Alapon

বাংলাদেশে জন্ম নেওয়াটাই কি তবে আজন্ম পাপ...?



সকালবেলা ফজর নামাজ পড়ে বাইসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। যদিও কুয়াশা ছিল, কিন্তু কুয়াশা অনুপাতে ততো প্রকট ঠান্ডা লাগছিল না। কিন্তু যতোটুকু লাগছিল, তাতে শরীরে কাপন ধরার জন্য যথেষ্ট।

সাইকেল নিয়ে কতকদূর যাওয়ার পর দেখলাম, কমলাপুর স্টেশনের বাইরে কতক মানুষ জড়সড়ো হয়ে শুয়ে আছে। যা পেয়েছে তাই জড়িয়ে ধরে শীত নিবারনের চেষ্টা করছে। কিন্তু শুধু মেঝের উপর ঘুমালে কি আর শীত নিবারণ করা সম্ভব! যেখানে আমরা ঘরের ভিতরেই মেঝেতে খালি পায়ে হাটছি না, জুতা ব্যবহার করছি, সেখানে তারা খালি মেঝেতে ঘুমাচ্ছে। মেঝের ঠান্ডা আরও মারাত্মক; তা বুকে কফ জমায় এবং একসময় নিউমনিয়াও হতে পারে। কিন্তু তারা কী করবে, তাদের মাথা গুজার মত তো কোনো ঠাঁই নেই।

গত কয়েকদিন আগে অনেকটা রাত করেই বাসায় ফিরছিলাম। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার দিয়ে আসার সময় দেখলাম, শহীদ মিনারের দেওয়ালের উপর সাইর বেঁধে মানুষ ঘুমাচ্ছে! দেওয়ালের উপর কোনো রকম একটা কম্বল মুড়ি দিয়ে, কারো কারো গায়ে তো কম্বলও নেই, হাত পা গুটি সুটি করে ঘুমাচ্ছে। তাদের মাথা গোঁজার জন্য না আছে ঘর, শীত নিবারনের জন্য না আছে কম্বল। এই দেশে জন্মটাই যেন তাদের আজন্মপাপ!

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরে প্রায় তিন লক্ষ মানুষ খোলা আকাশের নিচে ঘুমায়। এই মানুষগুলোর দায়িত্ব কার? অবশ্যই সরকারের। কিন্তু সরকার তাদের মাথার উপরে ছাদ তোলার জন্য অর্থাৎ বসবাসের জন্য কোনো ঘর বানানোর চেষ্টা করছে বলে জানা যায় না। এমন কোনো প্রকল্পের কথাও পত্রপত্রিকায় দেখা যায় না। যে দেশের রাজধানীতে এখনও তিন লক্ষ মানুষ খোলা আকাশের নিচে ঘুমায়, সে দেশের কোটি কোটি টাকা খরচ করে ভাস্কর্য নির্মাণ শুধু অযৌক্তিকই নয়; অমানবিকও বটে।

চলুন দেখে আসি, সারাদেশে ভাস্কর্য নির্মাণবাবদ সরকার কত টাকা খরচ করেছে ও করছে। চট্টগ্রামের টাইগারপাসে মাটির নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণে সরকার ব্যয় করেছে ৮৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। নরসিংদিতে নির্মিত ‘মুক্তির ডাক’ ভাস্কর্য নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে সাড়ে ৪২ লাখ টাকা। রাজধানীর পূর্বাচলে নির্মিত ৭১ ফুট উঁচু বঙ্গবন্ধুর তর্জনি ভাস্কর্য নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৫৫ কোটি ১ লাখ ৬৪ টাকা। রাঙ্গামাটিতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় এখনো নির্ধারণ করা যায়নি। কিন্তু সেখানে ইতিমধ্যেই ৪ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। ঝিনাইদহে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাদ্যযন্ত্র ভিত্তিক ভাস্কর্য নির্মিত হচ্ছে। যার আনুমানিক ব্যয় ২ লাখ টাকা। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের ১ বছর পেরুতে না পেরুতেই তা বিনষ্ট হয়ে গেছে। ভাস্কর্য সংস্কারে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে দু দফায় ১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। খুলনা প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে। এই ভাস্কর্য নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৭ লাখ টাকা। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে স্বাধীনতা ভাস্কর্য। এই ভাস্কর্য নির্মাণে হচ্ছে ৮ লাখ টাকা। বিজয় ৭১ ভাস্কর্য নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২৪ লাখ টাকা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত ‘অদম্য বাংলা’ ভাস্কর্য নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৪২ লাখ টাকা।

এই সামান্য ভাস্কর্য নির্মাণে সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করছে, অথচ দেশের মানুষ না খেয়ে আছে, খোলা আকাশের নিচে শীতে কাঁপছে কিন্তু সরকার তাদের শীতনিবারণের ও ঘরের অভ্যন্তরে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করছে না। ধর্মীয় দিক বিবেচনায় না হলেও অন্তত মানবিক দিক বিবেচনা করেও সরকারের উচিত গার্বেজ মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণে টাকা ব্যয় না করে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করনে ব্যয় করা।

পঠিত : ৪১৬ বার

মন্তব্য: ০