Alapon

ইনবক্সের কথাগুলোরও হেফাজত করুন এটাও একটা আমানত।


কেউ একজন একটা ম্যসেজ করেছে, কেউ একটা ইমেইল করেছে, ইনবক্সে এসে একটা সংবাদ বা তথ্য দিয়েছে। এই যে ইনবক্সে বলাটা, ইমেইল করাটা -এটা হয়তো খুবই নরমাল একটা বিষয়। এতোটা জটিল নয়। বলার সময় আপনার কাছে হয়তো বলেও দেয় নি যে এই বিষয়টা কারো সাথে শেয়ার করবেন না, হালকাভাবেই বলেছেন। তবুও আমার উচিত হবে না তার অনুমতি ছাড়া বিষয়টা কারো সাথে শেয়ার করা। কারো সাথে বলা। বুঝতে হবে আমি মানুষ হিসেবে অন্য আরেকজনের আরেকটা কথা এবং তথ্যও আপনার-আমার কাছে আমানত। হয়তো যা আপনার কাছে তিনি বলেছেন , সেই কথাটা অন্য কারো সাথেই তিনি আর বলেন নি। এখন আপনি এই কথাটা আরেকটা জায়গায় বা আরেকজনের সাথে প্রকাশ করার সাথে সাথে লোকটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যাবে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হয়তো তার জন্য একটু কঠিন হয়ে যাবে। আমাদের উচিত নয় কাউকে কোনো অনভিপ্রেত পরিস্থিতির সামনে ঠেলে দেয়া। এই জন্যে মনে রাখা উচিত ইনবক্সে বলা কথাটাও একপ্রকার আমানত ! সে আমানতের খেয়ানত করাটা কাম্য নয়। মহানবী সা: বলেছেন, ‘যার মধ্যে আমানতদারী নেই তার ঈমান নেই, আর যে অঙ্গীকার রক্ষা করে না, তার দ্বীন নেই’ (অসুনানে বায়হাকি, শুয়াবুল ঈমান, মিশকাত, পৃষ্ঠা ১৫)।

এই যে বোধটা, অনুভূতিটা, এটার বিষয় আমি নিজেও সচেতন ছিলাম না ওরকম। কালকে হঠাৎ করেই বোধের দরোজাটা খুলে গেলো। যে কোনো এক কারণে।

এখন একটা উদাহরণ দিই। মনে করুন অনলাইনের একজন মোটামুটি পরিচিত লেখক। তিনি একটা গ্রুপ খুলেছেন। ম্যসেঞ্জারে। ১০ /১২ জনকে নিয়ে। আপনাকেও রেখেছেন সেখানে। উদ্দেশ্য যাই হোক -এখন আপনি অন্য আরো অনেকের কাছে এই যে বিষয়টা , তা খুশিতে গদগদকণ্ঠ নিয়ে বললেন যে, " অমুক ভাই একটা গ্রুপ খুলেছেন। আমাকেও সেখানে এড করেছেন '। দেখুন এখানে আপনি খুবই স্বাভাবিকভাবে বিষয়টা বলেছেন। আপনি আনন্দিত হয়েই বলেছেন, কারণ ওনার মতো একজন সেলিব্রিটি টাইপের মানুষ আপনাকে তার নিজের একান্ত একটা গ্রুপে জায়গা করে দিয়েছেন। কিন্তু এই উচ্ছ্বাস যখনই বাহিরে প্রকাশ করেছেন , তখনই অন্যান্যরা কেন, কী উদ্দেশ্যে, কী জন্যে গ্রুপ খুলেছেন , ওমুককে কেনো রেখেছেন , তমুককে কেনো রাখলেন না? ইত্যাদি প্রশ্নের পর প্রশ্ন সৃষ্টি করবে। এবং করছেও। বিষয়টা দেখুন ওনার জন্যে কতোটা বিরক্তিকর ঠেকবে তখন, বুঝতে পারছেন ?

এবার একটা বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা বলি। একজন সুপরিচিত সুলেখক। তিনি হুবহু ওপরের উদাহরণের মতো করেই একটি কাজ করেছেন। মানে একটা ম্যসেঞ্জার গ্রুপ খুলেছেন। এবং তাঁর কিছু প্রিয় মানুষকে এড করেছেন। উদ্দেশ্য , সদ্য ওনার একটা বই প্রকাশিত হয়েছে। সেই সদ্য প্রকাশিত বইটা নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে বইটা গিপ্ট দেয়া। সেজন্যে একসাথেই যেনো সকলের তথ্যটা নিতে পারে। তাই গ্রুপ খোলা। এখন এ-রকম একজন ভাই বিষয়টা হাস্যরসের সাথে গদগদ কণ্ঠে বলে দিলেন কিছু মানুষের কাছে যে, অমুক ভাই একটা গ্রুপ খুলেছেন। আমাদেরকে তিনি বইটা প্রকাশিত হলে হাদিয়া দিবেন বলেছেন । আর তখনই ওনার কাছে ম্যসেজের পর ম্যসেজ আসতে লাগলো যে -ভাই আমাদের গিপ্ট কই, আমার বই কই, আমাকে দিবেন না? ইত্যাদি নানান প্রশ্ন। কিন্তু দেখুন, একজন লেখক বই লেখার পরে প্রকাশনা থেকে সৌজন্য কপি পায় ১০-২০/২৫ টা। এখন এতো এতো মানুষের জন্য তিনি কি হাদিয়া বা গিপ্ট পাঠাতে পারবেন ? যতোটা ম্যসেজ ওনার কাছে এসেছে ? সম্ভব? এবং ওনার আরো যে হিতাকাঙ্ক্ষী আছে, এতে কি তাদের মন হালকা হলেও খারাপ লাগে নি এই জন্যে ? মনে প্রশ্ন জাগে নি যে, ভাই আমাকে হাদিয়া দেয়ার লিস্টে রাখে নি। গ্রুপেও রাখে নি!! এইজন্যই আমানতের গুরুত্ব এতোখানি। তাই ইনবক্সের কথাগুলোরও হেফাজত করুন। এটাও তো একটা আমানত।

আচ্ছা এখন যাই হোক, এই যে আমানতের খেয়ানত, এই আমানতের খেয়ানতের দোহাই দিয়ে আপনি এখন মানুষের ইনবক্সে গিয়ে যা-তা বলতে পারেন না। এটা ঠিক না। সেটা আরেক প্রকারের খেয়ানত।

মনে রাখতে হবে-কোনটা পাবলিক প্লেসে বলা যাবে কোনটা যাবে না, তা আমাদেরই বুঝে নিতে হবে। নিজেকেই বিবেকবান হতে হবে। হতে হবে সচেতন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের সুমতি দান করুন। আ-মী-ন !!

~রেদওয়ান রাওয়াহা

পঠিত : ৪৪০ বার

মন্তব্য: ০