Alapon

সব সহ্য হয় ইসলাম না...

বিষয়টা ক্লিয়ার?

সৌদি তরুণী রাহাফ মুহাম্মাদ আলকুনুন। গতবছর এই তরুণী হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল গোটা বিশ্বে। পরিবারের সাথে কুয়েত ঘুরতে গিয়ে সে সেখান থেকে থাইল্যান্ডে পালিয়ে যায়। সেখানে এক হোটেল রুম থেকে ভিডিও বার্তায় সাহায্য চেয়ে সে জানায়, সে ইসলাম ত্যাগ করেছে, তার পরিবার থেকে পালিয়ে এসেছে। এরপর সারা বিশ্বের মিডিয়ায় একযোগে সংবাদের শিরোনাম হয়ে উঠে মেয়েটি। বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের মিডিয়া তাকে রীতিমত মাথায় তুলে নেয়। অস্ট্রেলিয়া থেকে মিডিয়া কর্মীরা ছুটে আসে থাইল্যান্ডে, শুধু এই নিউজ কাভার করার জন্য। ঐদিন সে একটা টুইটার আইডি খোলে, শুধু একদিনেই টুইটারে তার ফলোয়ার ৪৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়। জাতিসংঘ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। অনেক দেশ তাকে আশ্রয় দেওয়ার আগ্রহ দেখায়। মেয়েটি কানাডায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। স্বয়ং কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে বিমানবন্দরে রিসিভ করতে যায়।

প্রতিদিন শত শত রিউফিউজি সমুদ্রে, বনে-জঙ্গলে মরে পড়ে থাকার খবর আসে। কারো কিচ্ছু যায় আসে না। সেখানে একটি মেয়ের জন্য পুরো বিশ্ব একযোগে উঠেপড়ে লেগেছে, এত মানবতা, এত দয়া দুনিয়া জুড়ে, অবাক লাগার মতো না? এই সবকিছুর কারণ মেয়েটি ইসলাম ত্যাগ করেছে, পশ্চিমা ভোগবাদী জীবনদর্শনের প্রতি ঈমান এনেছে।

এটাই তাদের ধর্ম যে, ইসলামের কোনো কিছুকে তারা সহ্য করবে না। ইসলামের বিপরীতে যা কিছু—জাহিলিয়াত, অশ্লীলতা, যিনা-ব্যভিচার, সমকাম থেকে শুরু বাকস্বাধীনতার নামে ইসলামবিদ্বেষ—সবকিছুকেই তারা সাদরে গ্রহণ করবে, কিন্তু যখনই কেউ ইসলামের কিছু বলবে বা করবে, তারা একযোগে তার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগবে। আর এটাই সেই আয়াতের সত্যতা যেটা আল্লাহ কুরআনে বলেছেন,
“ইহুদি ও খৃষ্টানরা কখনই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন।” (সূরাহ বাকারা, ২:১২০)

জাহিলিয়াত, ধর্মহীনতা, ইসলামবিদ্বেষ পশ্চিমা সমাজে এতটাই এপ্রেসিয়েট করা হয় যে, খোদ মুসলিম নামধারীরা সেখানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য নিজেদের ইসলামবিদ্বেষী, সমকামী, বাকস্বাধীনতার জন্য নিজ দেশে নির্যাতিত-অত্যাচারিত হচ্ছে, ইত্যাদি কারণ দেখায়। এবং পশ্চিমা সমাজ তাদেরকে আশ্রয় দেয়। সম্প্রতি দেশে ইসলাম অবমাননার অভিযোগে এক তরুণীকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় পশ্চিমা দেশে সেটেল হওয়ার জন্য সে দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুকে ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। আমার এক বন্ধুর কাছে তার কয়েকজন আত্মীয়ের কথা শুনেছি যারা ফ্রান্সের ভিসা পেয়েছে এই বলে যে, তারা ইসলামপন্থীদের অত্যাচার, নির্যাতন থেকে বাঁচতে সেদেশে আশ্রয় চায়। বৃটেনে ভিসা পাওয়ার জন্য এই পরিমাণ বাঙালি আবেদনপত্রে নিজেদের সমকামী পরিচয় দেয়, এক কর্মকর্তা নাকি মজা করে বলছিল, তোমাদের দেশে এত সমকামী কেন?

