Alapon

ড. আব্বাসী বনাম শাহরিয়ার কবির বিতর্ক পর্যালোচনা...



শুরুতে আমার কথা বলি, আমি একজন একনিষ্ঠ মুসলিম। সমাজের প্রতিটি স্তরে ইসলামী অনুশাসন চালু হউক, অন্য দশজন মুসলমানের মত আমিও চাই। সে হিসেবে আমি কোরআন ও হাদিসের অনুসারী, এ ব্যাপারে কোন আপস করতে রাজি নই। ফলে যার হাত ধরেই দেশে ইসলামী অনুশাসনের শাশ্বত বিধি-বিধান বাস্তবে রূপ নেবে বলে মনে করি, আমি তার সমর্থক। ড. আব্বাসীর সাথে বিতর্কের মাধ্যমে, চরম ইসলাম বিদ্বেষী শাহরিয়ার কবিরের অনেকগুলো চরিত্র প্রকাশিত হয়েছে। এর ফলে জনাব আব্বাসীর প্রতি অনেকেই অনুরক্ত হবে। এটা আব্বাসীর প্রতি ভালবাসার চেয়েও, একজন পাঁড় ইসলামী দুষমনের কথার জবাব দিতে পারার জন্য। শা. কবির কে মানুষ কত ঘৃণা করে তা এই লাইভে বুঝা গেছে। তাদের ঘৃণা করার ক্ষেত্রে, দর্শক স্রোতাদের মধ্যে কোন দল-মত ছিলনা।

- সঞ্চালক 'সাগর' বারবার ইসলাম ধর্মের স্থলে 'মুসলিম ধর্ম' বলছিলেন, মূলত দেশীয় মানুষের সংস্কৃতি-কৃষ্টির সাথে ওনারও যোগাযোগ কম, এটা প্রমাণিত হয়েছে।

- শা. কবির বারে বারে জামায়াতে ইসলামিকে সমালোচনার মধ্য দিয়ে, কৌশলে ইসলামকে গালি দেওয়া, কটূক্তি করার চিরাচরিত অভ্যাসের কসরত দেখিয়েছেন কিন্তু ড. আব্বাসীর ধৈর্যশীল উত্তরে সুবিধা করতে পারেন নি।

- শা. কবির বরাবরই জনাব মওদূদীকে আক্রমণ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সেরা ইসলামী চিন্তাবিদ ও শায়খদের চরিত্র হনন করে থাকেন। এখানে মোটেও সুবিধা করতে পারেন নি।

- শা. কবিরের কথায় বুঝা যায়, তিনি কাদিয়ানীদের একজন সক্রিয় এজেন্ট। বাংলাদেশের ওয়াজ মাহফিল গুলো থেকে নাকি খুন-খারাবী উস্কে দেওয়া হয়, যার অন্যতম ভিক-টিম কাদিয়ানী! ড. আব্বাসী সুন্দর উত্তর দিয়েছেন।

- শা. কবির জঘন্য মিথ্যাচার করেছেন, তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে নাকি ইসলামী দলগুলো কিংবা রাজাকারেরা হত্যা করেছেন। মূলত বঙ্গবন্ধুকে কোন ইসলামী দল, ব্যক্তি, গোষ্ঠী হত্যা করেন নি। বরং সে দিন যারা খুশিতে ট্যাংকের উপরে বসে নেচেছিল তারা সংসদে আছে। ড. আব্বাসী সুন্দর জবাব দিয়েছেন।

- শা. কবির প্যাচে পড়ে বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষতা তথা Secularism বলতে দুনিয়াবাসী যা বুঝে থাকে; সেটা থেকে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতা বিলকুল থেকে আলাদা। এটি বঙ্গবন্ধুর মাথা থেকে বের হওয়া ধর্মনিরপেক্ষতা। ড. আব্বাসী বলেছেন, তাহলে বঙ্গবন্ধুর সে দর্শনের আরেকটি নতুন নাম দিলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। এটি একটি দারুণ পয়েন্ট ছিল।

- ইসলাম ধর্ম-বিদ্বেষী শা. কবির বারে বারে বঙ্গবন্ধুকে টেনে এনেছেন। এটা তার একটি চরম অপকৌশল। কাঁকড়া যেভাবে মৃত শামুকের খোলে ঢুকে নিজেকে বাচায়। এদেশে বিরাট সংখ্যক ইসলামী জনগোষ্ঠীর বিপক্ষে বলার জন্য তিনিও সেই একই প্র্যাকটিসে বঙ্গবঙ্গুর খোলসে আশ্রয় নেন। ড. আব্বাসী বিতর্কে বিষয়গুলো খোলাসা হয়েছে।

- কেউ শতভাগ পারফেক্ট বাবা হতে পারেন না। নবীদের ছেলেরাও বিপথে গেছে। মরহুম মওদূদী তার যে সন্তানকে পরিত্যাগ করেছেন, শা. কবির সেই ছেলেকে দিয়ে তার পিতা সম্পর্কে মূল্যায়ন নিয়েছেন। ড. আব্বাসী দূরদর্শিতার সাথে এগুলো এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন।

- শা. কবির বরাবরের মতো আল্লামা সাঈদী সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ড. আব্বাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ কিংবা মন্তব্য জোগাড় করতে চেয়েছেন। এখানে এসে ড. আব্বাসী ও স্রোতারা পরিষ্কার বুঝেছেন যে, শা. কবির বিরাট প্রতারক ও ভণ্ড কিন্তু ড. আব্বাসী বিচক্ষণতার সাথে কথাগুলো এড়িয়ে গেছে।

পরিশেষে বলতে চাই,

যারা টক শো গুলোতে যায় তারা যেন আগে থেকেই প্রতিপক্ষের মতি-গতি, তাদের চিন্তা-বিশ্বাস, ব্যক্তি জীবন ও ভূমিকা সম্পর্কে অগ্রিম তথ্য নিয়ে যায়। সাথে সাথে তাদের স্টাইলেই তাদেরকে আক্রমণ করতে হবে। তারা যেভাবে বক্তব্যের মধ্যখানে বক্তার দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে মোচড় দেয়, সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করা, মাথা ঠাণ্ডা রাখা হয়।

একদা একজন আলেম রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কিত একটি টকশোতে হাজির হয়েছিলেন। সেখানে এই শা. কবিরও ছিলেন। তিনি কথার ফাঁকে প্রশ্ন করে বসেন যে, রবীন্দ্রনাথ কোন ধর্মের মানুষ ছিলেন, মৌলানা উত্তর দেন হিন্দু ধর্মের। তারা বলেন তিনি ব্রহ্ম ধর্মের, মৌলানা বলেন হিন্দু ধর্মের। মৌলানা এক পর্যায়ে খেই হারিয়ে ফেলেন এবং অন্যদের হাসি সৃষ্টিতে সুযোগ করে দেন। সুতরাং ইসলামী ব্যক্তিত্বদের বেশী বেশী জ্ঞান অর্জনের বিকল্প নেই। শুধুমাত্র দ্বীনি জ্ঞান নয়, দুনিয়াতে বুৎপত্তি অর্জনের জ্ঞানও থাকতে হবে।

- tipu

পঠিত : ৭৪৯ বার

মন্তব্য: ০