Alapon

“ সুস্থ জীবনের অপেক্ষায়”...

কাঁপা কাঁপা হাতে ডায়াল করছে নীহা! ক্রিং.. ক্রিং… মনে হচ্ছে অনন্তকাল ধরে বেজেই চলেছে! যেনো একযুগ পর মা ওপাশ থেকে ফোনটা রিসিভ করলেন। রিসিভ করতেই নীহার মা শুনলেন নীহার ভয়ার্ত কন্ঠ। হড়বড় করে নীহা বললো, “ মা, তুমি কি একটু বাবাকে বলবে আমায় রাজবাড়ী হাইওয়ে থেকে পিক করে নিতে”? সে ওখানে কি করছে, বাবাকে কখন যেতে বলবে এসব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার পূর্বেই তার কানে আসলো নীহার আর্তচিৎকার! যেনো ওকে কেউ টেনে নিয়ে যাচ্ছে! সাথে সাথে লাইন টা খট করে কেটে গেলো! ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব রাইনা রহমান দাঁড়ানো থেকে ধপ করে বিছানায় বসে পড়লেন! বুকটা তার যেনো হাপরের মতোন ওঠানামা করছে। তার আদরের নীহার সাথে কি হচ্ছে ওখানে! ফোন হাতে নিয়ে কোনোমতে স্বামীর নাম্বারে ফোন দিলেন তিনি। ওপাশ থেকে রিয়াদ সাহেব ফোন ধরতেই “তুমি জলদি রাজবাড়ী হাইওয়েতে পৌঁছোও পুলিশ নিয়ে। নীহা বিপদে!” - কথাটুকু বলে ই একপাশে এলিয়ে পড়লেন তিনি!
_____________________

এক মাস পর……..
সেদিনের সেই ঘটনা মনে পড়লে আজো রাইনা রহমানের গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। রিয়াদ সাহেব বিধ্বস্ত নীহাকে নিয়ে হসপিটালে পৌঁছেছিলেন সন্ধ্যায়। ঘটনাস্থল খুঁজে সেখানে উপস্থিত হতে তার বেশ দেরী হয়ে যায়। ততোক্ষণে মানুষরূপী হায়েনাগুলো তাদের পাশবিকতা চরিতার্থ করে ফেলে গিয়েছিলো নীহা কে! তারপর পুলিশী ঝামেলা কোনমতে সামাল দিয়ে তিনি মেয়েকে হসপিটালে ভর্তি করে দেন। এক সপ্তাহ পর হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে ওকে তারা নিয়ে আসেন বাসায়। দু'জনে ঠিক করে নিয়েছিলেন মেয়েকে কোনভাবেই অতীত ঘটনার কথা মনে পড়তে দেয়া যাবে না। সেই চিন্তা অনুযায়ী তারা সবসময় চেষ্টা করতেন ও কে খুশি রাখতে। কিন্তু এটা কোন নীহা??! তাদের সব প্রচেষ্টা বিফলে যাচ্ছিলো।

নিজের রুমে রাত-দিন জানালা বন্ধ করে ভারি পর্দা টেনে দিয়ে অন্ধকার করে রাখে সে। এক ফোঁটা আলোকরশ্মি ঢুকবার জো নেই। কোন কথা জিজ্ঞেস করলে নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। চোখের মণি স্থির, নিষ্পলক। যেনো ও এই জগতে ই নেই। এতো বেশি শকড হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে রাফির প্রত্যাখ্যান! পারিবারিক সম্মতিতে ওদের বিয়ে হবার কথা ছিলো এক মাস পরে ই। কিন্তু এ ঘটনা ঘটে যাবার পর রাফির পরিবার এ বিয়ে করাতে অস্বীকার করে। রাফিও অপারগ হয়ে নীহাকে না করে দেয়। নীহা কেবল ভাবলেশহীন চেহারায় তাকিয়ে ছিলো! মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রাইনা রহমানের বুক ফেটে যায়! দোষ টা তো তার মেয়ের ছিলো না। তাহলে সমাজ কেনো তাকে ই শাস্তি দিচ্ছে!! তাঁর সেই পুরনো, প্রাণচঞ্চল মেয়েকে তিনি কবে ফিরে পাবেন!! সমাজের এই ঘৃণ্য প্রথা আর কবে পরিবর্তন হবে!! রাফির বোনের সাথে যদি আজ এরূপ হতো, সে কী সহ্য করতে পারতো??!!
আল্লাহ! মাজলুমের তো তুমি ই সহায়!

-সুস্থ জীবনের অপেক্ষায়
সাবিহা সাবা

#জাগরণএক্সক্লুসিভ

[ সমাজের নির্যাতিতা নারীকে একবার আপন বোনের আসনে বসিয়ে ভাবুন। সমাজকে বদলাতে হলে নিজস্ব চিন্তাধারার পরিবর্তন ঘটান। তাদের জন্য ও আমাদের কিছু করার আছে। এগিয়ে আসুন]

পঠিত : ৪২৩ বার

মন্তব্য: ০