Alapon

||পড়বো স্বলাত জীবন্ত||-১ম অংশ




ক্কিয়ামতের দিন আমার সর্বপ্রথম যে আমলটার হিশেব নেয়া হবে তা হলো স্বলাত। তাই আমি চাই আমার স্বলাতটা জীবন্ত হোক। প্রানবন্ত হোক। আমার স্বলাতের যে তিলাওয়াত সে তিলাওয়াতে যেনো শুধু সুরের ঝংকার-ই নয়, সে তলাওয়াতে রব্বের প্রতি, তাঁর ইবাদাতের প্রতি যেনো ভালোবাসার প্রাণ প্রবাহ বয়ে যায়। সে তিলাওয়াতের দ্বারা স্বলাতে যেনো প্রাণের সঞ্চার হয়। আল্লাহর দরবারে যেনো আমার সেই স্বলাতটা মঞ্জুর হয়। কবুল হয়।


আমি চাই আমার স্বলাতকে, স্বলাতের রুকুকে, সিজদাহ্কে যেনো ছুঁড়ে ফেলে দেয়া না হয়! আমি যাঁর জন্যে যাঁর কাছে সিজদাহ্তে লুটিয়ে পড়ি, রুকুতে ঢলে পড়ি তিনি যদি তা কবুল না করেন, তাঁর কাছে যদি তা গ্রহণযোগ্যতা না পায় তাহলে আমার এই কর্মের, এই কর্মের পেছনে ঢেলে দেয়া সময়ের কি'বা মূল্য আছে!

আমি যে অফিসে চাকুরি করি, যে বসের অধীনে কর্ম করি তিনি যদি তা (অামার কর্ম) পছন্দ না করেন, আমার কাজ যদি তিনি গ্রহণ না করেন, আমার কাজ যদি তাঁর মনপুত না হয় তাহলে
কোনভাবে কাজটা করলে তিনি খুশি হবেন, কোন পদ্ধতি অবলম্বন করলে আমার গ্রহণযোগ্যতা তাঁর কাছে বৃদ্ধি পাবে, আমরা তো সকলেই সেই প্রচেষ্টা করি। আমিও করি। বসকে, মালিককে রাজি-খুশি করার কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি করিনা!


কীভাবে ওনার মন জয় করা যায়, কোন্ উপোয়ে ওনার হৃদয়ের কন্দরে ঢোকা যায় সেইসব উপায়-উপাদান খুঁজতে থাকি আমি অবিরাম! খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে পড়ি...


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা অামার মালিক -মনিব। আমি তাঁর গোলাম। চাকর, দাস। আমি যখন শাহাদাহ্ পাঠ করে মুসলিম হয়েছি, ঈমানের ঘোষণা দিয়েছি; তখন সাথে সাথেই শরীয়া'র সকল বিষয়াদী আমার ওপর ফরজ হয়ে গেছে। এখন আমার ওপর স্বলাত, স্বওম, হাজ্জ,যাকাত সবই ফরজ। তবে
স্বলাতটা একটুখানি ব্যতিক্রম!


আমার ঈমান আনার সাথে সাথেই যদি আজান হয়, সালাতের সময় হয়, তখনই সাথে সাথে সেই ওয়াক্তের স্বলাত আমাকে আদায় করতে হবে!
আমি সুরা না জানি, ক্বিরাত না পারি তবুও ফরজ! যতোটুকু জানি তা দিয়েই পড়বো!


কিন্তু আমার যদি রাশি রাশি সম্পদ আর ভোগের জীবন থাকে কিংবা নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে; তখন পরে গিয়ে ফরজ হয় যাকাত, হজ্জের বিষয়টাও সামর্থের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এবং তা জীবনে একবার হলেই যথেষ্ট!

