Alapon

আধুনিক সভ্যতার নোংরা রাজনীতির বলি জামাল খাশোগি...



মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, ক্ষমতায় আসলে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকান্ডের গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রকাশ করবেন। যা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ করা থেকে বিরত থেকেছিলেন। অবশেষে জো বাইডেন রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন ঠিকই, কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, সেই রিপোর্টে জামাল খাশোগিকে হত্যার পূর্ণ বিবরণ নেই।

অথচ এর আগে প্রকাশিত গোয়েন্দা রিপোর্টে দেখা গিয়েছিল, তুরস্কে সৌদি আরবের অ্যাম্বাসিতে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যা করে, তার শরীর কেটে টুকরো টুকরো করা হয়। তারপর মাংসপিন্ডগুলো এসিড দিয়ে পুড়ে ফেলা হয়। কিন্তু এসব কোনো কিছুই জো বাইডেন প্রশাসন প্রকাশিত রিপোর্টে নেই। তবে জো বাইডেন প্রশাসন প্রকাশিত রিপোর্টে সৌদি প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ হয়েছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, সৌদি প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানের অনুমোদনে এই হত্যাকান্ড চালানো হয়। কিন্তু সৌদি প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানের হুকুমে এই হত্যাকান্ড চালানো হয়নি।

আসলে অনুমোদন আর হুকুমের মত মৌলিক পার্থক্য কোথায় তা আমার বোধগম্য নয়। উল্লেখ্য, জামাল খাশোগি হত্যাকান্ডে যে সকল সৌদি নাগরিক জড়িত ছিল, তারা প্রত্যেকেই সৌদি প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানের কাছের লোক ছিলেন। এমনকি মুহাম্মদ বিন সালমানের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রধানও এই হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন। গোয়েন্দা রিপোর্টে জানা যায়, এই হত্যাকান্ডে যারা অংশ গ্রহণ করেছিলেন তাদের কাছে কোনো বিকল্প ছিল না। হয় তাদের হত্যাকান্ড চালাতে হবে, নচেৎ চাকরিচ্যুত হতে হবে। কতকক্ষেত্রে তাদের হত্যা করাও হতে পারে। এই চাপটা সরাসরি সৌদি প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানই দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও তিনি এই হত্যাকান্ডের জন্য সরাসরি দ্বায়ি নন!

আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় যে-ই আসুক, সে ডোনাল্ড ট্রাম্পই হোক আর জো বাইডেন হোক, তাদের পররাষ্ট্র নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসে না। সৌদি আরব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বড়ো মিত্র রাষ্ট্র। তাই যুক্তরাষ্ট্র স্বাভাবিকভাবেই এমন প্রভাবশালী মিত্রকে হারাতে চাইবে না। যার প্রমাণ, জো বাইডেন প্রশাসন যেদিন এই গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রকাশ করল, তার ঠিক একদিন আগে জো বাইডেন সৌদি বাদশাহর সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন। তখন জামাল খাশোগির বিষয় নিয়ে তেমন কোনো কথা হয়নি।

যদিও এই হত্যাকান্ডের সাথে সৌদি প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান জড়িত, কিন্তু তারপরও তার ব্যাপারে জো বাইডেন কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে না। বিন সালমান এই হত্যাকান্ডকে অনুমোদন করার পরও কোনো শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন না, কিন্তু সৌদি আরবের ৭৬ জন রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রদান করা হবে না- এটাই শাস্তি।

মূলত গেমটা এখানেই। মুহাম্মদ বিন সালমানকে এই শাস্তি না দেওয়াটাই জো বাইডেনের জন্য ট্রাম কার্ড হিসেবে থাকবে। এই ট্রাম কার্ড ব্যবহার করে জো বাইডেন মুহাম্মদ বিন সালমানের থেকে অতিরিক্ত সুবিধা আদায় করে নেওয়ার চেষ্টা করবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর মুহাম্মদ বিন সালমান সেই প্রস্তাবে সাড়া না দিলেই জামাল খাশোগি হত্যার সুতো ধরে টান দিবেন। এটাই বাস্তবতা।

দুনিয়া চলে ব্যবসার উপর! সেখানে কোনো মোরালিটি নেই। যে বাইডেন এতোদনি জামাল খাশোগির হত্যার বিচার চাইলেন, সেই বাইডেন এখন জামাল খাশোগির রক্তের উপর দাড়িয়ে সৌদি আরব থেকে সুবিধা আদায় করে নিবেন। এটাই আধুনিক সভ্যতার নোংরা রাজনৈতক খেলা।

পঠিত : ২৮২ বার

মন্তব্য: ০