Alapon

ভুল নকশার কবলে উন্নয়ন এবং দেশের মানুষের ভাগ্য...


বাংলাদেশে উন্নয়ন বলতে সরকার আমাদের বোঝায় রাস্তাঘাট, মেট্রোরেল আর ফ্লাইওভার। এগুলোই নাকি সরকারের উন্নয়ন মডেল। সেই রোল মডেলের মাঝেই হয়তো বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য আটকে গেছে!

আপনাদের স্মরণ আছে কি, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণের সময় নকশা ত্রুটি ধরা পড়ে। সেই নকশা ত্রুটির কারণে নির্মাণ কাজ শেষে হতে অতিরিক্তি আরও দেড় বছর সময় লাগে, সেই আসে প্রায় সাড়ে চারশো কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয়। ভোগান্তির কথা না হয় বাদই দিলাম। কিন্তু এই অতিরিক্ত সাড়ে চারশো কোটি টাকা আসে কোথা থেকে?
এই আপনার আমার মত সাধারণ মানুষের পকেট থেকেই সাড়ে চারশো কোটি টাকা অতিরিক্ত গচ্ছা দিতে হয়েছে।

অথচ যেকোনো কনস্ট্রাকশনের কাজ যে কোম্পানীর হাতে ন্যাস্ত করা হয়, তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ করতে না পারলে উল্টো সরকারকে জরিমানা দেয়। নকশায় যদি কোনো ভুল থাকে সেই দ্বায়ভার কনস্ট্রাকশন নির্মাণ কোম্পানীকে বহন করতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের বেলায় সব উল্টো নিয়ম! নিকশায় ভুলের জন্য বাংলাদেশ সরকারকেই অতিরিক্ত সাড়ে চারশো কোটি টাকা ব্যয়ভার বহন করতে হলো! এই সাড়ে চারশো কোটি টাকার কত টাকা ফ্লাইওভার নির্মাণ ত্রুটি সারানোর জন্য ব্যয় করা হয়েছে, আর কতটা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পকেট গরম করার জন্য ব্যয় করা হয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষই ভালো বলতে পারবে।

আবারো সেই নকশা ত্রুটির দোহাই দিয়ে সাগর চুরির ফন্দি এটেছে সরকার ও সরকারি তাবেদাররা। যখন মেট্রোরেলের নকশা প্রস্তাব করা হয়, তখন রুট ছিল উত্তরা থেকে মতিঝিল। কিন্তু পরবর্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা বর্ধিত করে কমলাপুর পর্যন্ত করার নির্দেশনা দেন। তার প্রস্তাবনুসারে মেট্রোরেলের কাজ এগিয়ে চলছে। কিন্তু গতকাল পত্রিকায় দেখলাম, মেট্রোরেল কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত করা হলে তাতে কমলাপুর রেল স্টেশনের মূল বিল্ডিং ভাঙতে হবে। আর তাতে করে কমলাপুর স্টেশনের সৌন্দর্য হানি ঘটবে। এ কারণে রেল কতৃপক্ষ কমলাপুর স্টেশন উত্তর দিকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

প্রথমত কমলাপুর স্টেশন তো সমসাময়িক কোনো স্থাপনা নয়। বরোঞ্জ এই স্থাপনা দেশ স্বাধীনের পূর্বেই স্থাপন করা হয়েছে। তৎকালীণ পাকিস্তান সরকার বর্তমান কমলাপুর স্টেশনটি নির্মাণ করে। এই সেই সময় থেকে আজ অবধি কমলাপুর স্টেশনকে কেন্দ্র করেই দেশের রেলপথ বিস্তৃতি লাভ করেছে। কমলাপুর স্টেশন ভেঙ্গে যদি তা উত্তর দিকে সরিয়ে নিতে হয়, তবে পুরো রেলপথ সরিয়ে নিতে হবে। বিঘ্নিত হবে রেল যোগাযোগ অবস্থা। সেইসাথে সামান্য নকশা ত্রুটির কারণে গচ্ছা যাবে জনগণের কয়েক হাজার কোটি টাকা।

টেলিভিশন আর পত্রিকা খুললেই কেবল ‘উন্নয়ন উন্নয়ন’ শুনি, কিন্তু জনগণ সেই উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে পারে না। বরোঞ্জ সেই উন্নয়নের মুলা ঝুলিয়ে জনগণের পকেট কেটে ভুল নকশার নামে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। আর সেই টাকা বিদেশে পাচার করে সমৃদ্ধ করা হচ্ছে বেগম পাড়া। আর আমরা দেশের জনগণ নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগি। একদিকে মনে হচ্ছে, ভুল নকশার কবলে পড়ে উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছে, আবার অন্যদিকে মনে হচ্ছে, উন্নয়নের কবলে পড়ে আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনই দূর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে।

পঠিত : ৪৯১ বার

মন্তব্য: ০