ব্যতিক্রম স্বলাত। দিনে পাঁচ ওয়াক্ত। আমাকে আদায় করতেই হবে তা। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু অা'লাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় মুনাফিকরা তাঁদের নিফাকি গোপন করার জন্যই রাসুলুল্লাহ সঃ এর সাথে মাসজিদে গিয়ে স্বলাতে শামিল হতো। যেমন, মুনাফিকদের সর্দার আব্দুল্লাহ বিন উবাই একজন নিয়মিত মুসল্লি ছিলো রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু অা'লাইহি ওয়াসাল্লাম এর । এমনকি অনেক সময় সে রাসুল (সাঃ) এর ঠিক পিছনে অর্থাৎ ঈমামের পিছনে দাঁড়িয়ে আদায় করতো।


এই যে স্বলাতের এতোখানি গুরুত্ব, তা তো বহু মুসলিমরা পড়েই না। যারাও-বা পড়ে তাঁরাও যথাযথ মর্যাদায় পড়ছেনা। তাঁর হক্ক আদায় করছেনা। অথচ স্বলাত নাকি পাপাচার আর অশ্লীলতা হতে ফিরিয়ে রাখে, বিরত রাখে! কিন্তু আমরা তো স্বলাতও পড়ি পাপের দরোজায়ও ভিড়ি। নিয়মিত। নিয়ম করে। নিত্যদিনই! এক্কেবারে পাপ করতে করতে পাপের পিরামিড-ই গড়ে তুলি!


আচ্ছা তাহলে আমার রব্ব যে বললো স্বলাত সকল পাপাচার-অশ্লীলতা আর অমূলক কাজ হতে দূরে রাখে। বিরত রাখে। তাহলে আমার রব্বুল আলামীনের কথা কি ভুল বা মিথ্যে (নাঊযুবিল্লাহ)?? নাকি আমার স্বলাতে গন্ডগোল? নিশ্চয়ই গন্ডগোলের গোডাউন আমিই! আমার-ই স্বলাত হচ্ছেনা সেরকম স্বলাত , যেরকম বা যে স্বলাত জীবন্ত!


এখন তাহলে আমার করণীয় কী? স্বলাতকে সুন্দর করা। স্বলাতের মাঝে প্রাণ আনা। জীবন আনা। এমন স্বলাত আদায় করা, যে স্বলাত জীবন্ত।


আমরা গতো পর্বে বলেছিলাম যে আমাদের স্বলাত এমন স্বলাত হচ্ছে না, যে স্বলাতের মাঝে জীবন আছে। যে স্বলাতে প্রাণ আছে। যার জন্যে আমরা পাপের পিরামিড গড়ে তুলি স্বলাত কায়িমকারী হয়েও!


⛔️পরাণবন্ত স্বলাত :-

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা অামাকে ডেকে বলেন দ্যাখো মানুষ! আমি তোমাকে সৃষ্টি করেছি, জীবন দিয়েছি, সঠিক পথের দিশা দিয়েছি। দুনিয়ার বুকে তুমি আমার বিধি-বিধান মতোন চলা-ফেরা করো। আমার স্মরণ হৃদয়ে রাখো। দুনিয়াবি কাজ কারবার যাই করো না ক্যানো আমাকে তুমি মনিব হিশেবে রব্ব হিশেবে স্মরণ করো। তোমার ওপর স্বলাত অাদায় করাটা আবশ্যক করে দিয়েছি, এই স্বলাতটা তুমি আমাকে (সর্বদা) স্মরণ করার জন্যেই আদায় করো। একথাটাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা পবিত্র কুরআনে বলেছেন যে, ' আমি আল্লাহ্ আমি ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই। সুতরাং তুমি আমারই ইবাদাত করো এবং আমাকে স্মরণ করার জন্যই স্বলাত আদায় [১]।


উপরিউক্ত আয়াতের মাধ্যমে স্বলাতের মূল যে উদ্দেশ্যটা সেই উদ্দেশ্যের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। স্বলাত কায়েম করুন এই জন্য যে, যাতে আমাকে স্মরণ করতে পারেন [২]


আমরা মানুষেরা দুনিয়ার কাজ-কর্ম, রঙচঙের পেছনে ছুটতে ছুটতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা থেকে তাঁর দাসত্ব থেকে যেনো বিমুখ না হই। মুখ ফিরিয়ে না নিই।


