Alapon

আমরা যেমন ইসলাম মানি....



আমরা অধিকাংশই এমন ইসলাম মানি, যে ইসলাম খানকাহ্'তে সীমাবদ্ধ। মাসজিদে আবদ্ধ। মাদরাসার চার দেয়ালে বন্দী। ওয়াজ-মাহফিল আর জিকির আজকারের ভেতরই সীমিত।

সুন্নাত পালন করি -মিষ্টি খাওয়ার। লাউ খাওয়ার। মধু খাওয়ার। কিন্তু ফাঁসির রসিতে ঝুলে যাবার মতো সুন্নাত পালন করি না। রক্ত ঝরাবার, দন্ত মোবারক শহীদ হওয়ার মতো সুন্নাহ পালন করি না।

সহীহ্ হাদিস খুঁজি - রাফউল ইয়াদাঈনের। জোরে আমীনের। আস্তে আমীনের। এক রাক'আত কিংবা তিন রাকাআত ভেতরের সুন্নাত নিয়ে মাতামাতি তো আমরাই করি। হাদিসের রেফারেন্সের পর রেফারেন্স খুঁজি এসব নিয়েই। কিন্তু রাষ্ট্রনীতির হাদিস খুঁজি না। সমাজনীতির হাদিস দেখিনা। জুলুম বন্ধে হাদিসের গ্রন্থ খুঁজি না। জালিমের প্রতিরোধে করণীয় কী, সে ব্যাপারে সহীহ্ হাদিস কী বলে তা দেখি না!

পাগড়ির কালার ক্যামন হবে, দাড়ি কতোটুকু রাখতে হবে, চেয়ারে বসে স্বলতা আদায় করা যাবে কী যাবে না -সেটা নিয়ে ইজতিহাদের পর ইজতিহাদ। গবেষণার পর গবেষণা চলতেই থাকে। কিন্তু আমাদের শক্তি সঞ্চিত করতে করণীয় কী, কাফেরদের বুলেট বোমা মিসাইল আর জঙ্গি বিমান মোকাবিলা আমাদের কী কাজ কতোটুকুন করতে হবে তা নিয়ে কোনো ভাবনা নেই। চিন্তা নেই। লক্ষ্য নেই। উদ্দেশ্য নেই। গবেষণা নেই.....

মাসজিদের ভেতর গেলে আমরা কিছুটা হলেও আল্লাহর দাস। বের হলেই কিন্তু সমাজের-জাহিলায়াতের দাস! কিছুটা হলেও আল্লাহর দাস বলছি ক্যান? কারণ, এখন মাসজিদেও পুরোপুরি আল্লাহর গোলাম হয়ে ওঠা যায় না। সেখানও শাইত্বনের দাসত্বই অনেক সময় করা লাগে।

ইমাম সাহেব খুতবাহ্ দিবেন, কিন্তু কী বলবেন তিনি -তা ঠিক করে দ্যায় রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতারা। তারাই মাসজিদের কমিটির সভাপতি হয়, সেক্রেটারি হয়। কখনো তাদের চাপে, চাকরি হারাবার ভয়ে ইমাম সাহেব তখন আর সত্য বলতে সাহস পায় না। মিষ্টিমধুর বয়ান দিয়েই থেমে যেতে হয়!

আমাদের জন্য তিলাওয়াত, জিকির আর স্বদাকাহ'র আলোচনা করা হয়, কিন্তু জিহাদের কথা বলা নিষিদ্ধ। মাসজিদের কোণে বসে কষে জাকিরের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। যতো পারো চালিয়ে যাও -এমন ভাব! কিন্তু কস্মিনকালেও তুমি মোল্লা মানুষ, দ্বীনদার মানুষ -সমাজ নিয়ে কথা বলবেনা! রাজনীতি নিয়ে আলাপ করবেনা!

বিশ্বের নিয়ন্ত্রণক আল্লাহদ্রোহী শক্তিগুলো চাইছেই তা -আমরা পাঁচওয়াক্ত স্বলাত পড়ি। সিয়াম করি। আমাদের কর্তৃত্ব শুধু সীমিত আকারে মাসজিদের মিম্বারে থাকুক, আর পুরো সমাজ, রাষ্ট্র, আর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তারাই কর্তৃত্ব করুক!

