Alapon

❝ মূর্তি ভাস্কর্য বনাম ইসলাম ❞

❝ মূর্তি ভাস্কর্য বনাম ইসলাম ❞


.
.
ভেবেছিলাম মূর্তি নিয়ে আর লিখবো না! কিন্তু না লিখে কোনো উপায় দেখছি না!কিছুদিন ধরে দেখতেছি কিছু বন্ধু বুজে হোক আর না বুজে হোক কিছু তথাকথিত সুশীল আর নাস্তিকদের ফাদে পা দিয়ে মূর্তিকে ভাস্কর্য্য বলে হালাল করার জন্য চেষ্ঠা করছে!

❝ আসুন আগে দেখে নেই মূর্তিপূজা নয় ; শুধু মূর্তি আর ভাস্কর্য সম্পর্কে ইসলাম কি বলেঃ

তোমরা পরিহার কর অপবিত্র বস্ত্ত অর্থাৎ মূর্তিসমূহ এবং পরিহার কর মিথ্যাকথন।’ [সূরা হজ্জ : ৩০]

এইখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে মূর্তি বা ভাস্কর্য্যকে পরিহার করতে!শুধু মূর্তিপূজাকে নয়!আরো আছে যেখানে মূর্তি/ভাষ্কর্যকে হারাম করা হয়েছে!

"আল্লাহ ও তার রাসূল মদ ও মূর্তি এবং শুকর ও মৃত প্রাণী বিক্রি করা হারাম করেছেন।’ [সহীহ বুখারী হা. ২২৩৬]

শুধু মূর্তি নয় এমনকি কোনো প্রানীর ছবি পর্যন্ত নিষিদ্ধ!

যে গৃহে কুকুর অথবা কোনো প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না। [আবু তালহা রাঃ থেকে বোখারী, খ.২/পৃ. ৮৮০]

❝ মূর্তিকে হারাম করেই ক্ষান্ত হননি রিতীমতো মূর্তিকে ভেঙ্গে ফেলার আদেশ করা হয়েছেঃ

‘আল্লাহ তাআলা আমাকে প্রেরণ করেছেন আত্মীয়তার সর্ম্পক বজায় রাখার, মূর্তিসমূহ ভেঙ্গে ফেলার, এবং এক আল্লাহর ইবাদত করার ও তাঁর সঙ্গে অন্য কোনো কিছুকে শরীক না করার বিধান দিয়ে। [সহীহ মুসলিম হা. ৮৩২]

কাফের সম্প্রদায়ের দুটো বৈশিষ্ট্য হচ্ছে :
১. মিথ্যা উপাস্যদের পরিত্যাগ না করা।
২. মূর্তি ও ভাস্কর্য পরিহার না করা।

'এবং তারা বলেছিল, তোমরা কখনো পরিত্যাগ করো না তোমাদের উপাস্যদেরকে এবং কখনো পরিত্যাগ করো না ওয়াদ্দ, সুওয়া, ইয়াগূছ, ইয়াঊক ও নাসরকে।’ -[সূরা নূহ : ২৩]

যারা মূর্তি বা ভাস্কর্য্য পরিহার করতে পারে না তারা কি কাফের নয়?

❝ কুরআন মজীদে মূর্তি ও ভাস্কর্যকে পথভ্রষ্টতার কারণ হিসেবে চিহ্ণিত করা হয়েছেঃ

'ইয়া রব, এরা (মূর্তি ও ভাস্কর্য) অসংখ্য মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে!’ [সূরা ইবরাহীম : ৩৬]

এগুলো(মূর্তি/ভাস্কর্য) অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে।’ [সূরা নূহ :২৪]

কুরআনের ভাষায় মূর্তি ও ভাস্কর্য হল বহুবিধ মিথ্যার উৎস।

"তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে উপাসনা কর (অসার) মূর্তির এবং তোমরা নির্মাণ কর ‘মিথ্যা’। -সূরা আনকাবুত : ১৭

এবার আসি প্রতিকৃতি (ভাস্কর্য/মূর্তি/চিত্রকর্ম) নির্মানকারীদের সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?

