Alapon

সুরা কাহাফ থেকে শিক্ষা-০১




শুক্রবার আসলেই আমরা অনেক ভাই-বোনের সুরা কাহাফ পড়ার জন্যে মোটিভেশান দেখতে পাই। এবং অনেক ভাই বোন আলহামদুলিল্লাহ তা পড়েও। আগের চেয়ে এই আমলের প্র্যাকটিস বেড়েছে। নিঃসন্দেহে খুশির বিষয়। আলহামদুলিল্লাহ!

আমরা সাথে সাথে যদি এই সুরাহ কাহাফের মর্মোদ্ধার করার চেষ্টা করি। শিক্ষা গ্রহণ করতে চেষ্টা করি, এবং এক দুটো আয়াত হলেও যদি উপলব্ধি করার প্রচেষ্টা করি —তাহলে এই যে তিলাওয়াতটা, তার সার্থকতা পূর্ণ হবে। কুরআন অনুযায়ী একসময় জীবন গঠনটা অধিকতর সহজ হবে। ইন শা আল্লাহ!

তাই আসুন, প্রতি শুক্রবারে যারা সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করি, তারা অন্তত একটা আয়াতকে হৃদয়ঙ্গম করার চেষ্টা করি। একটা আয়াতের তাফসির পড়ি৷ দু-তিনটে তাফসির গ্রন্থ থেকেই সেই আয়াতের তাফসির পড়ি। আর একটা মজবুত শিক্ষা গ্রহণ করি সেই আয়াত থেকে— যা আমাদের জীবনের জন্য কাজে লাগবে।

আমার আজকের সুরাহ কাহাফের শিক্ষা হলো, আমরা সবসময় সব কাজের আগে ইন শা আল্লাহ বলবো।

যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাঁর নবিকে বলেন,

" আর কখনই আপনি কোনো বিষয়ে বলবেন না, ‘আমি এটা আগামীকাল করবো, (-সুরা কাহাফ-২৪)

পরের আয়াতেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন কী দেখুন,

(ইন শা আল্লাহ) আল্লাহ্ ইচ্ছে করলে’ এ কথা না বলে (বলবে না কাজটা করবো।) আর যদি ভুলে যান তবে আপনার রবকে স্মরণ করবেন এবং বলবেন, ‘সম্ভবত আমার রব আমাকে এটার চেয়ে সত্যের কাছাকাছি পথ নির্দেশ করবেন।-(২৫)

মানে হলো আমাদের বলা উচিত হচ্ছে আল্লাহ যদি চান, তা হলে করবো। আর যদি তা বলতে, মানে ইন শা আল্লাহ বলতে ভুলে যাই, তবে যখন স্মরণ হবে তখন যেনো তা বলি।’

তা হলে চলুন, সব সবসময়ই সব কাজে আল্লাহর ইচ্ছের কাছে নিজেকে সঁপে দিই। কোনো কাজ ভবিষ্যতে করার আকাঙ্খা পোষণ করলে ইন শা আল্লাহ বলি....

এবার দেখুন সুরা কাহাফের ২৭ নাম্বার আয়াত। এই আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেন :

"আর হে নবী (স্বলল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনি আপনার রব্বের কিতাবের মধ্য থেকে করা ওহী (হুবহু) পড়ে শুনিয়ে দিন। তাঁর বাক্যসমূহের পরিবর্তনকারার অধিকার কারো নেই। আর আপনি কখনই তাঁকে ছাড়া আশ্রয় পাবেন না।"

সেদিন ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাহেব টকশোতে বললেন ইসলামের কিছু সংশোধন করা দরকার( এমন টাইপের কিছু একটা)। তিনি সেখানে কোনো উগ্রতাসহ না, বরং বিনয় ভদ্রতার সর্বচ্চটুকুন দিয়েই তা বলেছেন। তবে এটা শুধু তিনিই না, হার্ডকোর সফটকোর, সকল নাস্তিক, সমাজতন্ত্রী কমিউনিস্ট ইসলাম বিদ্বেষীরা সবাইই প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এই দাবিটাই করে। হয়তো সকলের ভেতরে এই ভদ্রলোকের মতো নম্রতা নেই।

যেমন অন্ধকার জগতের বাসিন্দা, মানুষের কাছে চরমভাবে প্রত্যাখ্যাত ও ঘৃণিত, নিকৃষ্ট ইসলামদ্রোহী-ইসলাম বিদ্বেষী তাসলিমা নাসরীনও ইসলামের বিধিমালা সংস্কারের দাবিতে সোচ্চার, মুরতাদ মুফতি মাসুদও তার বিভিন্ন লেখায়, লাইভে সেইম দাবিটাই করেছে। এবং করেও।

তদ্রূপ তৎকালীন সময়ের মক্কার মুশরিকরাও রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ওরকমই একটা দাবি নিয়ে এসেছে যে - হে মুহাম্মাদ! তুমি তোমার কিতাবের, তোমার ধর্মের ( মূলত ধর্ম নয়, দ্বীন -পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান) কিছু বিষয় সংশোধন করো, একটু কাটছাঁট করো। কিংবা তাদের কারো কারো মনে ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাহেবদের মতো সংশয়-অবিশ্বাস উঁকিঝুঁকি দিতো, তাই তারাও তার মতো কখনো কখনো মনে করতো যে মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের মতো করে এই কুরআন রচনা করেন ( নাঊযুবিল্লাহ)!

আর সে কারণেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা এই আয়াতের দ্বারা জানিয়ে দিলেন, জবাব দিলেন- নাহ, মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের মতো করে বানিয়ে কোনো কথা বলেন না। এই কিতাবের কোনো একটা শব্দও রচনা করেন না। তোমাদের খুশি করতে এই দ্বীনে, মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনিত কালামে পাকে কোনো কাটছাঁটও চলবে না। সংযোজন-বিয়োজন চলবে না৷ কারো এই এখতিয়ার নেই। এখন মানতে ইচ্ছে হলে মানো না, মন চাইলে রাস্তা মাপো!

এই যে আয়াতে কারিমাহ'টা—এটা আজ হতে সাড়ে চৌদ্দশো বছর আগে নাযিল হলেও মনে হয় যেনো আজকের জন্যে, এখনকার জন্যেও , এখনকার মানুষদের জন্যেই নাযিল হয়েছে। কী এক জীবন্ত কিতাব! তাই না?

সুতরাং কথা হলো যে, আমরা ইচ্ছে হলে আল্লাহর বিধানকে নির্দ্বিধায়-নিঃসংকোচে মানবো, পরিপূর্ণ সমর্পণ করবো—ফিস সিলমি কা-ফফা। যেমন আছে তেমনই। যা আছে তা-ই! নতুবা এর বিধান নিয়ে কোনোরকমের প্রশ্ন উত্থাপনের মতো ধৃষ্টতা দেখাবো না। মানলেই মুক্তি। না মানলে তো সোজা হিসেব—রাস্তা খোলা। পণ্ডিতি দেখানো নিষ্প্রয়োজন! কারণ এই কিতাবের, এই দ্বীনের সকল বিষয়ই অপরিবর্তনীয় হয়ে আছে, থাকবে, সকল কালের জন্যে। সব সময়ের জন্যে। সব যুগের জন্যে!


-||সুরা কাহাফ থেকে শিক্ষা||-০১
~রেদওয়ান রাওয়াহা
১৮.১২.২০

পঠিত : ১৫২১ বার

মন্তব্য: ০