Alapon

মুসলমান পরস্পরে একটি দেহের ন্যায়৷

একটি গাছ তার শেকড় ছাড়া বাঁচতে পারে না৷ শেকড় হচ্ছে তার মুল বা গোড়া৷ একটি গাছের শেকড় একটা নয় অনেকটা হয়ে থাকে৷ শাখায় প্রশাখায় শেকড় বিস্তৃত হয়ে থাকে৷ সাধারণত সে গাছকে শক্তি যুগিয়ে থাকে৷ আর এই শক্তি উৎপাদনের ফলেই গাছ বেঁচে থাকে৷ এর কারণেই সে ফল দিতে পারে৷ গাছ ছায়াও দিয়ে থাকে৷ আর এটা তার শেকড় এর শক্তির কারনেই সম্ভব হয়৷

আমরা মুসলিমরা যতই বিরোধ করি না কেন৷ আমরা একটা গাছের মতো৷ গাছের শেকড় যেমন শাখায় প্রশাখায় বিস্তৃত৷ আমরা মুসলমানরাও ঠিক তেমন৷ গাছের শক্তি যেমন তার শেকড় যুগিয়ে থাকে৷ ঠিক মুসলমানের শক্তিও পরস্পরের ঐক্যে৷ যদি ঐক্যবদ্ধ না হতে পারে তবে মৃত গাছের মত কোন কাজে আসবে না৷ তখন ফলও দিবে না আর ছায়াও দিবে না।

আমরা মুসলমান পরস্পরে পরস্পরের দেহের অংশ৷ যেমন দেহের যে প্রান্তে ব্যথা হোক আমরা কষ্ট অনুভব করে থাকি৷ ঠিক তেমনি এক মুসলমান কষ্ট পেলে অপর মুসলমানের কষ্ট পাওয়া উচিৎ৷ কারণ রাসুল সাঃ বলছেন, পারস্পরিক ভালোবাসা, সুসম্পর্ক এবং একে অপরের দয়ামায়া ও স্নেহের ব্যাপারের মুমিনগন একটি দেহের মত৷ দেহের যে অংগেই কষ্ট হোক না তাতে গোটা দেহ জ্বর ও অনিদ্রায় ভুগতে থাকে৷ (বুখারী-৬০১১)(মুসলিম-২৫৮৬)

আজ আমাদের মুসলমানদের মাঝে একে অপরে মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ নেই ভালোবাসা নেই, সুসম্পর্ক মোটেও নেই৷ আছে একে অপরের প্রতি হিংসা, বিদ্বেষ৷ কিন্তু আল্লাহ রব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে বলেন,

মুমিনগণ একে অপরে ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ মীমাংসা করে দাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।(হুজরাত-১০)

আমাদের মধ্যে যদি আমরা আপোষ করতে না পারি৷ মিমাংসা করতে না পারি তবে আমরা কি তাকওয়া অবলম্বন করতে পারলাম?। আমরা কি আল্লাহর অনুগ্রহ প্রাপ্ত হতে পারবো?৷

এজন্য আমাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব তৈরি করতে হবে৷ পরস্পরে ভালোবাসা, সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে৷ কারণ আমরা সবাই একটি দেহের ন্যায়৷ আমরা যদি একে অপরের ব্যাথায় ব্যথিত না হই৷ একে অপরের পাশে না দাড়াই৷ তবে ওই মৃত গাছের ন্যায় আমরা না পারবো কোন ফল দিতে৷ আর না পারবো ছায়া দিতে৷

মুসলিম হিসেবে মুসলিম ভাইয়ের প্রতি আমাদের কর্তব্য রয়েছে। আমাদের সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে৷ হিংসা বিদ্ধেষ থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে৷ আমরাতো পরস্পরে ভাই ভাই৷

আল্লার রাসুল সাঃ বলেন, মুসলমান মুসলমানের ভাই৷ এবং অপর হাদিসে বলেন, ঈমানদারের সাথে একজন ঈমানদারের সম্পর্ক ঠিক তেমন যেমন দেহের সাথে মাথার সম্পর্ক। সে ঈমানদার প্রতিটি দুঃখ কষ্ট অনুভব করে যেমন মাথা দেহের প্রতিটি অংশের ব্যথা অনুভব করে৷ (মুসনাদে আহমাদ-৫/৩৪০)

আমরা মুসলিমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি একে অপরের পাশে দাড়াতে পারি তবেই আল্লাহর আনুগত্য হবে৷ এজন্য আমাদের একজনের উপর অপর জনের দায়িত্ব কর্তব্যের বিষয়ে অবগত হতে হবে৷ আমাদের হিংসা বিদ্ধেষ ভুলে এক হতে হবে৷ কারণ হাত একটি আর তার আঙুল পাঁচটি। কিন্তু যখন মুষ্টিমেয় করা হয় তখন সবই একত্র হয়ে যায়৷ আবার যে কোন আঙুলে আঘাত লাগলে হাত তার ব্যাথা অনুভব করে৷ তাই প্রকৃত মুসলমান হতে হলে মুসলিম বিশ্বকে নিজের দেহের ন্যায় মনে করতে হবে৷

আমাদের মুসলিম হতে হলে অন্য মুসলিম ভাইকে নিজ হাত ও মুখ হতে হেফাজতে রাখতে হবে৷ কারণ রাসুল সাঃ বলেন, প্রকৃত মুসলমান সেই, যার হাত ও মুখ হতে অন্য সকল মুসলমান নিরাপদ থাকে৷ (বুখারী-১০)

মুসলিম একে অপরের ভাই৷ সুতরাং এক মুসলিমের হাত ও মুখ হতে অন্য মুসলিম ভাই যেন নিরাপদ থাকে৷ এবং সেই সাথে অন্য মুসলিম ভাইকে সাহায্য সহযোগীতা করে হিংসা বিদ্ধেষ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে৷ কারণ আমরা একে অপরে মিলে একই দেহের মতো৷

পঠিত : ৪১৯ বার

মন্তব্য: ১

২০২১-০২-২৬ ১৪:৫১

User
তারেক মোস্তফা

চমৎকার লেখেছেন। আজকে জুম'আর খুতবাও এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে চলছিল। উখুওয়াহ ইসলামী জীবনদর্শনের অন্যতম শক্তি।

submit