Alapon

আইন সকলের জন্য সমান- এ কথাটি সত্য নয়!



বাংলা সিনেমার বদৌলতে আইন বিষয়ে একটি ডায়লগের সঙ্গে আমরা প্রায় সকলেই পরিচিত, ‘আইন সকলের জন্য সমান।’ এই বাক্যটি শুধু বাংলাদেশেই না, সারা বিশ্বেই ব্যবহৃত হয়। কিন্তু প্রশ্ন হল এই কথাটি কতটুকু সত্য?

‘আইন সকলের জন্য সমান’- এই কথার জবাবে বিখ্যাত সালোন বলেন, ‘আইন হচ্ছে মাকড়শার জালের মত, বড়রা পড়লে ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে, আর ছোটরা যায় আঁটকে !’

হাজী সেলিম সাহেবের পুত্র ইরফান সেলিমের গ্রেফতার হওয়া এবং তারপর সকল অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি প্রদান দেখে সালোনের বক্তব্যের যথার্থতা পাওয়া গেল। উল্লেখ্য, গত বছর সাংসদ হাজী সেলিমের পুত্র ইরফান সেলিম তার দেহরক্ষিদের সাথে নিয়ে রাজপথে এক সামরিক অফিসারকে মারধর করে। আর সেই মারধরের ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়ার সাথে সাথে পুলিশ ও র‌্যাব অ্যাকশনে যায়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী হাজী সেলিমের পুরান ঢাকাস্থ বাসায় অভিযান পরিচালনা করে। এই বাসাতেই থাকতেন ইরফান সেলিম।

সেই বাসায় অভিযান চালানোর পর বেশ কয়েকটি অবৈধ অস্ত্র, বিপুল সংখ্যক ওয়াকিটকি, টর্চার চালানোর জন্য হাতিয়ার, বিদেশি মদসহ নগদ টাকা উদ্ধার হয়। সেসময় র‌্যাব বলেছিল, সাংসদ হাজী সেলিমের পুত্র ইরফান সেলিমের নামে অস্ত্র আইনে দুটি মামলা দেওয়া করা হবে। একইসাথে দুদকও বলে, ইরফান সেলিমের নামে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে দেশবাসী এই অভিযানের ভিডিও লাইভ দেখেছে। কিন্তু এতোসব কিছুর পরও জানা গেল, সাংসদ হাজী সেলিমের পুত্র ইরফান সেলিমকে সমস্ত অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি প্রদান করা হয়েছে। তিনি সমস্ত অভিযোগ থেকে মুক্ত। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, ইরফান সেলিমের কাছে যে অস্ত্র পাওয়া গেছে, সেই অস্ত্রের মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন ইরফান সেলিমের দেহরক্ষি। অথচ এই অস্ত্র ইরফান সেলিমই তাকে সরবরাহ করেছিল। তার চাকরি সুবাদে দেহরক্ষি সেই অস্ত্র বহন করেছিল। মানলাম,বহন করাটাও অপরাধ! কিন্তু যিনি বেআইনি অস্ত্র সরবরাহ করলেন, তিনি অপরাধী নন? তিনি অস্ত্র আইনে অভিযুক্ত হবেন না?
সাধারণ আইন মোতাবেক ইরফান সেলিমই প্রধান আসামী হওয়ার কথা। কিন্তু তিনি পেলেন নিষ্কৃতি। সালোনের সেই উক্তিটির কথা স্মরণ করুন, ‘আইন হচ্ছে মাকড়শার জালের মত, বড়রা পড়লে ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে, আর ছোটরা যায় আঁটকে !’

এতো গেল অস্ত্রের কথা! ইরফান সেলিমের বেডরুম থেকে বিপুল পরিমাণ ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়েছে। আর সেগুলো ভীষণ পাওয়ারফুল ওয়াকিটকি, যেগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এলিট সদস্যরা ব্যবহার করে। অন্যদিকে ইরফান সেলিম অবৈধভাবে ভিআইপি ফিক্রুয়েন্সি ব্যবহার করতেন, যা কিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ট্রাক করতে পারে না। শুধু এ কারণেই ইরফান সেলিমের নামে বিটিআরসি তথ্য-প্রযুক্তি আইনে মামলা করতে পারে এবং প্রধান আসামী হিসেবে ইরফান সেলিমকে অভিযুক্ত করতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় বিটিআরসি কতৃক মামলার কথা শোনা গেলেও পরে কোনো এক অজানা কারণে মামলা করেনি। ফলে ইরফান সেলিম আদালতের দারস্ত হওয়া ছাড়াই এই অপরাধের সাজা থেকে মুক্তি পেয়ে গেছেন।

এ কারণেই বলতে হয়, আইন সকলের জন্য সমান নয়! অন্যদিক জাহালমের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। বিনা অপরাধে তাকে বহু বছর জেল ঘাটতে হলো। এছাড়াও নারায়নগঞ্জের সেই ঘটনার কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। পুলিশ গ্রেফতারকৃতদের নির্যাতন করে জবাববন্দি নেয় যে, তারা এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। তাদের জবানবন্দিতে আদালত তাদের শাস্তিও প্রদান করে। কিন্তু কিছুদিন বাদেই দেখা গেল, যাকে হত্যার দ্বায়ে তাদের সাজা দেওয়া হয়েছে, সেই কিশোরীই তার বাবার বাড়িতে ফিরে এসেছে!

এসব দেখলে যে কেউ বলবে, স্বাধীন দেশে বিচার বিভাগ ভেঙ্গে পড়েছে। বিচারব্যবস্থা বলতে আদৌ কিছু থাকলে, তা ক্ষমতাসিনদের হেফাজতের কাজেই ব্যবহৃত হচ্ছে। আর সাধারণ মানুষ আইনের সুবিধা পাওয়ার বদৌলতে, আইনের দ্বারা ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে। এটাই বাস্তবতা।

পঠিত : ৩৪১ বার

মন্তব্য: ০