এমনকি পশ্চিমা দেশে Ex-Muslim নামেও সংগঠন তৈরি হয়। খোঁজ নিলে দেখা যায় এদের বেশিরভাগই কখনও মুসলিমই ছিল না। কিন্তু পশ্চিমা দেশে নিজেদের ইসলামত্যাগী পরিচয় দিলে, প্রতিনিয়ত ইসলামবিদ্বেষী কর্মকান্ডে জড়িত থাকলে আলাদা খাতির যত্ন পাওয়া যায়, এসব সংগঠন বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রচুর ফান্ডিংও পায়।

মাঝে মাঝে মিডিয়া জগতের অভিনেত্রীদের অভিনয় ছাড়ার খবর আসে। এর কারণ হিসেবে কেউ কেউ ধর্ম পালনে মনোযোগী হওয়ার কথা জানায়। সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে এরপর তাদের অভিনয় ছাড়া নিয়ে ব্যাপক চর্চা হয়। তারা অভিনয় ছেড়েছে, এটা কারো আপত্তির কারণ নয়, সবার আপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় ধর্ম পালনের জন্য অভিনয় ছাড়ার কারণটা। আপনি সব করতে পারেন, যা খুশি তাই, জাহিলিয়াতে ডুবে থাকেন, কেউ আপনাকে কিছু বলবে না, আপনাকে এপ্রেসিয়েট করবে। কিন্তু যেই না ধর্মের কারণে জাহিলিয়াত ছাড়ার ঘোষণা দেবেন, সবার চোখ কপালে উঠে যাবে।
শুধু পশ্চিমা দেশে নয়, খোদ মুসলিম সমাজেই এখন ইসলাম অপাঙ্‌ক্তেয়। আজকের সমাজে মুসলিম তরুণ-তরুণীরা জাহিলিয়াতের সবকিছু করতে পারে, সকল আকাম-কুকামে এপ্রেসিয়েট করার লোক পাওয়া যাবে। যদি কেউ বিরোধিতা করেও তারপর বলবে, আরে বাদ দাও, এই বয়সে তো এসব একটু আধটু করবেই! কিন্তু একই তরুণ-তরুণীরা যদি জাহিলিয়াত থেকে বেঁচে ইসলাম পালন করতে চায়, হঠাৎ নামাজ-দুআ শুরু করে, ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে, পরিবারের ঘুম হারাম হয়ে যাবে। তুমি কি তাগলীগ হয়ে গেছ, শিবির হয়ে গেছ, কাদের সাথে ওঠাবসা করছ ইদানীং… ইত্যাদি নানা কথা শুনতে হবে। খোদ মুসলিমদের কাছেই জাহিলিয়াত আজ ধর্ম, আর ইসলাম চর্চা লজ্জার বিষয়।

জাহিলিয়াতের চোখ ধাঁধানো আলোতে ইসলামের আলো নিভিয়ে দেওয়ার চেষ্টার এই সিলসিলা অবশ্য বেশ পুরনো। সেজন্য ফিরে যেতে হবে ১৪০০ বছর আগে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত শুরু করলেন, মক্কার মুশরিকদের কাজ ছিল মানুষকে রাসূলের দাওয়াত থেকে বিরত রাখা। ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, মক্কার মুশরিক ব্যবসায়ী নযর ইবনু হারেস পারস্য সফরকালে সেখান থেকে বিভিন্ন রাজা-বাদাশাদের কেচ্ছা কাহিনীর বই নিয়ে আসত। চটকদার এসব কেচ্ছাকাহিনী শুনিয়ে সে মানুষকে কুরআন শোনা থেকে বিরত রাখত। সে বিদেশ থেকে গায়িকা দাসী কিনে আনত। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবিরা যখন কাউকে কুরআন শোনাত, সে দাসীকে আদেশ দিত তাকে গান-বাজনা দিয়ে মনোরঞ্জন করতে, যাতে তার অন্তর থেকে কুরআনের বাণী মুছে যায়। সে বলত, মুহাম্মাদ তোমাদেরকে কুরআন শুনিয়ে নামায পড়া, রোযা রাখা এবং দ্বীনের জন্য জীবন দিতে বলে। এতে কষ্ট ছাড়া কিছু নেই। এসো এই গানটি শোনো এবং উল্লাস করো। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কুরআনের সূরাহ লুকমানের এই আয়াতটি নাযিল হয়,

“একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।" (সূরাহ লুকমান, ৩১:৬)
এই আয়াতের তাফসীরে আলিমরা বলেছেন এখানে “অবান্তর কথাবার্তা” বলতে জাহিলিয়াতের নানা চটকাদার কিচ্ছাকাহিনী, ক্রীড়া-কৌতুক, গান-বাজনাকে বোঝানো হয়েছে, যা মানুষকে দ্বীন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

ইসলাম থেকে নিজেদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টার উদাহরণ আরও আছে। কা’ব বিন মালিক, তাবুক যুদ্ধে না গিয়ে যিনি বাড়িতে রয়ে গিয়েছিলেন। যুদ্ধ থেকে ফিরে তাঁকে পুরো মুসলিম জাতি বয়কট করেছিল। রীতিমত একঘরে হয়ে পড়েছিলেন কা’ব বিন মালিক। তাঁর এরকম অসহায় সময়ের ফায়দা লুটতে চেয়েছিলেন গাসসানের রাজা। তিনি কা’ব বিন মালিককে চিঠি লিখেছিলেন,
“আমি জেনেছি যে আপনার সঙ্গী আপনাকে পরিত্যাগ করেছে। এভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার জন্য আল্লাহ আপনাকে সৃষ্টি করেননি। আপনি বরং আমাদের কাছে চলে আসুন। আমরা মুহাম্মাদের চেয়েও ভালোভাবে আপনার দেখভাল করব।”
কা’ব বিন মালিক বুঝতে পেরেছিলেন এটা আল্লাহর পরীক্ষা। তিনি সেই চিঠিটা পুড়িয়ে ফেলেন, যেন শয়তানের ওয়াসওয়াসা তাঁকে প্রভাবিত করতে না পারে।
কালের বিবর্তনে আমরা সেই সময়ে চলে এসেছি যেখানে সমগ্র পৃথিবী এক ইসলামের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে। ইসলাম আজ অপরিচিত, অপাঙ্‌ক্তেয়। জাহিলিয়াতের সবকিছু আজ জনপ্রিয়, আকাঙ্ক্ষিত। ইসলাম ত্যাগ, ইসলামবিদ্বেষ আজ ফ্যাশন। একদিন এই সময়টা আসবে, সে কথা বলে গিয়েছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

“নিশ্চয় ইসলাম নিঃসঙ্গ ও অপরিচত অবস্থায় শুরু হয়েছিল, আবার অচিরেই তা নিঃসঙ্গ ও অপিরিচিত অবস্থায় ফিরে যাবে। সুতরাং গুরাবাদের (নিঃসঙ্গ ও অপিরিচিত) জন্য সুসংবাদ।’

যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই গুরাবা কারা? জবাবে তিনি বললেন,

— “তারা কিছু ভালো মানুষ। খারাপ মানুষের বৃহৎ সংখ্যা সাপেক্ষে তাদের সংখ্যা হবে খুবই অল্প। তাদের অনুসারীর চেয়ে বিরোধিতাকারীর সংখ্যা হবে বেশি”

"সংগ্রহ"

পঠিত : ৩১৮ বার

মন্তব্য: ০