আমাদেরকে শেখানো হয়, বুঝানো হয় এমন ইসলাম - যে ইসলামে রাজনীতি নেই। সমাজিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা নেই। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন মোকাবিলায় কোনো পদক্ষেপ নেই! অর্থনীতি নেই। পররাষ্ট্রনীতি নেই। শিক্ষাব্যবস্থা নেই। শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাবার কথা নেই! এসব বলবে তো তুমি জঙ্গী! তুমি প্রতিক্রিয়াশীল!

আফসোস, আমরাও মানি এমন ইসলাম -ঠান্ডা ইসলাম। নিষ্ক্রিয় ইসলাম। যে ইসলাম বাতিলের গাত্রদাহের কারণ হবে না। তাগুতের মসনদ কেঁপে ওঠে না! সে ইসলাম -যে ইসলাম শুধু তাসবীহ্-তাহলীল, স্বালাত সিয়ামেই সীমাবদ্ধ!

অথচ ইসলাম তো কালজয়ী আদর্শ! ইসলাম শুধু স্বলাত-সাওম আর জিকির-আজকারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এই দ্বীন আসছেই সকল মতবাদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হবার জন্য! জিহাদের মাধ্যমে মাজলুম মানবতার মুক্তির জন্য! [দেখুন, সুরা সফ:০৮-০৯]

মুসলমানদের জন্মই তো হয়েছে হয় সারা দুনিয়ার বুকে আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করবে, না হয় সেই প্রচেষ্টায় নিজের জীবনকে আল্লাহর রাহে বিলিয়ে দিয়ে শাহাদাতের পেয়ালা পান করে জান্নাতুল ফেরদৌসে সবুজ পাখি হয়ে ওড়াউড়ি করবে! কিন্তু আফসোস, আমরা ইসলামের মূল স্পীডই আজ হারিয়ে ফেলছি! আল্লামা ইকবাল আফসোস নিয়ে বলেছেন -দুর্ভাগ্য মুসলীম জাতির। তারা শাহাদাতের তামান্না ভুলে গিয়ে তাসবীহ'র দানা মাঝে জান্নাত খুঁজছে!

যুগের পর যুগ এমন শাহাদাতের তামান্নাবিহীন, জিহাদের বাসনাহীন ইসলাম যতোই পালন করি, তাতে বাতিলপন্থীদের টনক ততোটা নড়বে না। কারণ, তারা তো চায়-ই আমাদেরকে নিষ্ক্রিয় ও নিষ্প্রাণ করে আমাদের মাথার ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে তাদের কর্তৃত্ব-ক্ষমতা অটুট রাখুক! অবিচল রাখুক!
কারণ, আমার ইসলাম তো আর তাদের কর্তৃত্বকে খর্ব করছে না....

আহা! আজ আমরা ভুলেই গিয়েছি যে, ইসলাম শুধু ধর্ম নয়–জীবনব্যবস্থা! কুরআন শুধু ধর্মীয় বিধিমালার গ্রন্থ নয়–পুরো জীবনের গাইডলাইন, একটা জীবন্ত সংবিধানও বটে! এই কুরআন পুরোটাই তো আমাদের মানতে হবে। আংশিক মানার পরিণতি হিশেবে আছে লাঞ্ছনা আর গঞ্জনা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা পবিত্র কুরআনে বলেন,

".....তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান আনো এবং কিছু অংশে কুফরী করো ? তাহলে তোমাদের যারা এরুপ করে তাদের একমাত্র প্রতিফল দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ও অপমান এবং কেয়ামতের দিন তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে কঠিনতম শাস্তির দিকে। আর তারা যা করে আল্লাহ্‌ সে সম্পর্কে গাফিল নন।( সুরা বাকারাহ : ৮৫)


আমরা যেমন ইসলাম মানি
~রেদওয়ান রাওয়াহা

পঠিত : ৪৩৯ বার

মন্তব্য: ০