Alapon

ভাস্কর্য বিরোধী আন্দোলন সরকারের জন্য আর্শীবাদ স্বরূপ!



ভাস্কর্য ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশের রাজপথ আবারো গরম হতে শুরু করেছে। তবে এই গরমাগরম কতদূর পর্যন্ত গড়ায় তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এটা যে সরকারের জন্য আর্শীবাদ তা বিনাবাক্য ব্যয়ে বলে দেওয়া যায়!
কারণ?

কারণটা ব্যাখ্যা করছি। আপনি আমি আমরা সবাই জানি, আওয়ামী লীগ ত্রাসের রাজত্ব কায়েক করে বিরোধীদল তথা বিএনপিকে ভ্যানিশ করে দিয়েছে। সত্য কথা বলতে বর্তমানে বিএনপি একটি নামসর্বস্ব দলে পরিণত হয়েছে। তারপরও যতোটুকু আছে, সেটাও ভ্যানিশ করার হুমকি সরকার প্রায়শ দিয়ে থাকে। কিন্তু অন্যদিকে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বিভিন্ন সময় বলে থাকেন, একটি শক্তিশালী বিরোধী দল প্রয়োজন! এমনকি ওবায়দুল কাদের সাহেবও এই কথা বার কয়েক বলেছেন। অন্যদিকে ওবায়দুল কাদের সাহেবরাই বিরোধী দল বিএনপিকে হামলা করে মামলা দিয়ে এবং গ্রেফতার ও গুমের মাধ্যমে মাজা ভেঙ্গে দিয়েছে। বিরোধী দলের অস্তিত্ব বিনাশ করে দিয়েছে। তারাই আবার বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে কেন?

এর কারণ হচ্ছে, সরকারের অস্তিত্ব মূলত বিরোধী দলই টিকিয়ে রাখে। একটি শক্তিশালী ও কার্যকর বিরোধী দল থাকলে তারা সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত পেশ করে। সরকারের সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলে সেটা নিয়ে সংসদে বিতর্ক করে। বিতর্ক জুতসই না হলে সংসদ থেকে ওয়াকআউট করে। তারপর সেই দাবি আদায়ে বিরোধী দল রাজপথে সরব হয়। আবার সেই আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তারপর সেই আন্দোলন যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার উপক্রম হয়, তখন সরকার কঠোর অবস্থানে চলে যায়। আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লেলিয়ে দেয়। এ নিয়ে দেশে বেশ কিছুদিন সংবাদ মাধ্যম ও রাজনীতির মাঠ গরম থাকে। তারপর নতুন ইস্যু আসে, আবার সংসদ বিতর্ক, সংসদ থেকে ওয়াক আউট, রাজপথে আন্দোলন তারপর পুলিশ দিয়ে সেই আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ, মূলত এসব কাজের মধ্য দিয়ে সরকার দেশবাসীর কাছে নিজের শক্ত অবস্থান জানান দেয়।

কিন্তু দমন নীপিড়নের কৌশল অবলম্বন করায় বাংলাদেশে এখন বিরোধী দল বলতে কার্যকর কোনো দলের অস্তিত্ব নেই। সংসদে যে বিরোধী দল রয়েছে, সেই বিরোধী দল পাপেট শো! সেটার কোনো কার্যকারীতা বা ভূমিকা দেশের রাজনীতিতে নেই। যার কারণে সরকারের কোনো কার্যক্রম নিয়ে সংসদে বিতর্ক হয় না, সংসদ থেকে ওয়াকআউট হয় না, রাজপথে শক্ত আন্দোলন হয় না, আর সেই আন্দোলন দমনে সরকারকে কঠোর অবস্থানে যেতেও হয় না। এ কারণে প্রায়শই আমরা সরকারের অস্তিত্ব বুঝতে পারি না। বেশ কিছুদিন ধরে আসলে বুঝতেই পারছি না, দেশে আওয়ামী লীগ সরকারের অস্তিত্ব আছে কিনা! আর নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে আওয়ামী লীগ সরকারে প্রয়োজন ভায়োলেন্স! সরকারের একটি বড় ভায়োলেন্স বা প্রতিরোধমূলক আন্দোলন প্রয়োজন। যে আন্দোলন দিয়ে দেশের রাজনীতির মাঠ আবারো গরম হয়ে উঠবে এবং বিভিন্ন কৌশল ও দমনের মাধ্যমে সেই আন্দোলন নির্মূল করার মধ্য দিয়ে সরকার নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে পারবে।

ভাস্কর্য নির্মাণ ইস্যু নিয়ে ঠিক সেপথেই আগাচ্ছে সরকার। কিন্তু সবকিছু যে সরকারের পরিকল্পনামাফিক হচ্ছে তাও কিন্তু না। আমরা ডিজিএফআই বা এনআসআই-এর গোয়েন্দাদের যতোটা চৌকস ভাবি, বাস্তবিক অর্থে তা ততোটা চৌকস নাও হতে পারে। যার কারণে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, এসব কিছু সরকারের প্ল্যান মাফিক চলছে। ভাস্কর্য নির্মাণ প্রকল্প ছিল, সরকারের আর একটি হরিলুট প্রকল্প! কিন্তু এই প্রকল্পকে ঘিরে হেফাজত ইসলামযে এমন মারমুখি আন্দোলনের পথে হাটবে তা সরকার কল্পনাও করেনি। সরকারের জন্য এ যেন মেঘ না চাইতেই বজ্রপাতের মত। যার দরুন এমন একটি ছোট পরিসরের আন্দোলন নিয়েও সরকারের সর্বমহল একটিভ ভূমিকা পালন করছে। খুব সম্ভবত হেফাজত ইসলামের উপর দিয়ে আরও একটি ক্রাসডাউন ঘটতে যাচ্ছে; যে ক্রাকডাউনের মধ্য দিয়ে সরকার দেশবাসীর কাছে নিজের শক্ত অবস্থান জানান দিতে পারবে! কী ঘটবে, তা সময়ই আমাদের বলে দিবে।

পঠিত : ৭৪৫ বার

মন্তব্য: ০