Alapon

দেশের থানাগুলো যেন এক একটা কসাইখানা!



ফেসবুকে এসআই আকবরের বেঁচে থাকবার কাকুতি মিনতি ভরা ভিডিও দেখলাম। তার এই কাকুতি মিনতি করা দেখে মনে হয়েছিল, সেদিন হয়তো সেই ব্যবসায়ী রায়হানও বেঁচে থাকার জন্য কাকুতি মিনতি করে জীবন ভিক্ষা চেয়েছিল, কিন্তু এসআই আকবরের সেদিন মন গলেনি। কিন্তু অশিক্ষিত ও সভ্যতা থেকে অবস্থান করা খাসিয়ারা তার কাকুতি মিনতি শুনেছে। তাকে জানে না মেরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। অশিক্ষিত খাসিয়াদের মনেও যে মায়া দয়া আছে আমাদের শিক্ষিত পুলিশ অফিসারদের মনে তার ছিঁটে ফোঁটাও নেই।

সিলেটের আলোচিত ব্যবসায়ী রায়হান হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী এসআই আকবর অবশেষে গ্রেফতার হয়েছেন। তবে দুঃখজনক বিষয় হল, আকবরকে আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। সাধারণ জনতা তাকে খুঁজে বের করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। ধরা পড়ার পর এসআই আকবর জানিয়েছে, তাকে এক সিনিয়র পুলিশ অফিসার দু মাসের জন্য গা ঢাকা দিয়ে থাকতে বলেছে। তারপর পরিস্থিতি শান্ত হলে মিডিয়া চুপচাপ হয়ে গেলে যেন ফিরে আসে।

সিনিয়র এই অফিসারের কথাগুলো ভালো করে লক্ষ্য করুন। বাংলাদেশের পুলিশদের মধ্যে অধিকাংশই কোনো না কোনো সময় বিভিন্ন অপরাধ করেছে। অপরাধ করে ধরাও পড়েছে। কোনো পুলিশ যখন অপরাধ করে ধরা পড়ে তখন তাকে শান্তিস্বরূপ থানা থেকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। যদি সেই ঘটনা নিয়ে মিডিয়ায় খুব বেশি উচ্চবাচ্চ করা হয়, তবে সেই পুলিশের পোস্টিং কিছুদিন স্থগিত রাখা হয়। তারপর মিডিয়া এবং মানুষজন ঘটনা ভুলে যায়, তখন তাকে নতুন স্থানায় দায়িত্ব প্রদান করা হয়। পুলিশের যাবতীয় অপরাধের এটাই শাস্তি।

আর পুলিশেরা জানেই, দুদিন পর মিডিয়া নতুন কোনো ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে। তখন নতুন ইস্যুর ভিড়ে পুরনো ইস্যু চাপা পড়ে যাবে। এ কারণেই এসআই আকবরকে সেই সিনিয়র পুলিশ কিছুদিন আড়ালে থাকতে বলেছে। তারপর সব ঠান্ডা হয়ে গেলে এসআই আকবরের শাস্তি তো পরের কথা তাকে নতুন কোনো এলাকায় দায়িত্ব প্রদান করা হতো।

দেশ স্বাধীনের পর থেকে বাংলাদেশ পুলিশ এভাবেই চলছে।

আপনাদের নিশ্চয়ই মাদরাসা ছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার সেই ঘটনা মনে আছে। সেই ঘটনায় জড়িত ছিলেন সোনাগাজীর বিতর্কিত ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ওসি মোয়াজ্জেম নুসরাতকে থানায় ডেকে বিভিন্ন প্রশ্নবানে লাঞ্জিত করে সেই ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করে। সেই সাথে নুসরাত হত্যায় ওসি মোয়াজ্জেমের সহযোগিতা ছিল বলেও তদন্ত রিপোর্টে পাওয়া যায়। সেই তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হবার পর এবং পত্রপত্রিকায় লেখালিখির পর ওসি মোয়াজ্জেমকে সোনাগাজী থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বেশ কিছুদিন তাকে পুলিশ লাইনেই রাখা হয়। তারপর ঘটনা পুরনো হয়ে গেলে তাকে রংপুরে ট্রান্সফার দেওয়া হয়। তার ট্রান্সফারের সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হলে রংপুরের আপামর জনতা তাকে জুতা প্রদর্শন করে এবং অবিলম্বে তাকে রংপুর থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানায়।

পরবর্তিতে ওসি মোয়াজ্জেমকে রংপুর থেকে প্রত্যাহার করা হলেও বর্তমানে তিনি দেশের কোনো না কোনো থানায় অবশ্যই কর্মরত রয়েছেন। পুলিশের অপরাধের শাস্তি থানা থেকে প্রত্যাহার করে কিছুদিন চুপচাপ বসিয়ে রাখা। তারপর তাকে নতুন থানায় দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এভাবে বিনা শাস্তিতে দায়িত্ব প্রদান করার অর্থ হল নতুন করে অন্যায় করার প্ররোচনা। যার কারণে ওসি প্রদীপ, ওসি সালাউদ্দিন, এসআই আকবরদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তেই আছে।

আইন নাকি সবার জন্য সমান! তবে এই কথাটি সম্ভত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যদের জন্য প্রযোজ্য নয়। তারা আইনের উর্ধ্বে। তারা আইনের পোশাক পরে, আইন প্রদর্শন করে একের পর এক বেআইনি কাজ করে যাচ্ছে, বেআইনি ভাবে দেশের সাধারণ মানুষকে হত্যা করে যাচ্ছে, দেশের মানুষকে হয়রানি করে যাচ্ছে কিন্তু তারপরও তাদের সেইভাবে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে না। যেখানে পুলিশের কাজ জনগণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, সেখানে তারা জনগণের জীবন নিয়ে জুয়া খেলছে। তাই পুলিশের এই প্রত্যাহার প্রত্যাহার খেলা অচিরেই বন্ধ করে, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। তা না হলে এমন এসআই আকবরদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তেই থাকবে। আর সারাদেশের থানাগুলো কসাইখানায় পরিণত হবে।

পঠিত : ৩৯২ বার

মন্তব্য: ০