Alapon

|| আমার মৃত্যু||

আমি মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে গেছি! আমার প্রাণবন্ত উৎসবমুখর জীবনের প্রাণবায়ু আজ নিঃশেষ হয়ে গেছে। প্রাণ পাখিটা ফুঁড়ুৎ করে উড়ে হাওয়া হয়ে হারিয়ে গেছে সুদূরে ! পৌঁছে গেছে রব্বুল আলামিনের নিকটে তাই আজ আমার চারিধারে কান্নার রোল। গগণ বিধারী সব চিৎকার আমার অশপাশে।

সবচেয়ে বেশি কাঁদছে আমার মা। যে মা'কে কখনো কোনো পরপুরুষ দেখেনি অতোটা -আজ বাড়িতে কতোশতো পরপুরুষ আসছে। সবাই দেখছে আমার মা'কে। বাহিরে বের হলে যিনি হাত মোজা পা মোজা সমেত বের হতেন,তাঁর আজ কোনো রকমের কোনো চৈতন্য নেই। আমাকে বারবার ঝাপটে জড়িয়ে ধরছে বুকের ভেতর! চিৎকার চেঁচামেচি করে আকাশ - বাতাস কাঁপিয়ে তুলছেন আজ তিনি!

আমার সুকঠিন হৃদয়ের বয়োবৃদ্ধ বাবা'টাও আজ বারবার মূর্ছা যাচ্ছে। হু হু করে কেঁদে কেঁদে অস্থির তিনি! বারংবার আমার মুখে-মাথায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে চুমো এঁকে দিচ্ছে। আমাকে দেখেই যে বাবা-মা'র জগতের সব কষ্ট উবে যেতো আজ তাদের সেই প্রিয় সন্তানটি নেই।জাগতিক সম্পদের দিকে ভ্রুক্ষেপহীন মানুষটা যেই "আমি"কেই শুধু সম্পদ মনে করতো সেই সম্পদ আজ তাদের কাছ হতে যোজন যোজন দূরত্বে চলে গেছে।বুক চাপড়ে চাপড়ে চিৎকার দিয়ে দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন তিনি!

ছোটো ছোটো ভাই বোনগুলো হাউমাউ করে "ভাইয়া ভাইয়া" বলে চিৎকার করে কাঁদছে শুধু! বড়ো ভাইবোনেরা বোনেরা হাত-পা ক্ষণিক পর পর মাটিতে চূড়ে আর্তচিৎকার দিয়ে পুরো বাড়ির পরিবেশকে উত্তপ্ত করে যাচ্ছে।

ছোট্ট ভাগিনা-ভাগ্নি,ভাতিজা-ভাতিজিগুলোর মন পাথরের মতো শক্ত হয়ে উঠেছে।ওদের চোখ ছলছল করছে।পৃথিবীর একটা মানুষকে এরা এতো অাপন অার প্রিয় মনে করেছে। সকাল-সন্ধ্যা তাঁর কোলে এসে ভিড় জমাতো।গল্প করতো গল্প শুনতো, সেই মানুষটা ওদের সাথে আর কথা বলবেনা ! আর আদর করবেনা, চকলেট দেবেনা, চাঁদকপালে আর মিষ্টি করে চুমো-ও এঁকে দেবে না! ভাবতে ভাবতে পিচ্চিরাও ভীত বিহ্বল!! কান্নাকাটি করে করে ওদেরও হুঁশ হারা অবস্থা।

আমার রূপবতী রাজরানীর মতো বউটা স্বামী হারানোর যেই কঠিন বেদনা, সেই সুকঠিন বেদনায় বিমর্ষ তার মন-মনন। আমার সন্তানদের "বাবা বাবা" সুরের ক্রন্দন যেনো আকাশ-জমিন সব কিছুকে প্রকম্পিত করে তুলছে!

