Alapon

আমাদের মিডিয়াগুলোর ভূমিকা যেন গ্রামের ঝগড়াটে মহিলাদের মত!



গত কয়েকদিন থেকে বাংলাদেশের দুটি বিখ্যাত মিডিয়া আমাদের হলুদ সাংবাদিকতা ও হলুদ মিডিয়ার সংজ্ঞা শেখাচ্ছে। সেই মিডিয়া দুটি হল সময় টিভি ও একাত্তর টেলিভিশন। আর এ দুটি মিডিয়াই কিনা বাংলাদেশে হলুদ মিডিয়ার সুতিকাগার বলে সুপরিচিত।

অতি সম্প্রতি বুলিং ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান বুম-এর সমীক্ষানুসারে বাংলাদেশে ফেক নিউজ প্রচারের ক্ষেত্রে প্রথমস্থানে রয়েছে সময় টিভি। অথচ এই সময় টিভি কিনা বলছে আল জাজিরা টেলিভিশন ফেক নিউজের ফ্যাক্টরি। হায় সেলুকাস! এই দিনও দেখা লাগল।

সময় টিভি, একাত্তর টেলিভিশন এবং সরকারপক্ষীয় নিউজ চ্যানেলগুলো হঠাৎ আল জাজিরাকে নিয়ে উঠে পড়ে লাগল কেন, তা নিশ্চয়ই নতুন করে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, এই মিডিয়াগুলো আল জাজিরাকে তুলোধুনো করে যাচ্ছে, কিন্তু আল জাজিরা কী প্রকাশ করেছে সে কথা প্রকাশ করতে পারছে না। আর এটাই হল বাংলাদেশের মিডিয়ার স্বাধীনতার নিদর্শন!

গত রাতে ডয়েচে ভেলে বাংলায় খালেদ মহিউদ্দিনের উপস্থাপনায় টকশো দেখলাম, যেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রথিতযশা সাংবাদিক নাইমুল ইসলাম খান ও তাসনিম আলম। নাইমুল ইসলাম খান সাহেব আল জাজিরার অনুসন্ধানীমূলক রিপোর্ট দেখে বলছে, এগুলোতো আহামরি কিছু নয়। আর এগুলো নাকি তারা আগে থেকেই জানে। ফলে আল জাজিরার ইনভেস্টিগেশন ‘নাথিং নিউ’। নাইমুল ইসলাম খান এমনটাই বললেন। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, যদি এটা আহামরি কিছু নাই হবে তবে এগুলো বাংলাদেশের পত্রিকায় প্রকাশিত হয় না কেন? এমনকি বাংলাদেশি মিডিয়াগুলো সরকারি প্রতিবাদ প্রকাশ করছে, কিন্তু কোন ঘটনার বিপরীতে এই প্রতিবাদ তা প্রকাশ করতে পারছে না।

নাইমুল ইসলাম খানরা নিজেরা কখনো সত্য প্রকাশ করবে না, আবার অন্য কোনো মিডিয়া সত্য প্রকাশ করলে, সেই সত্য মানতেও পারে না। কারণ, নাইমুল ইসলাম খানরা নিজেরাই স্বৈরাচারের তাবেদার। আর স্বৈরাচারের দালালি করতে গিয়ে এখন আল জাজিরাকে সাংবাদিকতার এথিকস শেখাতে আসছে! এর চেয়ে হাস্যকর বিষয় আর কিছু হতে পারে বলে আমার মনে হয় না।

আমি বরাবরই বলি, আমরা জাতি হিসেবে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জাতি। এর প্রমাণ আমাদের সাংবাদিক ও শিক্ষক সমাজ আরও একবার প্রদান করলেন। আল জাজিরার যে রিপোর্টের কারণে খোদ জাতিসংঘ পর্যন্ত নড়েচড়ে উঠেছে এবং ইনভেস্টিগেশন করার কথা বলছে। সেখানে বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজের একাংশ বাংলাদেশে আল জাজিরা টেলিভিশনের সম্প্রচার নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। আর প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ জন্য শিক্ষক আল জাজিরার এই রিপোর্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিবেক, বুদ্ধি, বিবেচনা কতটা স্বল্পমূল্যে বিকিয়ে দিলে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করার দাবি করতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।

আমাদের মিডিয়াগুলোর ভূমিকা গ্রামের ঝগড়াটে মহিলাদের মত। মতের বিরুদ্ধে গেলেই তারা বিপরীত পক্ষের চৌদ্দপুরুষের গোষ্ঠি উদ্ধার করতে ঝাপিয়ে পড়ে। আমাদের মিডিয়াগুলোও আল জাজিরার চৌদ্দে গোষ্ঠি উদ্ধারে ঝাপিয়ে পড়েছে। মনে হচ্ছে, তারা নতুন কোনো মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছে। এবারের মুক্তিযুদ্ধ আল জাজিরার বিরুদ্ধে। উদ্দেশ্য, মাদার অব মাফিয়াকে নিরাপদ করা।

পঠিত : ৪১৭ বার

মন্তব্য: ০