Alapon

তবে কি মাওলানা মামুনুল হক সরকারের সাথে আপোষ করলেন...?



আমরা দুপুরে সবাই একসাথে বসে খাই। খাওয়ার সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গল্প হয়। আজ যেমন গল্প হচ্ছিল মাওলানা মামুনুল হক ও ভাস্কর্য নিয়ে। মাওলানা মামুনুল হকের পূর্ব ইতিহাস পর্যালোচনা করে উপস্থিত সকলেই বলছিল, ‘শেষ পর্যন্ত মাওলানা মামুনুল হক নিজের অবস্থানে অটল থাকতে পারেন কিনা, সেটাই দেখার বিষয়! কিন্তু তিনি যেভাবে ছোট্ট বিষয় নিয়েও ফেসবুকে লাইভে জবাবদিহিতামূলক প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন, তাতে মনে হচ্ছে তিনি ইতিমধ্যেই ভীষণ বিচলিত হয়ে পড়েছেন। দেখা যাক, সামনে কী হয়!’

খাওয়া-দাওয়া শেষ করে অফিসের কাজে মনোনিবেশ করলাম। আসরের নামাজ পড়ে ফেসবুকে ঢু মেরে দেখলাম, যা আশঙ্কা করেছিলাম তা-ই হয়েছে! মাওলানা মামুনুল হক যুদ্ধ নামার আগেই হার স্বীকার করে রণে ভঙ্গ দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে যাওয়ার পথ খুঁজছেন। গোটা সংবাদ সম্মেলন দেখে মনে হল, মামুনুল হক সাহেব ভীষণ ভয় পেয়েছেন।

মামুনুল হক সাহেবের অবস্থা দেখে শুধু মনে হল, মামুনুল হক কুমিরের সাথে লড়াই করতে নদীতে নেমেছেন কিন্তু সাঁতার জানেন না। আর সাঁতার না জানা মামুনুল হক সাহেব বিরাট হম্বি-তম্বি করে মানুষ জড়োসড়ো করে ঘোষণা দিলেন, এই কুমিরকে না মারা পর্যন্ত তিনি ডাঙ্গায় উঠবেন না! কিন্তু মামুনুল হক নদীতে নামার আগেই কুমির মহাশয় ইয়া বড় ‘হা’ করে নিজের শক্তিমত্তা জানান দিলো! আর সেই ‘হা’ দেখে মামুনুল হক সাহেব ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে কুমির মহাশয়ের সামনে করো জোরে মিনতি করে বললেন, ‘কুমির ভাই! কুমির ভাই! আমি তো তোমার কখনো ক্ষতি চাই না। কিন্তু লোকজন বলল, তুমি নাকি নদীর পানি ঘোলা করো আমি সে কথাই বলতে এসেছি। আমি তোমাকে মারতে যাবো কোন দুঃখে! আমার কি এতোই সাহস! তোমাকে অনুরোধ করছি শুধু নদীর পানি ঘোলা করো না। এতোটুকু ছাড়া বাদ বাকি সবই তুমি করতে পারো!’

মামুনুল হক সাহেবের অবস্থা হয়েছে এমন। তিনি সরকারের একটি সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে এখন বলছেন, ‘আমরা তো সরকার বিরোধী নই, বঙ্গবন্ধু বিরোধী নই; ভাস্কর্য বিরোধী।’ সরকারের যে কোনো সিদ্ধান্তের বিরোধীতা মানেই সরকার বিরোধীতা- এ কথা বুঝতে তো আর রাজনৈতিক বোদ্ধা হওয়ার প্রয়োজন নেই।

অন্যদিকে মাওলানা মামুনুল হক সাহেব কথায় কথায় তার মরহুম পিতা শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক সাহেবের নাম নেন। তার পিতা ছিলেন আপোষহীণ নেতা। কিন্তু সেই শায়খুল হাদীসের পুত্র হয়ে মামুনুল হক সাহেব যুদ্ধ শুরুর আগেই শান্তির সাদা পতাকা উড়িয়ে দিয়েছেন। আপনার যদি মুরগীরই কলিজা হবে, তবে মাইক পেলেই আর সামনে উপবষ্টি আম জনতাকে পেলেই এমন বড় বড় বাক্য ছুড়েন কেন?
কথা বলার সময় অবশ্যই মনে রাখবেন, এই কথা বাস্তবায়ন করার মত হিম্মত আপনার আছে কিনা! যদি হিম্মত না থাকে তবে এভাবে বড় বড় বাক্য প্রসব করা বন্ধ করুন আর ঘরে বসে ‘ইল্লাহ’ জিকির করুন।

মাওলানা মামুনুল হক সাহেব এরই মধ্য দিয়ে নিজেকে বাংলাদেশের মুসলিম উম্মাহর রাহবার হবার সুযোগ থেকে বঞ্জিত করলেন। তিনি যদি বুকে হিম্মত নিয়ে সীসঢালা প্রাচীরের ন্যায় দাড়িয়ে থাকতেন তবে সারা বাংলার তৌহিদি জনতা মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতো। আর সেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মাওলানা মামুনুল হক হয়ে উঠতেন জাতির অন্যতম নেতা। ঠিক যেভাবে তৌহিদি জনতা আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বকে মেনে নিয়েছে। কারণ, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী আপোষহীণ নেতা। তিনি একাধারে মাসধিকাল রিমান্ডের নির্যাতন সহ্য করেছেন কিন্তু সরকারের সাথে আপোষ করেননি। আর এই আপোষহীণতার কারণেই আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বাংলাদেশের মুসলিম জনতার রাহবার হয়ে উঠেছেন! কিন্তু মাওলানা মামুনুল হকদের দৌড় ওয়াজের ওই মঞ্চের মাঝেই সীমাবদ্ধ; নেতা হওয়া দূর কি বাত!

পঠিত : ৫৫৩ বার

মন্তব্য: ০