Alapon

নারীবাদ ও নারী অধিকারের মধ্যে পার্থক্য...



সাম্প্রতিক সময়ে ‘নারীবাদ’ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক দেখা যাচ্ছে। বিতর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, কতকক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে নারীবাদের প্রধান শত্রু ইসলাম। আবার নারীবাদের ঢালও ইসলাম। নারীবাদিরা একদিকে বলছে, জগতের যাবতীয় নিয়মকানুন সব পুরুষতান্ত্রিক। এমনকি কুরআনের যে অনুবাদ করা হয়েছে, সেখানেও পুরুষতান্ত্রিকতার ছাপ পাওয়া যাচ্ছে। অনুবাদকৃত শব্দ নিয়েও ঢের আপত্তি জানাচ্ছে। অন্যদিকে বলছে, ইসলাম নারীদের শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সেবা করতে বলেনি। ফলে দেখা যাচ্ছে, যখন প্রয়োজন হচ্ছে তখন ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার নিজের মতামত প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামকেও দোষারোপ করা হচ্ছে।

আমি তাত্বিক আলোচনায় যাবো না। আমি শুধু বাস্তবতার নিরিখে কিছু কথা বলব।

বাংলাদেশে নারীবাদ ও নারী অধিকার দুটি বিষয়কেই এক করে দেখা হয়। যা সম্পূর্ণ অন্যায়। যেমন, নারীর মসজিদে নামাজ পড়ার অধিকার ইসলামই দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সামাজিক ব্যবস্থায় নারীদের মসজিদে নামাজ পড়ার সুযোগ রাখা হয়নি। মসজিদগুলোতে নারীদের নামাজ পড়ার তেমন ব্যবস্থা নেই। এমনকি নারীদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা রাখার প্রয়োজনও অনুভব করা হয় না। এখন নারীরা যদি বলে, আমাদের জন্য মসজিদে নামাজের ব্যবস্থা রাখতে হবে, তাহলে সেটা অবশ্যই নারীর অধিকার। কিন্তু এই দাবিকে যদি নারীবাদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তাহলে সেটা অন্যায় এবং জুলুমের শামিল। কারণ, যে অধিকার ইসলাম নারীদের দিয়েছে, সেই অধিকারের দাবি করা নারীদের জন্য হক। ফলে এটি নারীবাদ নয়। কিন্তু আমাদের সমাজের অধিকাংশ পুরুষ নারীদের মসজিদে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রাখার দাবিকে নারীবাদ হিসেবে মূল্যায়ন করছে।

অন্যদিকে, নারীরা বলছে- ইসলাম আমাদের শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করতে বলেনি। ফলে, আমরা শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করতে পারবো না। আর এটাই নাকি তাদের অধিকার। নারীরা যেটাকে অধিকার বলছে, মূলত সেটাই নারীবাদ।

বাস্তবিক অর্থে নারীবাদের যে প্রভাব বা ফলাফল তার ‍ভুক্তভোগি হবে নারীরাই। নারীবাদের কারণে আমাদের পারিবারিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। ঠিক যেমনটা ইউরোপে পারিবারিক ব্যবস্থা বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই, ঠিক তেমন। যার কারণে পরিবার মানেই তখন শুধুই স্বামী আর স্ত্রী। তো স্ত্রী তো একসময় মা হবে, মা থেকে শ্বাশুড়ি হবে। যখন সে শ্বাশুড়ি হবে, তখন পরিবারে তার কোনো অবস্থান থাকবে না। আর পিতা শ্বশুর হওয়ার পরও তার অবস্থান থাকবে কারণ, সম্পত্তি! পুরুষ যাবতীয় সহায়-সম্পত্তির মালিক হয়। এ কারণে পরিবারে তার কিছুটা হলেও অংশগ্রহণ থাকবে। অন্যদিকে নারীর যেহেতু সহায়-সম্পত্তির মালিক হওয়ার সুযোগ কম, তাই পরিবারে তার কোনো অংশগ্রহণ থাকবে না। এমতাবস্থায় নারীদের অবস্থান হবে, বৃদ্ধাশ্রমে।

আর এই প্রথা শুরু হলে পারিবারিক ব্যবস্থা বলতে আর কোনো কিছুই অবশিষ্ঠ থাকবে না। যার দরুন সামাজিক বিশৃঙ্থলা বৃদ্ধি পাবে এবং মূল্যবোধের অবক্ষয় ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। ফলে, নারী নির্যাতনের হারও আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাবে। মোদ্দাকথা দেখা যাচ্ছে, নারীবাদের আলটিমেটলি কোনো সুফল নেই। আর নারীবাদ মূলত নারীদের জন্যই কাল হয়ে দাড়াবে।

তবে এ কথা ঠিক যে, আমাদের সমাজে নারীদের উপর পারিবারিকভাবে নির্যাতন করা হয়। বিভিন্ন উপায়ে নির্যাতন করা হয়। নারীকে প্রাপ্য অধিকার বুঝিয়ে না দেওয়াটাও নির্যাতন। তাই আমাদের অবশ্যই নারীবাদ ও নারী অধিকারের মধ্যে পার্থক্য জানতে হবে এবং নারীদের প্রাপ্য অধিকার বুঝিয়ে দিতে হবে। তা না হলে আমাদের পারিবারিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে যাবে। যার ভুক্তভোগি আপনি, আমি এবং আমরা সকলেই হবো।

পঠিত : ৩৪৬ বার

মন্তব্য: ০