চারপাশ ঘিরে ফেলেছে আমার মারা যাওয়ার সংবাদ। স্বজন পরিজনদের হা-হুতাশে আকাশ বাতাস মুখরিত আজ!বন্ধু-সুহৃদের মন ভারাক্রান্ত বেদনা ক্লিষ্ট।

আমার মৃত্যুর সংবাদ-শোকের মাতমে বন্ধুদের ফেসবুক টাইমলাইনে যেনো কষ্টের কালো মেঘ জমাট বেঁধেছে! যে মানুষদের চক্ষুশূল ছিলাম আমি তারাও কিছুটা চোট পেয়েছে মনে। কেউ কেউ আমার স্মৃতির অনলে পুড়ছে। কেউ আমাকে নিয়ে ক্ষুদ্র-বৃহৎ অনেক স্বপ্নের ফুলঝুরি বিছিয়েছিলো মনের কোণে, তাদের সবার সব সুখ স্বপ্নই আজ মিসমার!

যে মানুষেরা আমায় অবিরাম উৎসাহ উদ্দীপনা দিতো যে,"তুমি অনেক বড়ো হবে" তারা আজ আকাশ ফাঁটানো কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে।তাদের সেই স্নেহ ভালোবাসার মানুষের হারিয়ে যাবার শোক তাদের মনকে চুরমার করে দিচ্ছে....!

আমাকে নিয়ে শোঁক গাঁথা ক্রন্দনের আহাজারী-রোনাজারিতে ইট-পাথরের দুর্গ দেয়াল, সবুজ গাছের পত্র-পল্লবও যেনো কেঁদে কেঁদে আজ অশ্রুর শ্রাবণ নামাবে!

কেউ কেউ এখন সুযোগ বুঝে আমার দোষান্বেষণ শুরু করছে। আমার চেতনায় কী গণ্ডগোল ছিলো, আমার মানহাজে কী বক্রতাযুক্ত ছিলো, আমার আকিদার কী সমস্যা ছিলো --মাইক্রোস্কোপ যন্ত্র দিয়ে তারা তা খোঁজার মহতি কাজে নেমে পড়লো! এরপর দেদারসে তা প্রচার প্রসার প্রতিষ্ঠার জন্যে ঝাঁপিয়ে পড়লো!

এতোসব কিছুর পরেও আমার নিজেরও তো কিছু স্বপ্ন সাধ ছিলো,কতো আকাশ ছোঁয়া ইচ্ছে ছিলো! রঙবেরঙের কতো সহস্র ভাবনা ছিলো! আজ আমার নিঃশ্বাস নিঃশেষ হবার সাথে সাথেই সব থমকে গেছে। হারিয়ে গেছে। চুরচুর হয়ে গেছে। যেনো একাকার ম্যাসাকার সব ভেঙে ভেঙে......

আমার শোক মা-বাবাও ধীরেধীরে হয়তো ভুলতে বসেছে। যদিও মা-বাবার জন্য তা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য...

আমার কবরে সাওয়াল শুরু হয়েছে! আমার কতো বন্ধু স্বজন ভাই বোন ছিলো,এখানে আমাকে কী নিষ্ঠুরভাবে নিষ্পাপ ভঙ্গিতে একা একা ফেলে রেখে চলে এসেছে সবাই! আমার চারপাশ কী ভয়ংকর ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন!তমাসাব্রিত ! অন্তত অন্ধকারের অনল মনে হয় চারিদিকে আমার!

আমি চিরস্থায়ী,চিরন্তন সুখের, চির সবুজ জান্নাতের যাত্রী হবো;না দুঃসহ বেদনার অনন্ত অন্ধকারের ঠিকানা জাহান্নামের যাত্রী হবো তা-ও অজানা!আমার পালনেওয়ালা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা কতোটা খুশি আমার ওপর আমি তার বিন্দু বিসর্গ কিছুই জানি না....