"প্রতিকৃতি তৈরিকারী (ভাস্কর, চিত্রকর) শ্রেণী হল ওইসব লোকদের অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে কিয়ামত-দিবসে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে।’ -সহীহ বুখারী হা. ৫৯৫০

"এই প্রতিকৃতি নির্মাতাদের (ভাস্কর, চিত্রকরদের) কিয়ামত-দিবসে আযাবে নিক্ষেপ করা হবে এবং তাদেরকে সম্বোধন করে বলা হবে, যা তোমরা ‘সৃষ্টি’ করেছিলে তাতে প্রাণসঞ্চার কর!’
-সহীহ বুখারী হা. ৭৫৫৭, ৭৫৫৮;

"উল্কি অঙ্কণকারী ও উল্কি গ্রহণকারী এবং প্রতিকৃতি প্রস্ত্ততকারীদের (ভাস্কর, চিত্রকরদের) উপর লানত করেছেন। -সহীহ বুখারী হা. ৫৯৬২

❝ প্রতিকৃতি (মূর্তি/ভাস্কর্য) নির্মানকারীকে জালেম বলা হয়েছেঃ

"ওই লোকের চেয়ে বড় জালেম আর কে যে আমার সৃষ্টির মতো সৃষ্টি করার ইচ্ছা করে। তাদের যদি সামর্থ্য থাকে তবে তারা সৃজন করুক একটি কণা এবং একটি শষ্য কিংবা একটি যব! -সহীহ বুখারী হা. ৫৯৫৩

এবার তো মূর্তি/ভাস্কর্য্য সব ইসলামে নিষিদ্ধ বুজলাম!কিছু আবাল আসবে, বলবে এইসব ভাস্কর্য্য/মূর্তি পূজা করার উদ্দেশ্যে তৈরী হলেই হারাম;অন্যথায় নয়!আসুন দেখে আসি মূর্তিপূজার ইতিহাস!

" নূহ আ.-এর সম্প্রদায়ের কিছু (পাঁচজন) পুণ্যবান লোক মৃত্যুবরণ করলে তখন শয়তান তাদের সম্প্রদায়কে এই কুমন্ত্রনা দিয়েছে যে, তাদের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলোতে মূর্তি স্থাপন করা হোক এবং তাদের নামে সেগুলোকে নামকরণ করা হোক। লোকেরা এমনই করল। ওই প্রজন্ম যদিও এই সব মূর্তির পূজা করেনি কিন্তু ধীরে ধীরে প্রকৃত বিষয় অস্পষ্ট হয়ে গেল এবং পরবর্তী প্রজন্ম তাদের পূজায় লিপ্ত হল। -সহীহ বুখারী হাদীস : ৪৯২০

ইতিহাসে আমরা দেখতে পেলাম মূর্তিগুলো যারা নির্মাণ করেছিল তারা কিন্তু উপাসনার উদ্দেশ্যে করেনি।তারাও পূজা করার নিয়্যত করেনি। কিন্তু শয়তান তাদের এ কাজটিকে তাদের কাছে সুশোভিত করেছে।

জানি জানি এখনো সন্তোষ্ট হোননি! আপনাদের পেটে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তাই না? মূর্তি ও ভাষ্কর্য্য এক না! সেটাই তো বলতে চাচ্ছেন? ডিকশনারী আর অভিধান তো বুজেন? এগুলো তো আর আজকালকের মধ্যে লেখা হয় নি! খুলে দেখুন না কি লেখা আছে!

সংসদ বাংলা অভিধান অনুসারে মূর্তি এবং ভাস্কর্য একই জিনিস; দুটির মাঝে শাব্দিক পার্থক্য ছাড়া কোনো পার্থক্য নেই।

মূর্তি অর্থ ছায়া বা এমন আকৃতি-শরীর, যার ছায়া আছে।-503
ভাস্কর্য অর্থ ধাতু প্রস্তর প্রভৃতি দ্বারা মূর্তি নির্মাণশিল্প!-468

তবে অক্সফোর্ড ডিকশনারী অনুযায়ী মূর্তি বা ভাস্কর্য্য একই জিনিস হলেঔ সামান্য পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়!

