Alapon

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ফাঁদে বাংলাদেশ...


জাতীয় সংসদে যখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাশ করা হয়, তখন তথ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন টেকনোক্রেট মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার। এই আইন পাশের পর তথ্যমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেছিলেন, ‘আজ এই আইন পাশ হওয়ায় আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। আমি আশা করছি, এটি এমন ভালো একটি আইন, যা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বের বহু দেশ অনুসরণ করবে।’

বিশ্বের অন্য কোনো দেশ এই আইন অনুসরণ করেছে কিনা তা জানা না থাকলেও, এই আইন পাশ হওয়ার পূর্বে রিপোর্টাস উইথআউট বর্ডার-এর মুক্ত সাংবাদিকতার তালিকা অনুসারে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৬ তম, পাশ হওয়ার পর বাংলাদেশের অবস্থান পিছিয়ে ১৫০ তম হয়েছে! তারপরও কিনা আমাদের দেশের মন্ত্রীরা বলেন, এ যাবতকালের ইতিহাসে বাংলাদেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি বাক স্বাধীনতা ভোগ করছে।

সে এমন স্বাধীনতা, মাত্র কয়েকটি পোস্ট শেয়ার দেওয়ার কারণে লেখককে কারাবরণ করতে হয়। কার্টুনিস্ট কিশোর করোনা ভাইরাসের প্যান্ডেমিক সিসুয়েশন নিয়ে সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে বেশ কিছু কার্টুন আঁকে এবং সেগুলো নিজের ফেসবুক একাউন্টে পোস্ট করে। আর সেই পোস্টগুলো শেয়ার দিয়েছিলেন লেখক মুশতাক। ফলাফলস্বরূপ, কার্টুনিস্ট কিশোরকে তো গ্রেফতার করা হয়ই, সাথে লেখক মুশতাককেও গ্রেফতার করা হয়। এটাই হলো বাংলাদেশের বাক স্বাধীনতার স্বরূপ!

লেখক মুশতাককে গ্রেফতার করা হয়েছিল গত বছরের মে মাসে। এর মাঝে তার জামিন চেয়ে আদালতে প্রায় ১০ বার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু মাননীয় আদালত তার সেই আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন। কারণ, তিনি সামান্য কটা ফেসবুক পোস্ট দিয়ে সরকার ও রাষ্ট্রের ভয়ানক ক্ষতি করে ফেলেছেন। তিনি এখন সরকার ও রাষ্ট্রের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক! আর সে কারণে তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল এবং কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে রাখা হয়েছিল।

আর অন্যদিকে আমাদের দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি রন সিকদার ফৌজদারি অপরাধ করে, পারসোনাল বিমানে করে থাইল্যান্ডে পালিয়ে যান। তার বিমান ল্যান্ড করার জন্য আবার পররাষ্ট মন্ত্রনালয় থেকে থাইল্যান্ডের সরকারকে অনুরোধ করা হয়। সেই রন সিকদার বছর খানেক পর নিজের মর্জি মতো দেশে ফিরে আদালতে দাড়িয়ে জামিন চাওয়া মাত্রই তাকে জামিন দিয়ে দেওয়া হল। অবস্থা দেখে মনে হয়েছিল, মাননীয় আদালত যেন কলম আর রন সিকদারের জামিনের ফাইল নিয়েই বসে ছিলেন; যেন রন সিকদার আদালতে উপস্থিত হওয়া মাত্রই তাকে জামিন দিয়ে দেওয়া যায়। না হলে রন সিকদারের আবার কষ্ট হবে। আমাদের আদালতগুলো তো এখনো এসির ব্যবস্থা করা হয়নি। ভ্যাবসা গরম আর অতিরিক্ত মানুষের উপস্থিতির কারণে রন সিকদারের ভীষণ কষ্ট হয়ে যাবে। তাই মাননীয় আদালত রন সিকদারের কষ্ট লাগব করতে কোনো কসুর করেননি।

আর কার্টুনিস্ট কিশোররা তো ভয়ানক আসামী!

বছর খানেক আগে আমাদের তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ সাহেব লন্ডনে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশের সাংবাদিকরা ব্রিটেনের সাংবাদিকদের থেকেও বেশি বাক স্বাধীনতা ভোগ করে।’ হাসান মাহমুদ নিজেও হয়তো জানেন, তিনি কতো বড়ো মিথ্যা কথা বলেছেন। কিন্তু তাদের কাজটাই হলো বলে যাওয়ার। তাই তারা মিথ্যাগুলো গলা উচিয়ে বলে যাচ্ছেন। আর তাদের গলার আওয়াজের নিচে চাপা পড়ে গুমড়ে কাঁদছে মানবতা!

পঠিত : ৫১৬ বার

মন্তব্য: ০