আমার কতো শতো সময় ছিলো কবর জীবনকে ভালো করে সাজানো গোছানোর জন্যে ! কিন্তু আমি অযথা আড্ডা,মজা মাস্তিতে ডুবে ছিলেম। পাপের পাল্লাকে হালকা করে পূণ্যের পরিমাণ বাড়ানোর অসংখ্য উপায়-উপাদান, সময়-সুযোগ ছিলো আমার ,আমি তা করিনি!

আ ঢাউস ঢাউস বঙ্কিম শরৎচন্দ্র রাবিন্দ্রনাথ সমরেশ হুমায়ুন পড়েছি!হাজারো নোভেল নাটক পড়েছি। ঝালমুড়ি টাইপের কতোগল্প পড়েছি !
বটতলার কতো বাজে উপন্যাসের পাঠক ছিলাম আমি ! বলতে গেলে বইপোকা ছিলাম পুরোপুরিই। কিন্তু এই আমি সারাজীবন সময় করে ৪/৫টে তাফসির তো পরের কথা একটাও পড়িনি ! এমনকি স্বাভাবিক তরজমাও না!

আমি রাতদিন স্বপ্নের ক্যারিয়ারের জন্য অচ্ছু্ত কতো মানুষের জীবনী পড়লাম। তাদের বিটে-মাটি,ঘর-বাড়ি বাবা-মা সহ সবকিছুই গ্রোগাসে গিললাম! অথচ আমার চিরকালের চিরন্তন যে সুখ-স্বপ্ন, তার জন্য কিছুই করলাম না! স্বাভাবিক সালাত তিলাওয়াতও নয়! এবং আমি আমার নবিজি (সঃ)এর জীবনীটাও স্বাভাবিকভাবে পড়িনি! তাঁকে জানবার তাঁকে বুঝবার ন্যূনতম আকাঙ্খা উদ্যোগ কিছুই তো ছিলো না আমার....

ইংলিশে ILTS করেছি,জাপানি ভাষা,কোরিয়ান ভাষা শেখেছি দুনিয়ার জীবনকে অলোক রাঙা করার জন্য।কিন্তু আমি অমার পরকালের জীবনকে সহজ করার জন্যে দ্বিনুল ইসলামের ভাষা, আমার রব্বের ভাষা, ওনার রাসুল(সঃ)এর ভাষা "আরবি ভাষাটা" শিখিনি! শিখতে বিন্দু বিসর্গ পরিমাণ প্রচেষ্টাও করি নি!

কী না পড়েছি জীবনে আমি! অথচ আমি যাঁর উম্মত, যেই মানুষটা আমার হেদায়াত ও মুক্তির জন্যে কেঁদে কেঁদে অস্থির হয়েছেন, রবের রহমাহ যেনো আমার নাসীবে জোটে সেই জন্য যেই মানুষটা কতো অশ্রু ঝরিয়েছেন। কিন্তু সেই মানুষটার একটা জীবনীগ্রন্থও আমি পড়িনি! তাঁকে জানতে ন্যূনতম চেষ্টাও করিনি।কতো হতভাগা আমি!

জীবনের জানালা দরোজায় আমার ব্যস্ততার ভিড় ছিলো প্রচুর! প্রচণ্ড কর্মমুখর এ জীবনে কী না করলাম আমি! অযুত নিযুত কাজে আমি ব্যাতি-ব্যস্ত-মাশগুল ছিলাম। সারাটাক্ষন।সব সময়।জীবন ভর!

রাত জেগে কতো কাজ,অ-কাজ করেছি।অখণ্ড অবসরে আমি মাইন্ড রিফ্রেশের জন্যে সিনেমা- সংগীত-নাটকের জগতে ডুব দিতাম।বিনোদনের জগতে ডুবুরি হয়ে সাঁতার কাটতাম।সব এই ক্ষণিক জীবনের তরেই করেছি!ক্ষণিক এই জীবনকে নিয়েই মেতে রয়েছিলাম শুধু....