ভাস্কর্য অর্থ Sculpture (স্কালপচার)। যে আকৃতি বা ছবি খোদাই করে তৈরী করা হয়, তাকে ভাস্কর্য বলা হয়। যেমন বলা হয় ‘ভাস্কর্য বিদ্যা’ এর অর্থ হলঃ The art of carving বা খোদাই বিদ্যা। অন্যদিকে, মূর্তি অর্থ হল ছায়া। অর্থ্যাৎ এমন আকৃতি বা শরীর, যার ছায়া আছে।
- সংসদ বাংলা অভিধান পৃষ্ঠা-৫০৩
ভাস্কর্য ও মূর্তির আভিধানিক অর্থে স্পষ্ট পার্থক্য দেখা গেল। ফলাফল দাড়াল, যে সকল আকৃতি খোদাই করে তৈরী করা হয়, তা হল ভাস্কর্য। রৌদ্র বা আলোর বিপরীতে এর ছায়া পড়ে না। রৌদ্রে বা আলোর বিপরীতে যেসব আকৃতির ছায়া প্রকাশ পায়, তা হল মূর্তি। বিভিন্ন অভিধানে মোটামোটি এভাবেই বলা হয়েছে!

পূজা করা হলেই মূর্তি হবে আর পূজা না করা হলে ভাস্কর্য হবে এ কথা ঠিক নয়। সুতরাং মূর্তি কিংবা ভাস্কর্যের পূজা করা হোক না হোক উভয়টি ইসলামে নিষিদ্ধ!

তথাকথিত সুশীলরা খুব ভাল করেই জানেন যে, ভাস্কর্য ও মূর্তির মধ্যে আভিধানিক পার্থক্য কি? কিন্তু তারা ওটা নির্মাণের পক্ষে। আর মাদ্রাসার ছাত্ররা যেহেতু এর মধ্যকার পার্থক্যগুলো বুঝে না, তাই তাদেরকে ভুল বুঝানো যে, ওটি মূর্তি নয়। কাজেই তোমরা থেমে যাও। যা করেছ তা ভুল ছিল। তোমরা বোকা।চলেন কিছু উদাহরন দেই-

অনেকে হয়তো লেলিনের মূর্তির কথা শুনেছেন!এমনিভাবে যখন সাদ্দামের আকৃতি টেনে নামানো হল, তখন সকলে বলল, “সাদ্দামের মূর্তি নামিয়ে ফেলা হয়েছে।” তখন কেহ ভাস্কর্য বলেছে বলে শুনেছেন? আরো আছে-ফেরআউনের মূর্তি, আব্রাহাম লিঙ্কনের মূর্তি ইত্যাদি। এগুলো থেকে প্রমাণ পাওয়া গেল যে, ওই আকৃতিগুলোর ছায়া ছিল ও খোদাই করে নির্মিত নয় বলে ওগুলো মূর্তি;ভাস্কর্য্য নয়! যেমন-হাইকোর্টের পিছনে বসানো থেমিসের গ্রীক মূর্তি!

কিছু নামধারী মুসলিম থেকেও ব্যাপারটা আরো একটু পরিষ্কার হওয়া যাক! মুক্তমনা ব্লগ আর বিতর্কিত উইমেন চ্যাপ্টারের লেখক হাসান মাহমুদের মতে- নবীজি (সা.) মূর্তি-ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে সেটা নাকি কোরানের আয়াতের বিরুদ্ধে যেতো। আরাধনা করলে সেটা হয় প্রতিমা (হা হা! মূর্তি নয়!) আর না করলে হয় ভাস্কর্য (মূর্তি)। ইসলাম প্রতিমার বিরুদ্ধে, ভাস্কর্য ও মূর্তির বিরুদ্ধে নয়!

