Alapon

||মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ রাহিমাহুল্লাহ ||-০১ম পর্ব




ইরানের খুরাসানে অবস্থিত নিশাপুরকে বাবুল মাশরিক্ক(প্রাচ্যদ্বার) বলা হতো। ইতিহাসের পাতায় তার সুনাম-সুখ্যাতি জ্বলজ্বল করে জ্বলছে।
ফুল-ফলে সুশোভিত-সুরভিত এই নিশাপুর নামক নগরী। শিক্ষা, ব্যাবসা-বাণিজ্য, কুটিরশিল্প ইত্যাদিতে সেই নগরী ছিলো ভরপুর-প্রাচুর্যময়! তৎকালীন সময়ের অন্যতম একটা সেরা নগরী ছিলো নিশাপুর। কোনদিকে ছিলো না তার প্রাচুর্যের প্রখরতা! বিস্তৃর্ণ জমিনে তার নৈসর্গিক সৌন্দর্য যেনো ঠিকরে ঠিকরে পড়তো। এই নগরীর প্রসিদ্ধি, প্রাচুর্য আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চারদিকে হতো বিচ্ছুরিত।


তৎকালীন সময়ের শিক্ষা ও প্রগতিশীল সভ্যতার পাদপিঠ এমন এক ঐশ্বর্যময় নগরীর নসরাবাদের বুকেই হাজ্জাজ নির্ভেজাল আরব বংশজাত একজন বিদগ্ধ মনীষীর ঔরসে ২০৬ হিজরীর ৮২১ সনে (কারো কারো মতে ২০৪ হিজরীও হতে পারে)জন্ম নিয়েছেন হাদিস শাস্ত্রের এক শ্রেষ্ঠ তারকা।


এই মহা তারকা জন্ম নিয়েছেন যেদিন সেদিন-ই ইসলামি জগতের আরেক আলোড়ন তৈরিকারী, শাফেঈ মাজহাবের প্রবক্তা শায়খ-আল ইসলাম ইমাম মুহাম্মাদ ইবন ইদরিছ আল-শাফিঈ রাহিমাহুল্লাহ ইন্তেকাল করেন।


সদ্য জন্ম নেয়া এই তারকার নাম মুসলিম। উপনাম আবুল হুসাইন। আরব রীতি অনুযায়ী পুরো নাম হলো আবুল হুসাইন মুসলিম ইবনে হাজ্জজ ইবনে আরদ ইবনে কুশাদ আলকুশাইরী।


সে সময়ে নিশাপুর ছিলো জ্ঞান চর্চার কেন্দ্রবিন্দু। ঘর ও বাইরের পরিবেশ ছিলো জ্ঞান অর্জন ও জ্ঞান বিতরণের জন্য এক অনন্য পরিবেশ। তাঁর পিতা নিজেও ছিলেন একজন হাদিস বিশারদ।
আর তাই তাঁর শিক্ষার হাতেখড়ি নিজ পিতা-মাতার নিকটেই। আলকুরআন হিফযের মতো মহৎকর্মটি ছোটোবেলায়-ই সম্পন্ন করেন তিনি।

হাদিস শাস্ত্রে সহীহ্হাই বা মুত্তাফাকুন আলাইহি শব্দদ্বয়ের সাথে পরিচয় আছে আমাদের সকলেরই। বুখারী মুসলিম গ্রন্থদ্বয়কে একত্রে সহীহ্হাইন বলা হয়। আর একই হাদিস যা বুখারী শরীফ এবং মুসলিম শরীফেও উল্লেখ আছে - এমন হাদিসকে বলা হয় মুত্তাফাকুন আলাইহি!


তো মুসলিম শরীফের মতো জগতজোড়া সমাদৃত হাদিসগ্রন্থের সংকলকই তো তিনি। এই মুসলিম শরীফের মতো গ্রন্থের লেখক-সংকলন করেছেন যিনি তাঁর স্মৃতির প্রখরতা, মেধার প্রগাঢ়তা কতোটা বেশি তা তো সহজেই অনুমেয়!

এই মেধাবী মানুষের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় নিশাপুরের আদর্শ বিদ্যালয়ে। সেখানেই তিনি অসাধারণ মেধা-স্মৃতিশক্তির প্রখরতা প্রদর্শন করেন। নিরবচ্ছিন্ন জ্ঞানসাধনার সাক্ষর রাখেন সেসময়েই। সেখানেই।


সে সময়েই তাঁর চরিত্রের মাধুর্যতা, ব্যবহারের অমায়িকতা ছাত্র ও শিক্ষকদের সম্মুখে প্রষ্ফুটিত হয়ে ওঠে। তাঁর মার্জিত আচরণ আর অমায়িক ব্যবহারে মুগ্ধ হয় সকলেই।


পিতা-মাতার প্রতি অগাধ আন্তরিকতা, প্রবল ভালোবাসা, প্রচণ্ড ভক্তি ও শ্রদ্ধা বাল্যকাল থেকেই। কখনোই যেতেন না তাঁদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে। করতেন কোনো কাজ। উপেক্ষা করতেন না তাঁদের কোনো অাদেশ অনুরোধ ও উপদেশ!


খুবই অল্প বয়সেই বার্ধক্যের সুস্পষ্ট চাপ ফুটে ওঠে ওনার মধ্যে। শুভ্রতায় ছেয়ে যায় চুল-দাড়িগুলো। সেদিকে করতেন না কোনো কোনো ভ্রুক্ষেপ। একেবারেই ভ্রুক্ষেপহীন থাকতেন সে-সব নিয়ে।

আমাদের চুলগুলো একটু পেকে গেলে চিন্তিত হয়ে পড়ি। মন খারাপের জগতে ডুব দিয়ে ফেলি। নিজেকে আনস্মার্ট আনস্মার্ট মনে করতে থাকি। এবং করিও। নানাবিধ কালার করি চুলের মাঝে।
তবুও যদি একটু স্মার্ট লাগে আমাকে -এই চিন্তায়। এই উদ্দেশ্যে...

কিন্তু জ্ঞান চর্চায়, দ্বীনের প্রচার-প্রসারে যারা নিবেদিত প্রাণ তাঁদের সে-দিকে মনোনিবেশ করার সুযোগ-সময় কোথায়?

এই যে অতি-অল্পবয়সেই চুল-দাড়িতে শুভ্রতার বন্যা নেমে এসেছে -- সেটাকে তিনি আভিজাত্য হিশেবেই নিয়েছেন, দেখেছেন। এসব নিয়ে হাহুতোশ না করে জ্ঞানসাধনায় আর উম্মাহর কল্যাণকামনায় নিজেকে রেখেছেন ব্যতিব্যস্ত!


ক্লাসেও ছিলেন পূর্ণদ্যোমে সক্রিয়-মনযোগী। যে হাদিসটা শিক্ষকে বলতেন তা-ই লিপিবদ্ধ করে রাখতেন তিনি। সুযোগ পেলেই অকারণে খোশগল্পে মেতে থাকতেন না। সহপাঠীদের সাথে তা নিয়ে আলোচনায় বসতেন। নিজেদের মধ্যেই মজলিস গড়ে তুলতেন।

উস্তাদের লেকচার সুগভীর মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করতেন। তন্ময় নেত্রে তাকিয়ে শিক্ষকের চেহারার মাঝে। প্রতিটি কথা ধারণ করতে চেষ্টা করতেন নিজে মগজের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে!


||মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ রাহিমাহুল্লাহ ||-০১ম পর্ব
~রেদওয়ান রাওয়াহা

পঠিত : ৩০৩ বার

মন্তব্য: ০