আমার যে আরো এক অনন্ত মহা জীবন-জগৎ আছে,তার জন্যে যে জীবিকা অন্বেষণের প্রয়োজন আছে,সেই জীবনের সামান সংগ্রহ করার সামান্যটুকুন ফুরসতকেও কাজে লাগাই নি আমি!

কতো যে রাত জেগেছি যখন, তখন ঘুমোতে যাবার পূর্বে আমি দু’রাকাআত তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে শু'তে পারতাম, আমি তা করি নি! সেটা করবোই বা কী করে, আমি তো পরিপূর্ণ শুদ্ধ করে সুন্দর ভাবে সুচারুরূপে পাঁচ ওয়াক্ত যে সালাত --সেটাই করিনি আদায়!

আমি নেতা হতে চেয়েছি,নেতৃত্বের খায়েশ ছিলো আমার রগে রগে। প্রতিটি রক্ত কণিকায়! জন্মলগ্ন হতেই! আমি তা হয়েছিও। আমার এই খায়েশের বলি হয়েছে কতো যে নীরিহ জীবন! আমি নিজের নেতৃত্ব ঠিক রাখতে সম্ভাবনার হাজারো গোলাপকে মুকুলেই ঝরিয়ে ফেলেছি!

আমার ডজন ডজন কর্মী ছিলো, আমি তাদের হাতে কুরআন তুলে দেই নি। আমি ছাত্রদের হাতে কলমের পরিবর্তে বুলেট বোমা তুলে দিয়েছি!তাদেরকে মদ-গাজা-সিগারেট-ইয়াবা-হিরোইন-ফেনসিডিল তুলে দিয়েছি! এদের একটা সন্ত্রাস আর বদমাশ বাহিনীতে রূপান্তর করেছি আমি। এরা ভালো-মন্দের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে!

এরা আমার দাপটে দাপিয়ে বেড়াতো সারা শহর নগর গ্রামের অলিতে-গলিতে। চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি-ইভটিজিং-খুন-গুম-ধর্ষণ করে বেড়াতো বুক ফুলিয়ে! আমার দল আমার নাম ভাঙিয়ে ভাঙিয়ে করতো সব। আজ এদের সকল পাপের ভাগিদার আমিও হলাম!

আমার ক্ষমতার উদগ্র খায়েশ ছিলো।সেই খায়েশ বাস্তবায়নে ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ, সৎ-অসৎ কিছুই বাছাই-যাচাই করিনি।করেছি গুম-খুন। সৎ আদর্শবান মানুষদের আমি ক্ষমতার গদি পাকাপোক্ত করতে "অমুকতা বিরোধী অপরাধী " সাজিয়ে ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দিয়েছি!

এই আমি এমন মানুষদের খুনি-ধর্ষক-চোর-ডাকাত বানিয়েছি, যাঁর বা যাঁদের মাধ্যমে অসংখ্য বনী আদম আলোর আঙ্গিনায় ভিড়ছে। হেদায়েতের অমীয় সুধা পান করেছে,শতো-সহস্র অমুসলিম যাঁর বা যাঁদের হাতে হাত রেখে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছে!

এমন ছেলেদের আমি বন্দুক যুদ্ধের নাটক সাজিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যা করেছি, যাঁরা ছিলো সৎ,ভদ্র, সালাত আদায়কারী, সালাম প্রদানকারী, তিলাওয়াতকারী, পরোপকারী, বিনয়ী।

যাদের উন্নত আমল আর অনুপম চরিত্রে মুখরিত ছিলো পাড়া-মহল্লার প্রতিটি বাড়ি।প্রতিটি অলি-গলি।মানুষের ইথারে ইথারে সত্য-দ্বীনের আহ্বান পৌঁছে দিতো যেই ছেলেগুলো তাদেরকে আমি নির্মম কায়দায় কুপিয়ে জখম করেছি,খুন করেছি!