ইসলাম সংস্কারে যিনি রাজা রামমোহন রায় আর ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর হতে চান তিনি কি জানেন না ইসলাম হচ্ছ পৃথিবীর একমাত্র ধর্ম যেটি সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকে অবিকৃত আছে!তবে এই ব্লগার আর যাই হোক একটা বিষয় স্বীকার করে গেছেন মূর্তি আর ভাস্কর্য একই জিনিস! আর মূর্তি আর ভাস্কর্য যে ইসলামে নিষিদ্ধ সেটাতো কুরআন আর হাদীস থেকে জানতেই পারলেন! এসব ব্লগারদের জন্যই আল্লাহর বানী-

"যারা দীন সম্পর্কে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়, তাদের কোন দায়িত্ব তোমার নয়”। [সূরা আল-আন‘আম: ১৫৯]

(নিম্নোক্ত অংশটি লেখার সময় -আব্দুল্লা শহীদ আব্দুর রহমান ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি)

কিছু দিন আগে হাসান মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি দাবী করেছেন ইসলামে নাকি শুধু প্রতিমা নিষিদ্ধ;মূর্তি/ভাস্কর্য বৈধ!আর এই লেখাটি কিছূ দালাল মিডিয়াও প্রকাশ করেছে!
এখন সকল ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিকদের হাতিয়ার এসব প্রশ্ন!আমরা দেখবো কতটা বানোয়াট আর দুর্বল হাদীস দিয়ে সে এই দাবী করেছে!

যদিও এই লেখকের অনেক আগেই হুমায়েন আহমেদ একই দাবী করেছিলো 2005 এ "এখন আমরা কোথায় যাবো?কার কাছে যাবো?"

শিরোনামে যেটি প্রথম আলোয় প্রকাশ হয়েছিলো!লেখক হাসান মাহমুদ শুধু "মূর্তি বিড়ম্বনার ইসলামি আঙ্গিক" শিরোনামে বর্তমান প্রেক্ষাপটের সাথে কিছু তথ্য যুক্ত করেছেন!

শুরুতে যেনে নেই কে এই হাসান মাহমুদ! বাংলাদেশে নাস্তিকদের প্রথম মাদারব্লগসাইট মুক্তমনার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং মুক্তমনার উপদেষ্ঠা মন্ডলীর সদস্য !মুক্তমনায় তার আইডি নাম- ফতেমোল্লা!

হাসান মাহমুদ বা ফতেমোল্লা রিভার্স চরিত্র, সেটা জানার জন্য মুক্তমনায় তার কিছু ইংরেজী আর্টিকেলের শিরোনাম খেয়াল করুন:
১) ‘sharia – the most dangerous book in the world’
২) ‘sharia, the most dangerous law in the world - 2’
৩) ‘sharia : the anti – hero’
৪) ‘sharia : the women-eater’
৫) ‘sharia – the root cause of violence’
৬) ‘sharia - out of context’

এবার আসি তাদের যুক্তিগুলোতে!প্রথমে তিনি ঊল্লেখ করেছেন মহানবীর মৃত্যুর শত বছর পর জন্ম নেয়া মহানবীর (সা.) প্রথম জীবনীকার ইবনে ইসহাকের লেখা দি লাইফ অব মোহাম্মদ গ্রন্থের সেই বিতর্কিত ঘটনাটি !

আমাদের মহানবী (সা.) কাবা শরিফের ৩৬০টি মূর্তি অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। দেয়ালের সব ফ্রেসকো নষ্ট করার কথাও তিনি বললেন। হঠাত তাঁর দৃষ্টি পড়ল কাবার মাঝখানের একটি স্তম্ভে। যেখানে বাইজেন্টাইন যুগের মাদার মেরির একটি অপূর্ব ছবি আঁকা। নবীজী (সা.) সেখানে হাত রাখলেন এবং বললেন, ‘এই ছবিটা তোমরা নষ্ট কোরো না।’ কাজটি তিনি করলেন সৌন্দর্যের প্রতি তাঁর অসীম মমতা থেকে।

