Alapon

ইসলাম কেবল নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়...


এখন ওয়াজ মাহফিলের একটা কমন দৃশ্য হয়ে গেছে সম্মানিত বক্তাদেরকে আলোচনায় বাঁধা দেয়া। হয়তো বক্তার পাশে বসা সভাপতি অথবা উড়ে এসে জুড়ে বসা কোনো মোড়ল সাহেব হুট করেই আলেমদের কথার মধ্যে বাম হাত ঢুকিয়ে দিচ্ছে।

- আবার একেকজন বক্তাকে শিখিয়ে দেয় “হুজুর এই এই ওয়াজ করেন কবরের কথা বলেন আসমানের কথা বলেন”। আবার কোনো কোনো প্রো ম্যাক্স পন্ডিত বলে “হুজুর কোরআন হাদিস থেকে কথা বলবেন”। অথচ বক্তা কুরআন হাদিস থেকেই বলছিলেন। কথাটা কিছুটা এরকম, কেউ একজন ভাত খাচ্ছে আরেকজন এসে বললো ভাই ভাত খাইয়েন না ভাত খান।

- বরাবরের মতই তাদের মনোভাব এটাই যে ইসলাম নামাজ, রোজা, হজ, যাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে। কোনো অনুষ্ঠান সমাবেশে একজন হুজুর ধরে এনে মিলাদ পড়িয়ে জিলাপি বিতরণ করবে। কেউ মারা গেলে আলেম দিয়ে জানাযা পড়ানো হবে, মসজিদের ঈমান সাহেবের কাজ নামাজ পরানো আর পানি পরা দেয়া এই ই। ইসলামকে তারা অল্পতেই সীমাবদ্ধ করতে চায়।

- মডারেট সমাজকে কিভাবে বোঝাই ইসলাম শুধুমাত্র এসবেই সীমাবদ্ধ নয়। ইসলামে শাসন ব্যবস্থার কথা রয়েছে, রাষ্ট্র পরিচালনার কথা রয়েছে। অথচ যখন দ্বীনের কথা দূর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যায় তখন‌ই গায়ে কাঁটা লাগে তখনই এসে বলে হুজুর কবরের কথা বলেন হাশরের কথা বলেন। কবরের কথা আগেও ছিল এখনো আছে আগামীতেও থাকবে ইন শা আল্লাহ। তাই বলে অন্যায় অবিচার, ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড, প্রতারকদের বিরুদ্ধে কথা বলা কি বন্ধ হয়ে যাবে নাকি?

- আমাদের সাধারণ জনগণেরও দোষ আছে। তাদের এই আশকারা আমরাই দিয়েছি। ৯৫% মুসলিমের দেশে ৭০% ই শুধু জুমার নামাজ টুকু পরে। পাশাপাশি পহেলা বৈশাখ, থার্টি ফার্স্ট নাইট, ভ্যালেন্টাইন্স ডে, বড়দিন, হলুদ সন্ধ্যা, খৎনা সন্ধ্যা ইত্যাদি পালন করে। যখন গুটি কয়েক বাদে সবাই ই বলে ধর্ম যার যার উৎসব সবার তখন কি সেক্যুলারিজম প্রতিষ্ঠা না করে উপায় আছে! আরে ভাই ধর্ম তো একটাই যেটা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য সেটা হচ্ছে ইসলাম। বাকিরা কাফের মুশরিক নাস্তিক।

- তবে হাজারটা নেগেটিভ দৃশ্যের মধ্যে একটা পজিটিভ দিক হচ্ছে আমাদের দেশের আলেমদের মধ্যে ঐক্যের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে শুধু আলেমদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হলেই তো হবে না। আমরা যারা তাদের অনুসারী আছি আমাদের মধ্যেও ঐক্য থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে যারা আল্লাহ এবং রাসূল (সাsmile কে স্বীকার করে তারা আমাদের ভাই। সুন্নী, আহলে হাদিস, চরমোনাই ভেদাভেদের কারণে আজ কাদিয়ানী, হেজবুত তাওহীদ নামধারী ফিতনাবাজরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে যারা মুখেই কেবল আল্লাহ কে মানে। আমাদের নিজেদের মধ্যে দাঙ্গা না ছড়িয়ে উচিত তাদের ব্যাপারে কথা বলা।

- এইযে দেখেন কেউ এনায়েত উল্লাহ আব্বাসীকে (হাফিsmile অপছন্দ করে। কেউ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফকে (হাফিsmile গালমন্দ করে। কেউ মিজানুর রহমান আজহারিকে (হাফিsmile হিংসা করে। কেউ আল্লামা তাহেরী সাহেবকে (হাফিsmile নিয়ে হাসাহাসি করে। আমরা যে তাদের নিয়ে এমনটা করি তাদের ইলমের ধারে কাছেও কি আছি আমরা? তারা ভুলের উর্ধ্বে নয়, প্রত্যেকেই মাঝে মধ্যে এমন কথা বলে ফেলেন যা দুঃখজনক। এটাকে কেন আমরা "জোশ মে হোশ হারানো" হিসেবে মানতে পারি না। অবশ্য তাদের‌ও একটু সচেতন হ‌ওয়া জরুরি কখন কি বলা উচিত। মাজার, মাজহাব, মিলাদ, তাবলীগ এসব নিয়ে আমরা কেন পরস্পরকে ইট পাটকেল ছুড়ে মারবো? আর ওদিকে নাস্তিকেরা সুযোগ পেয়ে যায় আমাদের ওপর আঙুল তোলার। আমরা সম্প্রীতির মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে পারি না কেন? যারা মাজার পূজা করে তাদের আমরা বুকে জড়িয়ে বলতে পারি না? “ভাই এটা ঠিক নয় শির্ক হয়।” কেন শির্ক হয়? “বলবো যে এই এই কারণে শির্ক হয়”। আল্লাহ বলেন-

“আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ করো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” [সূরা আল ইমরান: ১০৩]

- যেখানে স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের বিচ্ছিন্ন হতে নিষেধ করেছেন সেখানে আমাদের কেন এই হাল? প্রশ্ন করতে পারেন তাহলে আমি কোন দলের? সব দল‌ই আমার, আমি সব আলেমদেরকে ই ভালোবাসি। তাদের ভালোটা নিই, আর যেটা আমার মস্তিষ্কে ধারন করতে পারি না সেটা নিই না আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই। কেউ বলতে পারেন কি অদ্ভুত! অল্প বিদ্যা ভয়ানক! আবার ট্যাগ ও দিতে পারেন! তবে প্রিয় ভাইয়েরা এটাই উচিত নয় কি? আর কতো সংঘাত? চলুন আমরা এক হ‌ই, ইসলাম বিদ্বেষীরা নিপাত যাক।

- সংগৃহিত

পঠিত : ৬৮৭ বার

মন্তব্য: ০