Alapon

সেই অপহরণকারীরা ভালো আছেন তো?


আইএফআইসি ব্যাংক কর্মকর্তা শামীম আহমেদ। অফিসের লাঞ্চের বিরতিতে লাঞ্চ করতে এসেছেন খানা বাসমতিতে। ব্যস্তময় পল্টনের জনপ্রিয় খাবারের রেস্টুরেন্ট সেটি। কে জানতো অপহরণকারীরাও সেখানে আয়েশ করে খেয়েছে বেশ সময় নিয়েই। এটা নিয়ে বেশ তোলপাড়।   


শামীম আহমেদ আইএফআইসি ব্যাংকের করপোরেট কমিউনিকেশন্স ও ব্র্যান্ডিং বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট। বুধবার দুপুর ১টার কিছু পর মোবাইলে ফোন করে একসঙ্গে খাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে অফিস থেকে শামীমকে ডেকে নেন তার বন্ধু টিটু। দুপুর পৌনে ২টার দিকে পুরানা পল্টন এলাকার ‘খানা বাসমতি’ রেস্টুরেন্টের সামনে যান শামীম। রেস্টুরেন্টে ঢোকার আগমুহূর্তে একটি সাদা রঙের কালো গ্লাসের হাইয়েস মাইক্রোবাসে তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায় মধ্য বয়সী ৯-১০ ব্যক্তি। এর পর থেকে তার দুটি সেলফোনই বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর শামীমের দেরি দেখে অপেক্ষমাণ তার বন্ধু টিটু হোটেলের ভেতর থেকে বের হয়ে সামনের পান-সিগারেটের দোকান ও গার্ডদের জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন ‘ডিবি পুলিশ’ পরিচয়ে শামীম আহমেদকে তুলে নিয়ে গেছে কয়েকজন। এর পর টিটু আইএফআইসি ব্যাংক ও শামীমের স্বজনদের বিষয়টি জানান।


হোটেলে আসা থেকে শুরু করে অপহরণের পুরো দৃশ্য ধরা পড়েছে বাসমতি রেস্টুরেন্টের সিসিটিভি ফুটেজে, যা ইতোমধ্যে পল্টন থানা পুলিশ ও র‌্যাব ৩-এর কর্মকর্তারা সংগ্রহ করেছেন। তাতে দেখা গেছে, ঘটনার আগে শামীমের অপহরণকারীরা ওই রেস্টুরেন্টের সামনে প্রায় দুই ঘণ্টা সাদা রঙের একটি ‘হাইয়েস মাইক্রোবাস’ নিয়ে অপেক্ষা করে। রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবারও খায় তারা। এর পর শামীম রেস্টুরেন্টে খেতে এলে তাকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নেয় দুর্বৃত্তরা। অপহরণকারীদের চেহারা, গাড়ির নম্বর, খাওয়া-দাওয়া সব সিসিটিভির ফুটেজে রেকর্ড আছে। সদিচ্ছা থাকলে ওইসব ফুটেজ দেখে খুব সহজে অপহরণকারীদের চিহ্নিত করা সম্ভব। কিন্তু তাকে উদ্ধার দুরে থাক; তার অবস্থানও শনাক্ত করতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।


কে বা কারা শামীম আহমেদকে তুলে নিয়ে গেছে, তা ধারণা করতে পারছেন না জানিয়ে শামীমের স্ত্রী শিল্পী বলেন, নিখোঁজের পর কেউ আমাদের কাছে মুক্তিপণ চায়নি। শামীমকে কেউ কখনো কোনো হুমকি দিয়েছে বলেও আমাদের জানা নেই। তা ছাড়া সে কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত নন।