অথচ এরা আমার দলের ছেলেদের মতো মেয়েদের ধর্ষণ ইভটিজিং করতো না। চাল চোর ডাল চোর জনগণের সম্পদ জীবন চোরেরা আমার-প্রসাশনের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়াতো।

শাহবাগের মোড়, টিএসসি চত্বর সহ নানা জায়গায় আমার পালিত সোনার ছেলেরা কসাই মার্কা শ্লোগান দিতো যে, "একটা একটা অমুক ধর,ধইরা ধইরা জবাই কর্। ধইরা ধইরা নাস্তা কর্" বা অমুক ধরো, জবাই করো" অথচ আমি ওদের নির্বিঘ্নে নিশ্চিত চলতে ফিরতে বলতে করতে দিয়েছি সব!

কিন্তু, যাদের বিরুদ্ধে এমন বর্বর শ্লোগান আর হত্যাকাণ্ড করা হতো তাদের জবান হতে এমন ভয়ানক হিংস্র ভাষার শ্লোগান শোনা যায় নি! ওদের মিছিলের শ্লোগান ছিলো আল্লাহর নামে। আর আমার মিছিলে শামিল হওয়ার শ্লোগান ছিলো নেতার বন্দনা আর চাটুকারিতা। তবুও আমি ক্ষমতা আর পদের নেশায় এদেরই হত্যা করেছি! এদের ওপর অপবাদ-অপমান আর স্বাভাবিক সন্ত্রাস এবং তথ্য সন্ত্রাসও চালিয়েছি!

আমার গায়ে শক্তি ছিলো। প্রচণ্ড। প্রবল।খুউউউব! তাই আমার নেতৃত্বে-ইশারায় চর দখলের ন্যায় ক্যাম্পাসের হল দখল হয়েছে। হিজাবী মেয়েদের কটুবাক্য,লাঞ্চিত করা,ক্লাস থেকে বের করে দেয়া,জুনিয়রদের সায়েস্তা, র‍্যাগ দেয়া,কখনো কখনো শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলার মতো মারাত্মক জঘন্য কাজ,নামাজি ছেলেদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিলো তো আমার আস্কারায়ই! আজ তাই এতো এতো পাপের অংশীদার আমাকে হতে হচ্ছে....

আমি ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ছিলাম, আমার নির্মম কামনার বস্তু হতে হয়েছে অসংখ্য সতীসাধ্বী যুবতী শিক্ষার্থীকে! আমি নাম্বার না দেয়ার,ফেল করিয়ে দেবার ভয় দেখিয়ে তাদের ভোগ করেছি নাশ করেছি! আজ আমার এতো অপরাধ,পাপাকাঙ্খার কোন জবাব নেই আমার কাছে!

আমি সাংবাদিক ছিলাম, সাহিত্যিক ছিলাম,ব্লগ,ওয়েবসাইটে,কাগজে কলমে বর্বরতাও কম করিনি,রাতকে দিন,দিনকে রাত,সত্যকে মিথ্যে আর মিথ্যাকে সত্য করার মতো পাষণ্ড সব তথ্য সন্ত্রাস চালিয়েছি।

আমার কলমের খোচায় অবৈধ যৌনাচারকে উস্কে দিতে শব্দের কারিগরী করেছি।হারাম সম্পর্ককে মহান করতে বাক্যের কী রমরমা কারিশমা-ই না করেছি আমি! কতো যুবক-যুবতী আমার দ্বারা পাপিষ্ঠ হয়েছে যার হিসেব মেলা ভার! আমার কলমের খোঁচায় কতো মানুষের জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার-অমানিশা!

আমার টুইটার ইন্সটাগ্রাম ফেসবুক আইডিও ছিলো। সেটাতে আমি কোনো প্রোডাক্টিভ কিছুই করিনি। আমি মেয়েদের অকারণে অযথা নক করেছি,শুধু শুধু! কিন্তু সেটায়ও ভালো কোনো আচরণ করিনি আমি। রিপ্লে কোনো মেয়ে না দিলে তাকে বড়ো অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছি।বকা দিয়েছি। আমার এতো সব অমূলক,অনভিপ্রেত কর্মের রেকর্ড তো ফেরেশতারা সংরক্ষণ করে রেখেছেন!

