Alapon

আরববাসীরা পাকিস্তানকে মাওলানা মওদূদীর মাধ্যমেই চিনেছে।




আরববাসীরা পাকিস্তানকে মাওলানা মওদূদীর মাধ্যমেই চিনেছে।
-ইউসুফ হাশেম আল-রেফায়ী

জনাব ইউসুফ হাশেম আল-রেফায়ী সাহেব, বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি কুয়েত সরকারের প্রাক্তণ প্রভাবশালী মন্ত্রী, ছিলেন। পাকিস্তানের প্রাক্তণ প্রধানমন্ত্রী মিস্টার জুলফিকার আলী ভুট্টোর শাসন চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানে সীরাত (সাঃ)-এর উপর অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আরব বিশ্ব থেকে আগত প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্য ভুট্টো সাহেব বলেছিলেন, আপনারা মাওলানা মওদূদী সাহেবের সাথে সাক্ষাত না করলে, সরকার সেটা সুদৃষ্টিতে দেখবে। সরকারের এ উপদেশ শুনার পর জনাব হাশেম রেফায়ী বলেছিলেন পাকিস্তান আসব অথচ মাওলানা মওদূদীর সাথে সাক্ষাত করব না-তা কিছুতেই সম্ভব নয়।

একঃ জনাব ইউসুফ হাশেম আল রেফায়ী মাওলানা মওদূদীর ইন্তেকালের পর তার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, পাকিস্তান এসে লাহােরে পৌছে সাইয়েদ মওদূদী (রঃ)-এর সাথে সাক্ষাত না করে চলে যাওয়াটা আমাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার ছিল। সাইয়েদ মওদূদীর ব্যক্তিত্ব শুধু পাকিস্তানে প্রভাব সৃষ্টি করেনি, বরং দুনিয়ার এক বিরাট অংশকেও প্রভাবিত করেছেন। তার চিন্তাধারা বিশ্ববাসীর মনে একটি নতুন চেতনা ও আশার সঞ্চার করেছে। মাওলানার রচিত বই পুস্তক ও অন্যান্য রচনাবলী আরবী ভাষায় অনুদিত হয়েছে এবং সেগুলাে আরব জাহানে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে।

সাইয়েদ মওদূদী (রঃ)-এর লেখনী শক্তির ব্যতিক্রমধর্মী বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যখন অধিকাংশ আলেম মুসলিম উম্মার বৃহত্তর স্বার্থের চিন্তা বাদ দিয়ে ফেকাহের খুটিনাটি মাসআলা-মাসায়েলে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তখন তিনিই মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থের চিন্তা করেন। তিনি তার ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার মর্ম ও গুরুত্ব তুলে ধরে বর্তমান আধুনিক সমাজে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা কিভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়, তার বিজ্ঞানসম্মত কর্মপদ্ধতি ও কর্মপন্থা পেশ করেছেন। এ বিষয়ে তিনি অনেক মূল্যবান মৌলিক গ্রন্থ রচনা -করেছেন। মাওলানার এ গুরুত্বপূর্ণ অবদান শুধু পাকিস্তানের অভ্যন্তরে নয়, বরং বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রেও ইসলামী হকুমত প্রতিষ্ঠার কাজকে অনেক দূর এগিয়ে দেয়।

সাইয়েদ মওদূদী (রঃ) শুধু একজন বড় আলেমই ছিলেন না, বরং তিনি ইসলামী জ্ঞানের আলােকে নিজের আমলী জীবনকে ও সাজিয়েছেন।

দুইঃ আমি যদি একথা বলি, সেটা কোন মতেই অন্যায়ের বিষয় হবে না যে, সাইয়েদ মওদূদী ছিলেন আরববাসীদের জন্য এক মহান ব্যক্তিত্ব এবং তার মাধ্যমেই আমরা পাকিস্তানকে চিনেছি। আরব বিশ্বে পাকিস্তানের জন্য যে বিপুল পরিমাণ সাহায্য-সহযােগিতা পাওয়া যাচ্ছে, তা একমাত্র মাওলানার ব্যক্তিত্বের করণেই পাওয়া যাচ্ছে। জনাব ইউসূফ হাশেম রেফায়ী গভীরভাবে আফসুস করে বলেনঃ সাইয়েদ মওদূদীর মত ব্যক্তিত্ব পাকিস্তানে আগমণ করার পরিবর্তে আমাদের আরব দেশে যদি আগমণ করতেন, তবে সেটা আরবের জন্য বড় সৌভাগ্য ও নিয়ামতের বিষয় হত। আমার মনে হয় হাসান আল বান্নার সাথে মাওলানার গভীর সাদৃশ্য রয়েছে। শহীদ হাসানুল বান্না যখন মিসর ও আরব বিশ্বে ইসলামী আন্দোলনকে সুসংগঠিত করার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, ঠিক তখন সাইয়েদ মওদূদী ও উপমহাদেশে অবিকল সেকাজেরই আঞ্জাম দিচ্ছিলেন। তবে শহীদ হাসানুল বান্না অপেক্ষা সাইয়েদ মওদূদী (রঃ) আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের অধিক সুযােগ পেয়েছিলেন। সে কাজটি হচ্ছে সাইয়েদ মওদূদী তার প্রভাব সৃষ্টিকারী সাহিত্যের মাধ্যমে বিশ্বাব্যাপী ইসলামী আন্দোলন সমূহের নতুন প্রাণ
সঞ্চার করেছেন।

মাওলানা মওদূদীঃ একটি দূর্লভ সংগ্রহ ১৩৯-১৪০ পৃষ্ঠা

পঠিত : ৬৩১ বার

মন্তব্য: ০