Alapon

পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে হযরত শাহ জালাল রহ. এর সংগ্রাম

১২০৪ সালে তুর্কিদের বঙ্গ বিজয়ের মধ্য দিয়ে শ্রীহট্টে মুসলমান জনবসতি গড়ে ওঠে ছিল । সিলেটের টুলটিকর মহল্লায় ও হবিগঞ্জের মুসলমানরা বসতি গড়ে তোলে । কিন্ত তখনো এ অঞ্চল বিজিত হয়নি ।

৭০৩ হিজরি/১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে । সিলেটের এ অংশটি কখন গৌর রাজ্যের অংশ ছিলো । রাজার নাম গোবিন্দ । তিনি ছিলেন অত্যাচারী । তিনি ছিলেন উগ্রহিন্দুত্ববাদী । ধর্মীয়
স্বাধীনতা ছিলো না । জুলুমের প্রাসাদ প্রকম্পিত হয়ে ওঠলো ।

গৌর রাজ্যের অধিবাসী বুরহান উদ্দীন নিজ ছেলের আকিকা উপলক্ষে গরু জবাই করেন । ফলে গৌর হিন্দু রাজা গোবিন্দ তাকে অপরাধী সাব্যস্ত হন। এ কারণে শিশু ছেলেকে ধরে নিয়ে হত্যা করে এবং বুরহান উদ্দিনের ডান হাত কেটে দেয় । এ ধরনের নির্মম ঘটনা চারদিকে বিদুৎবেগে ছড়িয়ে পড়ে ।

বুরহানউদ্দিন বাংলার সুলতানের নিকট উপস্থিত হয়ে বিচার চাইলেন ।বাংলার তৎকালীন মহান #সুলতান_ফিরজ_শাহ ঘটনাটি জানতে পেরে খুবই মর্মাহত হোন । গৌর গোবিন্দের বিরুদ্ধে সুলতার তার ভাগিনেয় সিকান্দর গাজীকে সেনাবাহিনী সহ প্রেরণ করেন, কিন্তু ব্রহ্মপুত্র নদীর আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় প্রথম অভিযান ব্যর্থ হয় । গৌর গোবিন্দ দুবার তাঁকে পরাজিত করেন।দিল্লির সম্রাট আলাউদ্দিন খলজি এ ঘটনা শুনে তার বিশ্বস্ত #সেনাপতি_নাসির_উদ্দীনকে সিকান্দার গাজির সাহায্যে প্রেরণ করেন ।

হযরত শাহ জালাল সাতগাঁও এসে ত্রিবেণীর নিকট দিল্লীর সম্রাট প্রেরিত অগ্রবাহিনীর সেনাপতি সৈয়দ নাসির উদ্দীনের সাথে মিলিত হন। সৈয়দ নাসির উদ্দীন শাহ জালাল সম্পর্কে অবগত হয়ে তদীয় শিষ্যত্ব গ্রহণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। পথে পথে শাহ জালালের শিষ্য বর্ধিত হতে লাগল । ত্রিবেণী থেকে বিহার প্রদেশে আসার পর আরো কয়েকজন বীর মুজাহীদ তাদের সঙ্গে যুক্ত হলেন। যাদের মধ্যে হিসাম উদ্দীন, আবু মোজাফর উল্লেখযোগ্য।
এখান থেকে সেনাপতি সৈয়দ নাসির উদ্দীনের আনিত এক হাজার অশ্বারোহী ও তিন হাজার পদাতিক সৈন্যসহ শাহ জালাল রহ. এর নিজ সঙ্গীদের নিয়ে সোনার গাঁ অভিমুখে সিকান্দর_গাজীর সাথে মিলিত হন।

