Alapon

সুরা কাহাফ থেকে শিক্ষা-০২



আমি অনেক ভালো কাজ করি। অনেক উত্তম-উন্নত কাজ আঞ্জাম দিয়ে বেড়াই। খারাপের মধ্যে, অসৎ-অত্যের অভ্যন্তরে আমি কখনোই ঢুকি না। কখনোই যাই না। আমার অধিকাংশ কর্মই ভালোর পথে। আমি চেষ্টা করি আলোর দিকে ছুটে যেতে। এগিয়ে যেতে। এরপরও আমার অনেক বেশিই বিপদ। বিপদের ঘনঘটা জীবনের পরতে পরতে আমার।

অমুক লোককে সারাদিন দেখি বদমায়েশি করতে। সারাক্ষণ মাস্তানি করে এলাকায় একটা আতঙ্ক তৈরি করে রাখতে তো তার কোনো জুড়ি নেই। কোন্ অপকর্মটা সে করে না! কোন্ অপরাধটা সে সম্পাদনা করে না! পাপের রাজ্যে তার জীবনটা ভীষণ অন্ধকার হয়ে আছে। সে তার অন্ধকার আশেপাশে সকলের মাঝেই ছড়িয়ে দেয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নাফরমানীমূলক হেন কোনো কাজ নেই যা সে করে না!

তবুও মানুষটা কী ভীষণ ভালো আছে। সুখে আছে। আনন্দের উদ্দীপনায় তার জীবনটা ভরপুর হয়ে আছে।

অথচ আমার কোনো সুখ নেই। বিপদ যেনো তাসবীহ্'র দানার মতো আমার ওপর ঝরছে তো ঝরছেই। বিপদ আমার জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে আছে। আমার সৎকর্মগুলোর কি কোনো মূল্য নেই? আল্লাহ রব্বুল আলামীন কি আমার এবং তাঁর যথাযথ প্রতিদান দেবে না?

ওপরের চিত্রটি আমাদের প্রত্যেকের জীবনেরই এক অবিচ্ছেদ্য বাস্তবতা। আমাদের মনে কোনো না কোনো সময়, কখনো না কখনো উপরিউক্ত প্রশ্নটির উদ্ভব হয়। জিজ্ঞেসাগুলোর উদয় ঘটে!

আজকে তো শুক্রবার। কমবেশি অনেক মানুষই সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করেছেন। করছেন। করতেছি এবং সাথে সাথে অন্যকেও উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছি। তাই না? দেখুন এই সুরা কাহাফের ত্রিশ নাম্বার আয়াতের মাঝেই আল্লাহপাক রব্বুল আলামীন আমাদের উদ্দেশ্য করেই জবাব দিয়েছেন যে—

"নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে আমি তাদের কর্ম ফল নষ্ট করি না। প্রতিদান থেকে বঞ্চিত করি না।"

মানে হচ্ছে, মানুষটি সৎকাজের জন্যে যে শ্রম দিয়েছে, আমি তার সেই শ্রমের ফলাফল নষ্ট করি না। তাকে উত্তমরূপেই তার কাজ সম্পাদনার বিনিময় দান করা হবে।

এই আয়াতটা আমাকে-আমাদেরকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের প্রতিটি কাজেরই বিনিময় দান করবেন। আমরা আল্লাহর বিধান মেনে, তাঁকে ভালোবেসে যে সৎকাজগুলো করেছি, তার পূর্ণ প্রতিফল একদিন অবশ্যই দিবেন। আমরা অবশ্যই আমাদের রব্বের পক্ষ থেকে তাঁর নিয়ামতরাজি পেয়ে ধন্য হবো। নিশ্চয়ই একদিন তিনি প্রতিফল বুঝিয়ে দিবেন । আর মন্দ লোকের মন্দ কর্মের বিপরীত ভালো থাকার উপায়-উপাদান যেনো আমাদেরকে হতাশ না করে, আল্লাহর প্রতি ঈমানের পারদটা অবনমিত করে না দেয়। কারণ, তার জন্যে দুনিয়ার জীবনটাই শেষ। পরজীবনে তার জন্যে সামান্যতম কিছুও বরাদ্দ নেই—শুধুই আজাব ছাড়া!

সুতরাং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা যেহেতু বলেছেন, ওয়াদা করেছেন যে আমাদের বঞ্চিত করবেন না। আমাদের প্রতিটি সৎকাজের বিনিময় দিবেনই। এবং অপরাধীদের অপরাধের বিচারও করবেন তিনি। তাহলে তাঁর কথার বরখেলাফ অবশ্যই তিনি করবেন না। তাঁর চেয়ে বেশি ওয়াদা রক্ষাকারী তো আর কেউই হতে পারে না। তাই না? সুরা তাওবাহ'র একশো এগারো নাম্বার আয়াতেও তো বিষয়টি খুবই সুস্পষ্টভাবে এসেছে। সেখানে একটি অংশে তিনি বলেন যে,

"আর নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহর চেয়ে অধিক শ্রেষ্ঠতর আর কে আছে?"


এখন আমরা আমাদের আশপাশ দেখে, নগদ ফলাফল না পেয়ে মনভাঙবো না। আমাদের যে আমলে স্বলিহ— সৎকর্ম, সেই কর্মের গতিকে শ্লথ করে ফেলবো না। আমরা শুধু আমাদের কাজটা করে যাবো। সত্য-সততার আহ্বান চালিয়ে যাবো। করে যাবো ভালো কাজ। সেই কাজের মধ্য দিয়ে সমাজকে, সমাজের মানুষকে, সর্বোপরী নিজেকে আলোকিত করার কাজটাও।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের কবুল করুন। আয়াতটার শিক্ষা যথাযথভাবে উপলব্ধি করে আমাদের জীবনে যেনো সুচারুরূপে প্রয়োগ করতে পারি, আল্লাহ আমাদের সেই তাওফিক দান করুন। আ-মী-ন!!

আসুন, সাথে সাথে এই ছোট্ট আয়াতটা হিফযও করে ফেলি। এভাবেই এক সময় পুরো সুরাটা-ই হিফয হয়ে যাবে। তখন প্রতি সপ্তাহে না, প্রতিদিনই করতে পারবেন তিলাওয়াত। ইচ্ছে হলেই। পথেঘাটে। হাঁটা-চলায়। শোয়া-বসায়....

#সুরা_কাহাফ_থেকে_শিক্ষা -০২ পর্ব
-রেদওয়ান রাওয়াহা

পঠিত : ২৭১ বার

মন্তব্য: ০