আল্লাহকে স্মরণ করার, তাঁর কাছাকাছি যাওয়ার, তাঁর সাথে আমাদের সম্পর্ক বৃদ্ধি করার, সেই সম্পর্কের ভিত্তিকে গাঁঢ়ো ও মজবুত করবার সবচে' বড় যে মাধ্যম সেটা হচ্ছে স্বলাত।

এই স্বলাতই তো প্রতিদিন পাঁচবার করে আমাকে দুনিয়ার সকল কাজ থেকে বৈধ সকল তৎপরতা থেকেও সরিয়ে আল্লাহর দিকে, তাঁর কাছে নিয়ে যায়। আমার সাথে আমার রব্বুল আলামীনের সম্পর্কের বাঁধনটা আছে তা যেনো মজবুত হয়। দৃঢ়তর হয়। তাঁর ভালোবাসা-ভয় যেনো দুনিয়ার সকল কর্মের মাঝেও আমার ভেতর অটুট থাকে।


অথচ স্বলাত আমরা অনেকেই আল্লাহর স্মরণের জন্য আল্লাহর ভালোবাসা নিয়ে প্রাণোচ্ছলতা নিয়ে আদায় করিনা! বুঝে-শুনে আদায় করি না। পড়ি পড়তে হবে তাই, এ যেনো একটা নিয়ম। নিয়ম পালন করবার জন্যেই পড়ি। ঠেকায় পড়ি, লোক দেখাতে পড়ি। মানুষের ভয়ে সমাজের ভয়ে পড়ি। সেকারণে আমাদের স্বলাতের মাঝেও প্রাণের সঞ্চার হয় না। জীবন আসেনা।


যেই ব্যক্তি ঈমানের পূর্ণ রসদ সহকারে স্বলাতে দাঁড়ায়। দাঁড়িয়ে যখন আল্লাহু আকবর বলে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে, অতঃপর সানা পড়ে সেখানে সে যা বলে তা হলো, '' হে আল্লাহ! সকল প্রকার পবিত্রতা প্রসংশা, বড়ত্ব, বরকত ও মর্যদা সব কিছু তোমারই"! দেখুন এভাবে যে স্বলাত শুরু হয়, যেখানে আমার কোনো কৃতিত্ব নেই। নেই কোনো বড়োত্ব। কোনো প্রসংশা অন্য কারো নেই শুধু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা ছাড়া। সে স্বলাতে তো প্রাণের সকল আবেগ এসে জমা হওয়াটা স্বাভাবিক।
আর এমন বুঝে শুনে সিজদাহ্'য় মস্তিষ্ক লুটিয়ে দিয়ে যখন পড়ি, 'সুবহানা রব্বিয়াল আ'লা', যার ভাবার্থ হলো আমার মর্দাবান প্রতি-পালক আল্লাহ কতোই না পবিত্র! আমার ভেতর তখন এই বিষয়টা কাজ করবে যে, আমি তো তেমনই একজন রব্বের দরবারে সিজদাহ্'তে মগজ লুটিয়ে দিয়েছি যিনি সকল মর্যদা আর পবিত্রতার আধার! আর সেই পবিত্র সত্ত্বা আল্লাহ রব্বুল আলামীনেরই একজন বান্দা আমি, তখন তাঁর স্বলাতে ফিরদউসি ভালোবাসার সব ফল্গুধারার প্রবাহিত না হয়ে কি পারে? তাঁর স্বলাতে জীবন-প্রাণের সঞ্চার না হয়ে কীভাবে থাকে?

কথা হলো আমরা এমন বুঝে-শুনে মন-প্রাণ দিয়ে সেরকম স্বলাত আদায় করি না!আমরা এমন স্বলাতই আদায় করি --মনে হয় কোনো এক দায় বিমুক্ত হলাম! যাঁর জন্যে স্বলাতে আসে না জীবন। হয়না প্রাণবন্ত।


||পড়বো স্বলাত জীবন্ত||-১ম অংশ
- রেদওয়ান রওয়াহা
২২-০৬-২০

পঠিত : ৩৪৮ বার

মন্তব্য: ০