‘খানা বাসমতি’ রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার দুপুরে হোটেলের সামনে প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাস দাঁড়ানো ছিল। দুপুর ১টা ১০ মিনিটের দিকে দুজন লোক রেস্টুরেন্টে এসে নিচতলায় মাঝামাঝি স্থানে দুটি টেবিল বুক করে। এর পর পূর্বনির্ধারিত টেবিলে না বসে ৯ জনের ওই দল রেস্টুরেন্টে প্রবেশের মুখে প্রথম দুটি টেবিল একসঙ্গে করে দুপাশে চারজন করে বসে খাওয়া-দাওয়া করে। পাশের টেবিলে আলাদা বসেন দলের একজন। এই ৯ জনের খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে ছিলেন রেস্টুরেন্টের বয় ময়নাল হোসেন। খাবারের বিল ৩ হাজার ৩৪০ টাকা পরিশোধের পাশাপাশি বয় ময়নালকেও তারা ৫০ টাকা বকশিশ দেয়।


জানা গেছে, ব্যাংক কর্মকর্তা শামীম হোটেলের সামনে আসার পর গাড়ি থেকে নেমে কয়েকজন তাকে ধরে টেনে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু শামীম প্রথমে হোঁচট খেয়ে পড়ে যান। এর পর তাকে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে দুর্বৃত্তরা।


ঘটনার দিন রাতে পল্টন থানার ওসি মো. মাহমুদুল হক বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তা শামীমের অবস্থান এখনো শনাক্ত করা যায়নি। ঘটনা তদন্তে বেশ কিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে। নিখোঁজের পর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকায় প্রযুক্তিগত তদন্তে লোকেশন শনাক্ত করা অনেকটাই দুরূহ হয়ে পড়েছে। শামীম আহমেদের পরিবারের পক্ষ থেকে জিডি ছাড়া কোনো মামলা করা হয়নি। ঘটনায় জড়িতদের ধরতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

অপহরণের ৫ দিন পর সেই ব্যাংক কর্মকর্তা শামীম আহমেদকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মতিঝিলের কোনো একটি জায়গায় তাকে ফেলে রেখে যায়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তিনি স্ত্রী শিল্পি আহমেদকে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে ফোন করে তার অবস্থানের কথা জানান। এরপর পরিবারের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যায়।

শামীম ফিরে এলেন। মুখে কুলুপ আঁটলেন। অন্যসব গুমফেরত লোকদের মত তিনিও চুপ হয়ে গেলেন। পুরোপুরি চুপ। কেউ জানলো না তার কী হলো? কেউ আর অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করলো না। স্পষ্ট চিহ্নিত হওয়ার পরও পার পেয়ে গেল অপহরণকারীরা। 

অবশ্য পার পেয়ে গেল বলাটা মনে হয় ঠিক হয় নি। কারণ এদেশ অপহরণকারীদেরই। আমরা যে প্রত্যেকে বাংলাদেশ নামক বিশাল কারাগারের কয়েদি। এখানে আমাদের নিয়ে দেশের মালিকেরা যা ইচ্ছে তা করবে। এখানে আমাদের কীই বা বলার আছে?

আপনারা হয়তো ভাবতে পারেন এদেশে গুম খুন তো নিয়মিত। কিন্তু এই গুম নিয়ে কেন লিখতে হল? বিশেষ কোন কারণ নেই। তবে এই গুমের ঘটনা একটু আলাদা। কারণ এখানে অপহরণকারীদের চেহারা স্পষ্ট। তারপরও কিছু হলো না। কিছু হবে না। অপহরণকারীরা খুব শক্তিশালী। এই ঘটনা নিয়ে পল্টন থানার ওসি বলেছেন, "হয়তো আমাদের আওতার বাইরের কেউ অপহরণ করেছেন"। অনেকে বলবে আমরা জানতে চাই সেই আওতার বাইরের লোক কারা? আমি জানতে চাই না। কারণ আমি জানি তারা দেশের মালিক। তাই আমি শুধু জানতে চাই সেই সম্মানিত অপহরনকারীরা ভালো আছেন তো? হাজার হলেও তারা যে আমাদের কর্তা!    

পঠিত : ৬৬৩ বার

মন্তব্য: ০