Alapon

জান্নাতে যেতে চাও যদি...

প্রথম পর্ব
একবার আমি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে একজন জটিল রোগী পেয়েছিলাম। জটিল বলতে অবশ্য তাঁর ব্যবহার রুক্ষ ছিলো, তা বোঝাচ্ছি না। বরং তাঁর জীবন বাঁচানো বেশ মুশকিল ছিলো। আমি আমার অর্জিত সকল বিদ্যার প্রয়োগ করেছিলাম, পরিচিত সকল বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করেছিলাম। তাঁর যন্ত্রণা লাঘবে আমাকে প্রচুর মরফিন দিতে হয়েছিলো। তাঁর শ্বাস নিতেও সমস্যা হচ্ছিলো। একের পর এক জটিলতা বেড়েই চলছিলো। তাঁর মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, কিডনি, লিভার ক্রমান্বয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছিলো। আমাকে বারবার তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে টিউব বসাতে হচ্ছিলো। সমগ্র শরীর জুড়ে কেবল টিউব দেখা যাচ্ছিলো।
সেদিন আমার মনে এক নতুন উদ্বিগ্নতার উদয় হয়েছিলো। আমি যদি এখনই এই দুনিয়া থেকে বিদায় নিই, তবে আমার পরিণতি কি হবে! আমি কি আমার আমল দ্বারা জান্নাতে আমার আবাসস্থল নিশ্চিত করতে পেরেছি?
সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে,
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেনঃ "যখন কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে, জান্নাতে তাঁর জন্য নির্ধারিত স্থান এবং জাহান্নামে তাঁর জন্য যে স্থান নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে, তার সামনে তা দেখানো হয়"।
এই হাদীসের ব্যাখ্যা করতে বিশেষজ্ঞ তাফসীরকারকগণ বলেছেন যে, এর দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে, সমস্ত মানবজাতির প্রত্যেকের জন্য আল্লাহ তায়ালা জান্নাত ও জাহান্নাম উভয় স্থানেই একটি জায়গা নির্ধারণ করে রেখেছেন। এবং সেই স্থানটি বান্দার সামনে প্রদর্শিত হবে সেদিন, যেদিন সে মৃত্যুবরণ করবে।
কেউ যদি ঈমানদার বান্দারূপে মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে জাহান্নামে নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত হবে এবং জান্নাত হবে তার ঠিকানা। আর যদি সে একজন অবিশ্বাসী, নাফরমান বান্দা থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়ে যায়, তখন তাকে জান্নাতে তার সেই আবাসস্থল দেখানো হবে- যা তার চিরঠিকানা হতো যদি সে আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হতো। অতঃপর তাকে দেখানো হবে জাহান্নাম! যা তার বদ আমল দ্বারা সে নিজেই নিজের জন্য নির্ধারণ করেছে।
বর্ণিত আছে,
ইমাম ইবনু আবিদ দুনইয়া( রহিমাহুল্লাহ) রাত্রিবেলা যখন প্রার্থনা করতেন, তিনি হাত দ্বারা তাঁর দাঁড়ি মুষ্টিবদ্ধ করতেন এবং বলতেন,
"হে আল্লাহ! আমি জানি যে আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন সেসব লোকেদের বিষয়ে যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন এবং কাদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত আছে। হে প্রভু! আমাকে অনুগ্রহ করে অবগত করুন, আমি কোন দলে আছি"।
এবং সেজন্য ই সুফিয়ান সাওরি রহিমাহুল্লাহ বলতেন,
" আল্লাহ তোমার সম্পর্কে কি ধারণা পোষণ করেন, এ চিন্তা কি কখনো তোমাকে কাঁদায়?"
তিনি কি বুঝিয়েছেন এই কথার দ্বারা? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা সর্বদা অবগত, আমাদের কার পরিণতি কীরূপ হবে- সে বিষয়ে। এই ভাবনা কি আমাদের এই সুদীর্ঘ জীবনে কখনো আমাদের কাঁদিয়েছে?
সেই রাতে আমার মাঝে কেবল এই চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছিলো, কোন কাজগুলোর দ্বারা আমি জান্নাতে আমার চিরস্থায়ী আবাস করে নিতে পারবো এবং জাহান্নামের ভয়াবহ আজাব থেকে মুক্তি পাবো। আমার সময় যে ফুরিয়ে যাচ্ছে! আমি নিজেও জানিনা এই পৃথিবীতে আমি আর কতো সময় আছি! এই স্বল্প সময়ের মাঝেই আমাকে নিজ আমলনামা আল্লাহর পছন্দনীয় রূপে প্রস্তুত করতে হবে।
