ইসলাম ও মুসলিম সংক্রান্ত বিষয়ে কাফিরদের নৈতিকতার মানদন্ড!
তারিখঃ ৩০ নভেম্বর, ২০২০, ১৫:৫০
টেবিলের উপরে একটা মোটা বই-
‘মুসলানদের মানবাধিকার থাকতে নেই’। পাশেই রাখা এক মগ কফি থেকে ধোঁয়া উঠছে। আমি একটু পর পর কফিতে চুমুক লাগাচ্ছি। আর যেন শতভাবনায় মাথাকে এলোমেলা করে দিচ্ছে। দিনের আলোর মতন পরিষ্কার, ইসলাম ও মুসলিমদের ব্যাপারে কাফিরদের আচারন সবসময় স্বাভাবিক থেকে ভিন্ন। তারপরও যেন আমরা উদাসীন নিজেদের অত্ত্বিত্ব টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে। উপরুন্ত তাদের কাছেই নিজেদের সত্ত্বা বিকিয়ে দিয়েছি নিজেদের নিরাপত্তার জন্য। অথচ কাফির মুশরিকদের কাছে মুসলিমদের কোন মানবাধিকার নেই। নেই মুসলিমদের রক্তের কোন মূল্য। সেই জন্যই আফগানিস্তান থেকে ইরাক, আফগানিস্তান, কাশ্মীর, ফিলিস্তিন, চেসনিয়া, বসনিয়া, উইঘুরদের উপর নির্মম নির্যাতন, গনহত্যা স্বীকার হবার পর বিশ্ব মোড়লরা যেন অন্ধ!
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন এ কাফিদের সম্পর্কে স্পষ্ট করে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়াল বলেন,
‘দেখ! তোমরাই তাদের ভালবাস, কিন্তু তারা তোমাদের প্রতি মোটেও সদভাব পোষণ করে না। আর তোমরা সমস্ত কিতাবেই বিশ্বাস কর। অথচ তারা যখন তোমাদের সাথে এসে মিশে, বলে, আমরা ঈমান এনেছি। পক্ষান্তরে তারা যখন পৃথক হয়ে যায়, তখন তোমাদের উপর রোষবশতঃ আঙ্গুল কামড়াতে থাকে। বলুন, তোমরা আক্রোশে মরতে থাক। আর আল্লাহ মনের কথা ভালই জানেন’। [সুরা ইমরান ৩:১১৯]
অপর একটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আরোও বলেন,
হে মুমিণগণ! ‘তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।’ [সুরা মায়েদা ৫:৫১]
যেখানে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা কাফিরদের ব্যাপরে বলেছেন তারপরও যেন আমরা তাদেরকে অঘাত বিশ্বাস করি। আমাদের সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের দিকে মুখিয়ে থাকি। তাদের অফেক্ষায় থাকি, কখন তারা আমাদের সাহায্য করার জন্য ছুটে আসবে।
মদিনায় রাসূল সা: কর্তৃক ইসলামী রাষ্ট্রের কিছুকাল পরের কথা। বদর যুদ্ধের আগে মক্কার মুশরিকদের সাথে মুসলিমদের কিছু খন্ডিত যুদ্ধ হয়। সেরকম এক যুদ্ধে আবু সুফিয়ানের ছেলেকে মুসলিমরা যুদ্ধবন্দি হিসেবে ধরে নিয়ে যায়। আবু সুফিয়ানকে বলা হয়, সে যেন মুক্তিপন দিয়ে তার ছেলেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। কিন্ত আবুু সুফিয়ান সেটা প্রত্যাখান করে। এর আগে মুসলিমদের সাথে অন্য একটি যুদ্ধে আবু সুফিয়ানের ছেলে নিহত হয়। এই জেদের বসে সে মুক্তিপন দিয়ে ছেলেকে ছাড়েয়ি নেওয়ার আহব্বান প্রত্যাখ্যান করে। নিজের ছেলেকে মুক্তকরার সুযোগ থাকা সত্বেও মুসলিমদের উপর প্রতিশোধ নেবার জন্য দীর্ঘদিনের প্রথা ভাঙ্গে। কুরাইশরা হজ্জ যাত্রীদের খুবই সম্মান করতো। দল মত নির্বিশেষে হজ্জযাত্রীদের আদর-আপ্যায়ন করতো। কিন্ত সেবার আরবের এক মুসলিম হজ্জ্ব করতে গেলে তাকে আটক করে। যখন রাসূল সা: এই বিষয়টা জানতে পারেন তখন তিনি সুফিয়ানের ছেলেকে ছেড়ে দেন।
ইবনে ইসহাক্ বলেন, কুরাইশরা ঐতিহ্যগত ভাবে হাজীদের প্রতি অতিথী পরায়ন ছিলো। কিন্ত সেবারই প্রথমবারের মতন তারা এই রীতি ভঙ্গ করেন। পরবর্তী রাসূল সা: বিষয়টি জানতে পারলে সুফিয়ানের ছেলেকে ছেড়ে দেন।
লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো, মুসলিমদের প্রতি কাফেরদের আচারন স্বাভাবিক থেকে আলাদা। ইসলাম ও মুসলিম সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের নৈতিকতার মানদন্ড পাল্টে যায়। যেমন ধরুন. ভারত পাকিস্তান সীমান্তের কথা! ভারত পাকিস্তান সিমান্তে গোলাগোলি শুরু হলে লাশ পড়ে বাংলাদেশ সিমান্তে। কেন পাক-ভারত গোলাগোলিতে বাংলাদেশীদের হত্যা করে ভারত? শুধু তাই নয়, কাশ্মির সিমান্ত যেসব বিএসএফ মোতায়ন থাকতো বছরের শুরুতেই তাদেরকে বাংলাদেশ ট্রান্সফার করা হতো। কারন একটাই তখন তারা বাংলাদশী না পাকিস্তানী ধরে না। তারা ট্রীট করে মুসলিম হিসেবে।
যাই হোক, কাফিরদের কাছে সবার জন্য এক আইন আর মুসলিমদের জন্য ভিন্ন আইন। কাফিরদের মধ্যে কোন প্রজ্ঞাবান, শান্তিকামি আর মধ্যমপন্থী মানুষ থাকলেও মুসলিমদের বিষয় আসলে তাদের চেহারা পাল্টে যায়।
মন্তব্য: ০