দাস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ব্রিটিশ সরকারের ইশারায় দাসপ্রথা ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের জন্য উন্মক্ত হয়ে যায়। কিছু বিশেষজ্ঞ ধারণা করেন ১৬৮০ থেকে ১৭৮৬ পর্যন্ত ২,১৩০,০০০ মানুষ ব্রিটিশদের হাতে দাস হিসেবে বন্দী হন ও বিভিন্ন কলোনিতে স্থানান্তরিত হন। জাহাজে গাদাগাদি করে পাশবিক পরিবেশে দাসদের আনা নেওয়া করা হতো। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার (২/৭৭৯) এর দাসপ্রথা অংশে বলা আছে, জঙ্গল দিয়ে ঘেরা গ্রামগুলো থেকে দাস সংগ্রহের পদ্ধতি ছিলো গ্রামের চারপাশে আগুন লাগিয়ে দেওয়া। গ্রামবাসীরা দৌড়ে খোলা জায়গায় বের হলে যেভাবে পারা যায় সেভাবে তাদের ধরা হতো। আমেরিকা আবিষ্কৃত হওয়ার পর যত দাস সেখানে নেওয়ার জন্য জাহাজে ওঠানো হতো, তার মাত্র এক-দশমাংশ জীবিত অবস্থায় পৌঁছতো। দাসদের ব্যাপারে ছিলো কঠোর আইন। তারা পালানোর চেষ্টা করলে হাত পা কেটে দেওয়া, পরেরবার পালানোর চেষ্টা করলে হত্যা করা। হাত পা কাটা অবস্থায় সে পালাবে কী করে? আগ্রহী পাঠকগণ middle passage, indentured servitude ইত্যাদি বিষয়ে আরও তথ্য জানার চেষ্টা করতে পারেন। আধুনিক আমেরিকাতেও দীর্ঘদিন যাবত অদ্ভুত সব বর্ণবাদী আইন ছিলো। মানুষের লাশের পাহাড় গড়ার পর মাত্র গত শতাব্দীতে আইন করে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু এখনো বর্ণবাদী মনোভাব ও তার জের ধরে ঘটা সহিংসতার ঘটনা বিরল নয়।
উপসংহার
ইসলাম ক্রীতদাসদের সাথে যে আচরণের কথা বলেছে, তার সিকিভাগও আজ কাজের লোকদের সাথেও করা হয় না। বেশ্যাবৃত্তি আইন করে বৈধ করা আছে। তারপরও যারা ইসলামের এই অনুমোদন নিয়ে আপত্তি করে, তাদের জন্য ঔষধ হলো, “রহমানের বান্দা তারাই, যারা জমিনে নম্রভাবে চলাফেরা করে, আর মূর্খরা তাদের সাথে যখন তর্ক করে, তারা বলে ‘সালাম।‘” (সূরা ফুরক্বান ২৫:৬৩)
তথ্যসূত্র- ইসলাম ও দাসপ্রথা, ডান হাতের মালিকানা কী, গৃহকর্মীর বিধান
#HujurHoye

পঠিত : ৬৫৫ বার

মন্তব্য: ০