আমাকে আমার পরিচিতজনেরা মাঝে মাঝে ই বলেন, আমি নাকি ভীষণ গম্ভীর এবং সর্বদা চিন্তায় মগ্ন থাকি! তারা আমাকে পরামর্শ দেন সাময়িক সময়ের জন্য জীবন উপভোগ করতে। আমি কিভাবে জীবন উপভোগ করবো যেখানে মৃত্যু প্রতিনিয়ত আমাদের দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে। আমি নিশ্চিত জানিনা কখন আমার সময়সীমা ফুরিয়ে যাবে! তাহলে আমি কিভাবে আনন্দ ফূর্তির মাঝে নিজেকে ব্যস্ত রাখবো!
জরুরী বিভাগে কাজ করার কারণে প্রতিদিন আল্লাহ আমাকে রিমাইন্ডার দেন, একদিন আমিও এরূপ অবস্থায় নিপতিত হতে পারি! আমার শরীর ও একদিন অচল হয়ে যেতে পারে! যেকোন সময় মৃত্যু আমাকে গ্রাস করবে! আমার জন্য তো এক মুহুর্ত সময় এই স্মরণ থেকে ভুলে থাকা অসম্ভব!
তাই আমি ভাবতে থাকলাম এমন কোন কাজগুলো রয়েছে, যা করলে আমি জাহান্নাম থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবো এবং জান্নাতে যেতে পারবো।
অতঃপর আমি সেই সব কাজগুলোর তালিকা করা শুরু করলাম যে কাজ করলে আল্লাহ নিশ্চিত ভাবে আমাকে জান্নাত দান করবেন এবং জাহান্নাম আমার জন্য হারাম করে দিবেন।
কেননা আল্লাহ তায়ালা ওয়াদাবদ্ধ এবং নিশ্চয়ই তিনি প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না।
আমার ভাই ও বোনেরা,
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের প্রতি পরম দয়ালু। কেবলমাত্র আপনার বলা একটি কথা তাঁর পছন্দ হলে, তার বিনিময়ে তিনি আপনাকে জান্নাত দিয়ে দিতে পারেন। আপনার কেবল একটি কথা ও আপনাকে জাহান্নামে পৌঁছে দিতে পারে, যদি তা আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে।
"রাসূল (সাঃ) বলেন-
বনী ইসরাইলের একজন ধার্মিক ব্যক্তি একজন ব্যক্তিকে সবসময় পাপে নিমজ্জিত থাকতে দেখতো। একদিন সে সেই পাপী ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বললো, " আল্লাহ তোমার মতো পাপী ব্যক্তিকে কখনো ক্ষমা করবেন না।"
আল্লাহ তখন তার প্রতি অসন্তুষ্ট হলেন এবং শুধুমাত্র এই কথার কারণেই ধার্মিক ব্যক্তির সকল আমল অর্থহীন হয়ে গেলো, আল্লাহ তাকে মৃত্যুর পর জাহান্নামে স্থান দিলেন এবং সেই পাপী ব্যক্তিকে ক্ষমা করে জান্নাতে জায়গা করে দিলেন।
( সুনানে আবু দাউদ)
আপনাদের মাঝে এমন কেউ আছে যিনি আমাকে গ্যারান্টি দিতে পারবেন যে, বাকি জীবনে তারা কখনোই আল্লাহকে রাগান্বিত করার মতো কোন কথা উচ্চারণ ও করবেন না। যদি কেউ এরূপ নিশ্চিত হতে পারেন, তো আলহামদুলিল্লাহ! কিন্তু যদি এরকম নিশ্চয়তা না থাকে, তাহলে অনুরোধ করছি- আমি এখন যা বলতে চলেছি সেই কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং আত্মস্থ করে নিন।
এখন আমি যে বিষয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি, তা হলো সেসব উপায়, সেইসব কাজ- যার দ্বারা আমরা নিশ্চিত ভাবে জান্নাতে যেতে পারবো, যদি আমরা ইসলামের উপর অটল থেকেই মৃত্যুবরণ করি। কেননা এই কাজগুলো রাসূল(সাঃ) তার হাদীসে আমাদের জানিয়েছেন। এবং এই কাজগুলো করলে আমাদের জান্নাত সুনিশ্চিত এরূপ নিশ্চয়তা তিনি দিয়েছেন। আল্লাহু আকবার!
জান্নাতে যাওয়ার জন্য কোন কাজগুলো করতে হবে, তা তালিকাবদ্ধ করতে গিয়ে আমি মোট ৭ শ্রেণীর কাজ পেলাম। এগুলো ছিলো সেইসব কাজ, যা করার মাধ্যমে আপনি জান্নাতে যেতে পারবেন।
তাহলে শুরু করা যাক। আমি এই তালিকার সবচেয়ে সহজতর কাজ থেকেই শুরু করছি। একটি কাজ কেবল এমন রয়েছে, যা শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য। আর বাকি ছয় শ্রেণীর কাজ নারী পুরুষ উভয়ের জন্য ই।

৭ নং শ্রেণীঃ
কোন মুসলমানের মুখে হাসি ফোটানো
মুসলিম ভাইয়ের সাহায্যে এগিয়ে আসা ব্যক্তির প্রতিদান সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর অসংখ্য হাদীস রয়েছে।
রাসূল(সাঃ) বলেন,
“ যে ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইয়ের মুখে হাসি ফোটায়, তাকে জান্নাত ছাড়া আর কোন প্রতিদান দেয়া হবে না”।
(সহীহ মুসলিম)

(চলবে)

জান্নাতে যেতে চাও যদি...
মূলঃ শায়খ তাওফিক চৌধুরী।
ভাবানুবাদঃ সাবিহা সাবা।

পঠিত : ৩৩০ বার

মন্তব্য: ০