Alapon

আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি!

একজন মানুষকে দেখে খুউব অবাক হতাম। এখনো প্রতিনিয়ত অবাক হই।
তাকে কেউ যদি প্রশ্ন করত, ‘আপনি কোথায় পড়াশুনা করেন?’
জবাবে সে বলত, ‘বলার মত কোথাও পড়াশুনা করি না।’
প্রশ্নকারীরা অবিশ্বাসের চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকত। আর সে বীরদর্পে সেই চাহুনী উপেক্ষা করে যেত।



এই কারণে পরিচিত মহলে তাকে অনেকেই তাকে অহংকারী বলে শুনেছি। এই ‘অহংকারী শব্দটা তার কানেও এসে পৌছেছে। তখন সে শব্দ করে হেসে বলত, ‘অহংকার প্রকাশ করছি না বলেই কি আমি অহংকারী?’


এই মানুষটিকে ভয়ানক টাইপের ফলো করি। সে হয়তো নিজেও জানে না, আমি তাকে কত্তোটা ফলো করি। এই মানুষটি যখন নতুন কারো সঙ্গে পরিচয় হন, তখন তিনি প্রশ্ন করেন না, ‘আপনি কোথায় পড়াশুনা করছেন?’
সে ইচ্ছে করেই এই প্রশ্নটিকে স্কিপ করে যায়।


একদিন তাকে প্রশ্ন করলাম, ‘কেন তুমি তোমার ভার্সিটির পরিচয় দাও না?’
সেদিন বেশ শক্ত করেই তাকে ধরেছিলাম। সে জবাবে বলেছিল, ‘আমরা বাঙালীরা মানুষকে প্রতিষ্ঠান দিয়ে বিবেচনা করি। কে কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়তেছে, তার উপর ডিপেন্ড করে আমরা একটা মানুষকে জাজ করতে শুরু করি। এমনকি আমরা তার জ্ঞান গরিমা নিয়েও জাজ করতে শুরু করি। যখন কাউকে বলব, ঢাবিতে পড়ি! তখন সে ভাবতে শুরু করবে, ওহ! সে তো বিরাট ব্রিলিয়ান্ট ষ্টুডেন্ট। কেন ভাববে জানো? কারণ আমি একজন ঢাবিয়ান, শুধুমাত্র সেকারণেই।’


তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারো বললেন, ‘আর আমরা যারা ঢাবিতে ভর্তি হই, প্রথম দিকে আমাদের মনে হয় বিরাট কিছু হয়ে গেছি। নিজে নিজে আত্নতুষ্টিতে ভুগি আর ভাবি, আমি সামথিং। আর এই আমি সামথিং ভাবতে গিয়ে নিজের সাড়ে সর্বনাশটা করে ফেলি। সাড়ে সর্বনাশটা আবার বুঝতে পারি ফাইনাল ইয়ারে গিয়ে। তখন বুঝি, ঢাবি ফাবি কিচ্ছু না। যদি আমার দক্ষতাই না থাকে তবে শার্টের পিছনে ঢাবিয়ান লিখে বেড়ালেও নীলক্ষেত মোড়ে কেউ একটা টাইপিষ্টেরও চাকরী দিবে না।


আর ভিন্নদিকে কোন একটা সাধারণ ছেলে অসাধারণ কিছু করে ফেলল। মানুষ সবার আগে কি প্রশ্ন করবে জানো? 
ছেলেটি কোন ভার্সিটি থেকে পড়াশুনা করেছে। যদি শোনে ন্যাশনাল ভার্সিটি তবে নাকটা দুই ইঞ্চি উপরে উঠে যায়! তখন তার এই অসাধারণ কর্মটাও তার কাছে অতি সাধারণ হয়ে যায়! ঠিক এ কারণেই নিজের পরিচয়টা দিতে চাই না। আমার প্রতিষ্ঠান আমার যোগ্যতা পরিমাপ করার মানদন্ড নয়। আমাকে বিচার করতে হলে, জ্ঞান দিয়ে বিচার কর। আমার যোগ্যতা দিয়ে বিচার কর। সর্বোপরি আমার মানবিকতা এবং বিবেকবোধ দিয়ে বিচার কর। তবেই না প্রকৃত শিক্ষিত মানুষটাকে খুঁজে পাবো।’


পঠিত : ৫৪০ বার

মন্তব্য: ০