যদি ইবনে ইসহাকের বর্ণিত তথ্য সত্য হয়ে থাকে তাহলে জানার ইচ্ছা জাগে না? যে ছবিটি রাসূলুল্লাহ সা. রেখে দিলেন সেটি কোথায় গেল? কোন মাদ্রাসার ছাত্র সেটা নষ্ট করে দিল?
ইসহাক তো কোনো সাহাবী ছিলো না!তাছাড়া সহীহ হাদিসইতো নবীজীর প্রথম ও বিশ্বস্ত জীবনী!তাহলে ঘটনাটি কোনো সহী হাদীসেই থাকার কথা!

" রাসূল (সাঃ) বলেছেন- আমি তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি যতদিন আকড়ে ধরবে ততদিন পথভ্্রষ্ট হবে না। একটি হলো আল্লাহর কিতাব এবং অপরটি আমার সুন্নাহ। [মিশকাত-১ম খন্ড হাদিস নং-১৭৭]

নবীজি বলেন নি ওনার জীবনী রেখে যাচ্ছে যেটা ইসহাক লিখেছে! সেখানে ভুল থাকতেই পারে! তাই বলে কুরআন হাদীস বাদ দিয়ে কারো বইকে মুসলমান রেফারেন্স হিসাবে নিতে পারে না!মুসলমানগণ ইবনে ইসহাকের তথ্য গ্রহণ করবেন, না আল্লাহর রাসূল সা. এর নির্দেশ মেনে চলবেন?

তারপরে তিনি জানালেন শেখ সাদীর মাজারের সামনেই একটি মর্মর পাথরের ভাস্কর্য আছে! ইসলামের দুজন মহান সুফিসাধক জালালুদ্দীন রুমি;ফরিদউদ্দীন আত্তার (নিশাপুর) ইরানে তাদের মাজারের সামনেও তাঁর আবক্ষমূর্তি আছে।
শেখ সাদী, রূমী, আত্তারের কবরে যে সকল মূর্তি আছে সেগুলো তারা নিজেরা স্থাপন করেননি। করার জন্য কাউকে নির্দেশও দিয়ে যাননি।

আপনারা অনেকে বলেছেন, ইরানে মূর্তি আছে, ইরাকে আছে, লিবিয়াতে মূর্তি আছে, ইন্দোনেশিয়াতে মূর্তি আছে। আরো অনেক মুসলিম দেশে আছে। তাহলে আমাদের দেশে থাকলে ক্ষতি কী?

বিভিন্ন মুসলিম দেশে যে সকল মূর্তি স্থাপিত আছে, সেগুলো তাদের সমস্যা। দায় তাদের। এর সাথে ইসলামের কী সম্পর্ক? ইসলামের সম্পর্ক হল, আল্লাহর বাণী ও রাসূলের আদর্শের সাথে। কুরআন ও সুন্নাহতে যা পাওয়া যাবে সেটা ইসলাম বলে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। কোন মুসলমানের আচার-আচারণ, কাজ-কর্ম ইসলাম নয়। যদি তা কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা অনুমোদিত হয়, তবে ভিন্ন কথা।যেমন-কোনো মুসলিম দেশের লোক যদি দাড়ি না রাখে তার মানে তো এই নয় দাড়িকে হারাম করা হয়েছে!
মুসলিম দেশে কোন খারাপ বস্তু থাকলে সেটা গ্রহণ করা যায়, কিন্তু কোন ভাল বিষয় থাকলে তা গ্রহণ করা যায় না। সেটা যতই জনকল্যাণ মূলক হোক। এটাই মনে হয় আপনাদের মূলনীতি। অনেক মুসলিম দেশে শরীয়াহ আইন চালু আছে;সেখানে প্রকাশ্যে বেপর্দা হয়ে চলাফেরা করা নিষেধ;মদ পান করা;বিবাহ বর্হিভূত অবৈধ সম্পর্ক করা ; সুদ খাওয়া; নারীকে সর্বোচ্চ ক্ষমতায় বসানো হয় না; গণতন্ত্র নেই। বরং রাজতন্ত্র আছে!এগুলো গ্রহণ করা যায় না?
গ্রহণ করার কথা বলাও অপরাধ। আর মুসলিম দেশে যদি ইসলাম পরিপন্থী কিছু থাকে তাহলে সেটা আমাদের অনুসরণ করতে হবে?