আমি আমার স্বচ্ছতা,নৈতিকতা,পবিত্রতা ও অর্থের জলাঞ্জলী দিয়েছি যে গার্লফ্রেন্ডের জন্যে,সে-ও আজ আমার কোনো পাপের অংশীদার হবে না!

কতো মানুষ,কতো ভাই আমায় এমন উচ্ছৃঙ্খল বল্গাহীন অস্বচ্ছ অপবিত্র জীবন হতে শুদ্ধ জীবনের দিকে আহ্বান করেছে,অথচ আমি কর্ণে তা ধারণ করিনি! আমি তাদের কতোখানি, কতোভাবেই না অবজ্ঞা, অবহেলা, অপমান করেছি তা তো আমি, আমি এবং এই আমিই জানি!

আহা! আমি যদি ক্ষণিক এই জীবনকে নিয়ে মেতে না থাকতাম শুধু!সাথে সাথে যদি কিছুটা মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্যেও সঞ্চয় করতাম। আমি যদি মৃত্যু নামক এই অনিবার্য মহা বাস্তব জীবন নিয়ে পরিপূর্ণ সচেতন থাকতাম! আজ আমার তো নিযুত কোটি পাপ।যেন পাপের পিরামিড গড়েছি আমি!

জীবনের শতো কোলাহলের ভিড়েও যদি কুরআনের সাথে মিতালী গড়তাম,ইনসাফ আর ইনসানিয়াতের ধারক-বাহক হওয়ার সামান্যতম একটু প্রচেষ্টাও থাকতো আমার। তাহলে কতোই না সহজ হতো আমার হিসেব!

আমার এতো জশ-খ্যাতি,প্রভাব-ক্ষমতা-মর্যদা,ধন-সম্পদের ভাণ্ডার তো কোনো কাজেই আসলো না! কিছুর বদৌলতেই তো আমি বেঁচে থাকতে পারলাম না। বেঁচে থাকতে পারছি না!

আজ যে আমার কর্মই হবে আমার সাথী!অথচ এই কর্মটাও তো আমার ভালো না!কী করবো আমি?

কোথায় যাবো আমি? পালাতে চাই।পালাবার তো রাস্তা দেখি না। কোথাও আজ আ আমার জন্যে পালাবার পথ খোলা নেই!

আজ আমার দাপট-ধমক কোথায় গেলো? আমি এই ঘুটঘুটে অন্ধকার আর তীব্র তৃষ্ণা হতে মুক্তি চাই! কেউ বুঝি এখান থেকে আমায় রক্ষা করবে না.......????

এখন মৃত্যু পরবর্তীতে কতো ভয় কতো আফসোস আর চিন্তে আমার।এই চিন্তে যদি আমি বেঁচে থাকা অবস্থায় করতাম,তাহলে তো আমার আর কোনো ভয়-বাঁধা ছিলো না!কেনো করলাম না আমি.....

আমি তো এখন পৃথিবীর জমিনে ঈমান-আমলের চাষাবাদ করার জন্যে পূনরায় ফিরে যেতে ইচ্ছে হয়!এই ইচ্ছের যে কোনো মূল্যই নেই আমার! কারণ, আমি তো এখন মৃত্যু নামক সত্যের স্পষ্ট সাক্ষী।প্রত্যক্ষদর্শী!


||আমার মৃত্যু||
~ রেদওয়ান রওয়াহা

[বিঃদ্রঃ- ২৯.০৫.২০ ইং তারিখে অসুস্থ অবস্থায় বিচানায় শুয়ে শুয়ে মৃত্যু নিয়ে ভাবার ফলাফল লেখাটা। আপনাদের নিকট অনুরোধ, আল্লাহর ওয়াস্তে লেখাটি কপি করবেন না।]

পঠিত : ৪০৬২ বার

মন্তব্য: ০