সিকান্দর গাজী শাহ জালালকে সসম্মানে গ্রহণ করলেন । শাহ জালাল তার সঙ্গী অনুচর ও সৈন্যসহ শাহ সিকান্দরের শিবিরে সমাগত হয়ে সিকান্দর হতে যুদ্ধ বিষয়ে সব বিষয় অবগত হন। সিকান্দর শাহ জালালের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শিষ্যগ্রহণপূর্বক সিলেট অভিমুখে যাত্রা করলেন।

এদিকে গৌর গৌবিন্দ নিজস্ব চর দ্বারা হযরত শাহ জালালের সমাগম সংবাদ পেয়ে; নতুন এ দল যাতে ব্রহ্মপুত্র নদী পার না হতে পারেন, সে জন্য নদীর সমস্ত নৌ-চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ দিকে মুসলিম সেনাবাহিনী ভিন্ন কৌশল নেয় । তারা সিমান্ত দিয়ে বারাক নদী পারাপারে সিদ্ধান্ত নেয় ।

গৌর রাজ্যে প্রাচীন সীমা রেখা বর্তমান মৌলভীবাজার জেলা সহ হবিগঞ্জ জেলার কিয়দংশ নিয়ে বিস্তত থাকায় রাজ্যের দক্ষিণ সীমাভূমি নবীগঞ্জের দিনারপুর পরগণার পাশে রাজা গোবিন্দের চৌকি ছিল।

এদিকে নৌযান না থাকায় মুসলিম সেনাবাহিনী বাশ ও কাঠ দিয়ে জায়নামায মত ভেলা তৈরী করেন । গোবিন্দের সৈন্যরা আগুনে তীর নিক্ষেপ করে । এতে তেমন কাজ হয়নি । সকালের মধ্যে মুসলিম সেনাবাহিনী গৌড়ের সেনা-চৌকি দখল করে ।


উত্তর-পূর্ব ভারতের বরাক_নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করার সময় সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে বিভক্ত হয়ে যায়। সিলেট বিভাগের বেষ্টনী হিসেবে এ নদীগুলো প্রাচীন কালে প্রবল স্রোতে প্রবাহিত হত। বর্ষাকালের দৃশ্য প্রায় সাগরের মত দেখাতো। ঐতিহাসিক পর্যটক ইবন বতুতা সুরমা নদীকে নহরি আজরফ বলে আখ্যায়িত করেছেন ।হযরত শাহ জালাল ফতেপুর হতে যাত্রা করে যখন সুরমা নদীর তীরে অবস্থান নিলেন, এ নদী পার হয়েই গৌড়ের রাজধানী।

শাহ জালাল রহ. নেতেৃত্বে মুসলিম সেনাবাহিনীর সমারিক কৌশল দেখে রাজা গোবিন্দ বীতশ্রদ্ধ হন। গোবিন্দ শক্রবাহিনীকে কিছু সময় ঠেকিয়ে রাখার জন্য সুরমা নদীতে নৌকা চলাচল নিষিদ্ধ করেন। তা সত্ত্বেও শাহ জালাল রহ. ও তার বাহিনী নদী পার হন। প্রচন্ড যুদ্ধ হয় ।


গোবিন্দ গড়দুয়ারস্থিত রাজবাড়ি পরিত্যাগ করে পেচাগড়ের গুপ্তগিরি দুর্গে আশ্রয় নেন। এরপর থেকে তার আর কোন হদিস মেলেনি। শাহ জালাল তিন দিন সিলেটে অবস্থান করার পর, মিনারের টিলায় অবস্থিত রাজবাড়ি প্রথমে দখল নিলেন।

মুসলিমরা যুদ্ধে জয় লাভ করে । গৌবিন্দ পালায়ন করেন। হযরত শাহ জালাল রহ. এর সন্মোতিতে প্রধান সেনাপতি সৈয়দ নাসিরুদ্দিন দুর্গে আজান দেন । এবং সালাত আদায় করেন। আর এভাবে সিলেট মুসলমারদের হস্তগত হয় । এবং সিলেট বিজয় হয় ।

পঠিত : ৭৬৬ বার

মন্তব্য: ০