❝ আপনাদের ব্যাপারে কী তাহলে আল্লাহর সে বাণীই প্রযোজ্য, যেখানে তিনি বলেছেনঃ

“তারা সঠিক পথ দেখলেও তাকে পথ হিসাবে গ্রহণ করবে না। আর ভ্রান্ত পথ দেখলে পথ হিসাবে গ্রহণ করবে। এটা এ জন্য যে, তারা আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করছে এবং সে সম্পর্কে তারা ছিল অমনোযোগী।” আল আরাফ -146

তারপরে তিনি এই ঘটনাটি বলেন-
৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে হজরত ওমর (রা.) জেরুজালেম জয় করেন। প্রাণীর ছবিসহ একটি ধুপদানি তাঁর হাতে আসে। তিনি সেটি মসজিদ-ই-নব্বীতে ব্যবহারের জন্য আদেশ দেন।

উমার রা. ধুপদানিটি মসজিদে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন প্রাণীর ছবিটি প্রদর্শনের জন্য নয়। ধুপদানিটি ধুপ দানের কাজে ব্যবহারের জন্য। প্রাণীর ছবি অস্পষ্ট থাকলে এ ধরনের সামগ্রী ব্যবহার করতে সমস্যা নেই।

তিনি সবক্ষেত্রে শুধু বিভিন্ন বইয়ের কাহিনী উল্লেখ করেছেন!কোনো হাদীসও নয়!একমাত্র কুরআনের যে আয়াতটি উল্লেখ করেছেন-

"তারা সোলায়মানের (আ.) ইচ্ছানুযায়ী দূর্গ, ভাস্কর্য, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত।” [সুরা সাবা, আয়াত ১৩]

এখানে যে শব্দটির অর্থে ‘‘ভাস্কর্য’’ করা হয়েছে সেটির আরবী হল وَتَمَاثِيلَ সউদী আরব হতে প্রকাশিত এবং পরিবেশিত তাফসীরে বলা হয়েছে যে, এর ‘‘অর্থ হল ছবি, নক্সা, আকৃতি। প্রাণী ব্যতিত অন্য বস্তুসমূহের ছবি বানানো হত।এইখানে ভাস্কর্য অনুবাদ ভুল !

প্রাণী ব্যতীত যে কোন বস্তুই হোক তার ছবি, ভাস্কর্য, মূর্তি ইত্যাদি অংকন, নির্মাণ, স্থাপন ও প্রদর্শন করা যাবে। কারণ, হাদীসে যে সকল নিষেধাজ্ঞার কথা এসেছে তার সবই ছিল প্রাণীর ছবি বিষয়ে।

কেহ যদি কোন ফুল, ফল, গাছ, নদী, পাহাড়, চন্দ্র, সুর্য, ঝর্ণা, জাহাজ, বিমান, গাড়ী, যুদ্ধাস্ত্র, ব্যবহারিক আসবাব-পত্র, কলম, বই ইত্যাদির ভাস্কর্য তৈরী করে সেটা ইসলামে অনুমোদিত। যেমন-আমাদের দেশের শাপলা চত্বর!

