Alapon

জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল এবং কিছু কথা...


পত্রিকা মারফত জানতে পারলাম, সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধে অবদানস্বরূপ রাষ্ট্র খেতাবটি ফিরিয়ে নেওয়া হবে। এই লক্ষ্যে হাইকোর্টে একটি বেঞ্জও গঠন করা হয়েছে।

এই উদ্যোগ দুঃখজনক। কার জন্য দুঃখখজনক? শুধু কি বিএনপির জন্য দুঃখজনক? না এটা গোটা জাতির জন্য দুঃখজনক। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। তাই এই সিদ্ধান্ত গোটা জাতির জন্য দুঃখজনক। আর সরকারকে যারা এই পরামর্শ দিয়েছে, তারা আর যাইহোক সরকারের প্রকৃত শুভাকাঙ্খি নয়। কারণ, এই একটি কাজের জন্য আজকে না হলেও আগামীতে আওয়ামী লীগকে যে দারুণভাবে ভুগতে হবে তা হলফ করে বলতে পারি।

এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের পুরো চিত্রটাই বদলে যাবে। কারণ, মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমান যে ভূমিকা রেখেছেন তা কোনোভাবেই অস্বীকার করার জো নেই। আর যদি অস্বীকার করাই হয়, তাহলে ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমান যে স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেটাকেও অস্বীকার করা হবে। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক নাকি শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক, সেই বিতর্ক পরবর্তিতে কোনো এক সময় করা যাবে। কিন্তু এ কথা তো সত্য, সেদিন কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমানের কণ্ঠেই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ হয়েছিল। আর সেই ঘোষণা শুনেই বাংলার আপামর জনতা স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল।

এই ঘোষণা বাস্তবায়িত হলে, মুক্তিযুদ্ধের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসে পরিবর্তন আনতে হবে। যে ইতিহাস দেশ স্বাধীনের পর থেকেই আমরা জেনে আসছি। সেটা হল, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সেক্টর ছিল ১১ টি। তার মধ্যে অন্যতম সেক্টর ছিল জেড ফোর্স। অর্থাৎ জিয়াউর রহমান যে সেক্টরটি পরিচালনা করেছিলেন, সেই সেক্টরের নাম ছিল জেড ফোর্স। স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস থেকে যদি জিয়াউর রহমানের নাম বাদ দিতে হয়, তবে যুদ্ধের ইতিহাসে পরিবর্তন এনে সেখানে ১১ টি সেক্টরের বদলে ১০ টি সেক্টর লেখা হোক। একইসাথে জেড ফোর্সের যেসব সদস্যকে পরবর্তিতে স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন খেতাব দেওয়া হয়েছে, সেগুলোও প্রত্যাহার করা হোক।

একইসাথে বাংলাদেশ সরকার কতৃক প্রদানকৃত মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেটও পরিবর্তন আনতে হবে। সার্টিফিকেটে যে মুক্তিযোদ্ধা যে সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন, সেই সেক্টরের নাম লেখা আছে। জেড ফোর্সের নামে তৈরি করা সমস্ত সার্টিফিকেট বাতিল বলে ঘোষণা করা হোক। তা না হলে স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে একটি গোলমেলে অবস্থা তৈরি হবে। ফলে পরবর্তি প্রজন্ম এই ভুলভাল ইতিহাস পড়ে ভাবতে হবে, আদৌ এ দেশে কোনো যুদ্ধ হয়েছে কিনা সন্দেহ! তা না হলে স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস এমন গোলমেলে কেন!

আমি সবসময় একটা কথা বলি, আমাদের কপালটা এতোটাই খারাপ যে, কপাল দোষে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আর বাঙালি হল পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট জাতি। যে জাতি নিজের ভালো মন্দের পার্থক্য করতে জানে না। জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল করা হলে আদৌত দেশের জন্ম ইতিহাসটাই প্রশ্নবিদ্ধ হবে, তা বোধ করি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বেহুশ থাকা আওয়ামী লীগ সরকার উপলব্ধি করতে পারছে না। আর তাদের এই উপলব্ধি করতে না পারার দরুন ভুগতে হবে পরবর্তি প্রজন্মকে। কারণ, এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের ইতিহাস নিয়ে নোংরা রাজনীতির উদাহরণ তৈরি করল। যা পরবর্তিতে সরকারের পট পরিবর্তন হলে আওয়ামী লীগকেই ভুগতে হবে।

উন্নত দেশের সরকার আর বাংলাদেশের সরকারের মাঝে পার্থক্য হল, উন্নত বিশ্বের সরকাররা পরবর্তি সরকারকে উদার হওয়ার শিক্ষা দিয়ে যায়। যেমনটা জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙেলো মরকেল রেখে যাচ্ছেন। আর বাংলাদেশের সরকার পরবর্তি সরকারকে শিখিয়ে যায়, কীভাবে দেশের বারোটা বাজানো যায়! যেমন বিএনপি সরকার আওয়ামী লীগকে শিখিয়ে গেছে, কীভাবে বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড চালাতে হয়!

পঠিত : ৩০১ বার

মন্তব্য: ০