এবার চলুন মা আয়েশার ছোট বেলার পুতুল খেলার সেই কাহিনী শুনে আসি!
আমরা সবাই জানি, হজরত আয়েশা (রা.) নয় বছর বয়সে নবীজীর (সা.) সহধর্মিণী হন। তিনি পুতুল নিয়ে খেলতেন। নবীজীর তাতে কোনো আপত্তি ছিল না, বরং তিনিও মজা পেতেন এবং কৌতুহল প্রদর্শন করতেন।

এবার জানুন প্রকৃত ঘটনা!আয়েশা রা. যখন পুতুল নিয়ে খেলতেন তখন তিনি বয়সে ছোট ছিলেন বলে ইসলামী অনুশাসন তার উপর বর্তায়নি। বিধায় রাসূল সা. তাকে পুতুল খেলতে নিষেধ করেননি।
যেমন সাত বছরের আগে নামাজ রোযাও ফরজ নয়; ছোট শিশুদের উপর ফরয গুলো প্রযোজ্য নয়! তার মানে এই নয় বড় হয়ে গেলে নামাজ রোযা করবে না! যেমন-আয়েশা রা. যখন বয়স্ক হলেন, তখন সামান্য ক্ষুদ্র ছবিও তাকে রাখতে নিষেধ করেছেন। আয়েশা রা. এর মুখেই শোনা যাক। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সা. একদিন সফর থেকে ফিরে আসলেন। আমি একটি পর্দা টানিয়েছিলাম। যাতে ক্ষুদ্র প্রাণীর ছবি ছিল। রাসূলুল্লাহ সা. যখন এটা দেখলেন, ক্রোধে তার মুখমণ্ডল বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি বললেন, হে আয়েশা! কেয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি তার হবে, যে আল্লাহর সৃষ্টির সাদৃশ্য নির্মাণ করে।’ অতপর আমি সেটাকে টুকরো করে একটি বা দুটি বালিশ বানালাম।
সহীহ বুখারী হা. ৫৯৫৪; সহীহ মুসলিম হা. ২১০৭)

তাছাড়া অনেক ঘটনা ইসলামী আইন হওয়ার আগে পরেও হতে পারে!
আয়েশার এই ঘটনাটি মূর্তি নিষিদ্ধ করার আগের ঘটনাও বটে!একটা উদাহরন দেই-ইসলামে প্রথমে দাসী হালাল ছিলো পরে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে!তাই এখন কেউ চাইলেই দাসী ব্যবহার করতে পারবে না কারন দাসী ব্যবহার করা যেতো তা নিষিদ্ধ হবার আগে শুধু!এই বিষয়টাও দেখতে হবে!আর একটা হাদীস দিয়ে পরিষ্কার করি!

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বীয় গৃহে (ক্রুশের বা প্রাণীর) ছবিযুক্ত কোন বস্তুই রাখতেন না। দেখলেই তা ভেঙ্গে চূর্ণ করে দিতেন’। (বুখারী হা/৫৯৫২; মিশকাত হা/৪৪৯১)

তারপরে তিনি বলছেন মুসলিম শাসকরা অর্ধৈক পৃথিবী শাসন করেছে!সব মূর্তি ভেঙ্গে দেয়নি কেনো?
মুসলিমরা প্রতিমা ভাঙ্গেন নি কারণ তারা অন্য ধর্মের প্রতি সম্মান রাখেন। যখন কোন অমুসলিম তার ঘরে বা স্বীয় উপাসনালয়ে প্রতিমা, ভাস্কর্য রাখেন তখন সেটা ভাঙ্গা হারাম। ইসলাম এর কোন অনুমতি প্রদান করেনি।

এরপর তিনি আমেরিকার মহানবীর ভাস্কর্যের কথা বলেছেন!তিনি নিজেই উল্লেখ করেছেন বিভিন্ন মুসলিম দেশের অনুরোধে ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে!তার মানে বুজাই যাচ্ছে ইসলামে মূর্তি /ভাস্কর্য নিষিদ্ধ বলেই সব মুসলিম দেশ আপত্তি জানিয়ে অনুরোধ করেছিলো!না হলে তো করতো না!

তিনি যতগুলো রেফারেন্স দিয়েছেন সব গুলো সন্দেহ জনক!যেখানে কুরআন আর হাদীসে অসংখ্য রেফারেন্স স্পষ্ট মূর্তি/ভাস্কর্য নিষিদ্ধ করছে সেখানে আমরা কেনো সন্দেহ জনক রেফারেন্স গ্রহন করবো?

"রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, ‘তুমি সন্দিগ্ধ বিষয় পরিত্যাগ করে নিঃসন্দেহ বিষয়ের দিকে ধাবিত হও’। তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি সন্দিগ্ধ বিষয়ে পতিত হ’ল, সে ব্যক্তি হারামে পতিত হ’ল’।

বাস্তবে তিনি কোন আয়াত, হাদীছের আরবী পাঠ প্রদান করতে সক্ষম হননি। স্রেফ কিছু অনুবাদ পেশ করেছেন। হয়তো তিনি আরবী ভাষায় অজ্ঞ হবার কারণেই এমনটা হয়েছে। আর আরবী ভাষায় অজ্ঞ হলে ইসলামের কোন বিষয়ে মতামত প্রদান করা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। যা তার পরবর্তী লেখনীই প্রমাণ করছে। তিনি ‘‘তারিখ আল তারারি ’’ নামের গ্রন্থের উল্লেখ করেছেন যেটি বাস্তবে বিশ্বের বুকে নেই। সঠিক নামটি হল ‘‘তারীখ আত-ত্বাবারী।’’ যেটি ইমাম ইবনে জারীর আত-ত্বাবারী রহিমাহুল্লাহ (মৃঃ ৩১০ হিঃ) আরবী ভাষায় রচনা করেছেন। যিনি গ্রন্থের নাম লিখতেই ভুল করেন তিনি কেন এ বিষয়ে লিখতে মনস্থ করলেন তা বোধগম্য নয়।

এরপর তিনি মূর্তি বিরোধী আন্দোলনকে সংবিধান বিরোধীও বলেছেন!

আসলে কি তাই?সংবিধানে আছে, ‘‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম…..।’’ (দেখুন : বাংলাদেশের সংবিধান পৃঃ ৯, মেট্রো পাবলিকেশন্স, ঢাকা)। যেহেতু ইসলামে এভাবে ভাস্কর্য তৈরী করা হারাম সেহেতু বাংলাদেশের ‘‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’’ মোতাবেক এভাবে কোন মূর্তি, ভাস্কর্য রাখা অবৈধ বলা যেতেই পারে!যদিও রাষ্ট্রীয় ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়িতে যেতে যাই না!

এবার আসি কেহ যদি মূর্তি ভাঙ্গতে চাইলে আপনাদের ব্যাথা লাগে কেন? এ ব্যাথা লাগার অনুভূতিই প্রমাণ করে আসলে আপনাদের ভালবাসা ও সম্মান মূর্তির জন্য নিবেদিত। এটাই তো স্পষ্ট মূর্তিপূজা। ভাবতে আশ্চর্য লাগে, কত বড় মূর্খতা ও!

"ইবরাহীম আ. তার পিতা ও সমপ্রদায়কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা এ মূর্তিগুলোর সামনে অবস্থান কর কেন?’ তারা বলল, ‘আমাদের পূর্ব-পুরুষদের এ রকম করতে দেখেছি।’ ইবরাহীম বলল, ‘যদি তোমরা ও তোমাদের বাপ-দাদারা স্পষ্ট ভ্রান্তিতে থাকে তবুও তাদের অনুসরণ করবে?’
[সূরা আম্বিয়া ৫২-৫৪]

এত সুন্দর ইসলামী ব্যাখ্যার পর যদি কেউ কেউ মূর্তি/ভাস্কর্যের পক্ষে কথা বলে তাদের জন্য আল্লাহ এই আয়াত-

"আর নিজের কাছে সত্য পথের দিশা প্রকাশ হওয়ার পরও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে ফিরিয়ে দেব যে দিকে সে যেতে চায় এবং প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসাবে তা খুবই মন্দ!" [সূরা নিসাঃ১১৫]


সংগ্রীহিত।

পঠিত : ৪৬৪ বার

মন্তব্য: ০